বসন্তের ছোঁয়ায় আড়মোড়া ভেঙেছে প্রকৃতি। মহাসমারোহে নগরজুড়ে চলছে বসন্তবরণ। বসন্ত বন্দনায় মেতেছে কংক্রিটের নগরও। শহুরে ব্যস্ততায় থেমে নেই উৎসবের আমেজ।
Advertisement
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে বসন্ত উৎসব। এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলা।
বরেণ্য যন্ত্রশিল্পী সেতারবাদক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেতারে রাগ বসন্ত মুখারী বাদনের মধ্যদিয়ে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে শুরু হয় বসন্ত উৎসব-১৪৩০। ‘জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
উৎসব ঘিরে সকাল থেকেই বকুলতলায় তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের ভিড়। সবাই মেতেছে বসন্ত আমেজে। ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’ গানে বসন্ত বরণে মেতে ওঠে সবাই। এরপর শুরু হয় বসন্তকথন পর্ব, প্রীতি বন্ধনী বিনিময়, আবির বিনিময়।
Advertisement
সকাল ১০টায় ‘বসন্ত-আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হয়। চারুকলা থেকে শুরু হয়ে হয়ে টিএসসি ঘুরে আবারও চারুকলায় ফিরে আসে শোভাযাত্রাটি। বসন্তকথন পর্বে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দিন আহমদ। বক্তব্য দেন সহসভাপতি কাজল দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরীসহ অন্যরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার। এখন পুরোদস্তুর সংসারী। দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছেন বকুলতলায় বসন্ত বরণ উৎসবে। নিজে পরেছেন বাসন্তী রঙের শাড়ি। দুই ছেলেকেও বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবিতে সাজিয়ে নিয়ে এসেছেন।
জানতে চাইলে ফারজানা জাগো নিউজকে বলেন, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখের দিনগুলোর জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকতাম। আগের রাতে সেভাবে ঘুম হতো না। কোন রঙের শাড়িটা পরবো, কীভাবে সাজবো এ নিয়ে কতশত ব্যস্ততা।
তিনি বলেন, ‘বেশ ভালো লাগছে। তবে চেনামুখ নেই বললেই। সবাই অপরিচিতি। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ছি। বন্ধু-বান্ধবীদের মুখ চোখে ভাসছে। যাইহোক, দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। ওরা মজা করছে। ওদের বাবা চাকরিজীবী। ছুটি পাননি। বিকেলে অফিস শেষে এদিকে আসবেন।’
Advertisement
বকুলতলায় আড্ডায় মেতেছেন তেজগাঁও মহিলা কলেজের কয়েকজন ছাত্রী। তারা সবাই একসঙ্গে এসেছেন। লামিয়া বর্ষা নামে তাদের একজন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভোরে এসেছি। রাস্তা ফাঁকা ছিল। দ্রুত চলে আসতে পেরেছি। সারাদিনের প্ল্যান করে বেরিয়েছি। ক্যাম্পাস ও এর আশপাশেই ঘুরবো। বিকেলে আমরা বইমেলায় ঢুকবো।’
এদিকে, দুপুরে কিছুটা বিরতি দিয়ে বকুলতলায় বিকেলের পর্ব শুরু হবে সাড়ে ৩টায়। বেঙ্গল পরম্পরার যন্ত্রসংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে বিকেলের পর্বে মেতে উঠবে উৎসবপ্রেমীরা। এ পর্বে শিশু-কিশোর ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবেশনা, দলীয় সংগীত, আবৃত্তির পাশাপাশি আছে বরেণ্য শিল্পীদের একক পরিবেশনাও।
শুধু চারুকলার বকুলতলা, টিএসসি নয়, রমনা পার্ক, হাতিরঝিলসহ নগরীর বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রেও বাসন্তী সাজে তরুণ-তরুণীদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ছে। পাঁচ তারকা হোটেল, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রেস্তোরাঁয়ও বসন্ত-ভালোবাসা দিবস ঘিরে নানা আয়োজন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রতি বছরের মতো এবারও বিকেল সাড়ে ৩টায় একযোগে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক ও উত্তরা দিয়াবাড়ির লেকসংলগ্ন মাঠে বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে রয়েছে ‘বসন্ত উৎসব ১৪৩০’-এর অনুষ্ঠানমালা।
এএএইচ/এসএনআর/এএসএম