এক.তুমি যেও না
Advertisement
যেও না, বারণ করছি; যেও নাস্থির জানি, গেলেই তুমি হারিয়ে যাবে।
তোমার নিয়তি হতে পারে না নিরুদ্দেশযাত্রাতুমি সাগরের ক্ষুব্ধ তরঙ্গে আছড়ে পড়া ঢেউতুমি মিছিলে মিছিলে বজ্রমুষ্টির স্মারকতোমাকে এভাবে প্রস্থান মানায় না, কখনও নাতুমি কালের যোগ্য উত্তরাধিকার।
লোডশেডিংয়ে অসহায় ল্যাম্পপোস্টের মাথা ছুঁইয়েঅন্ধকার তাড়িয়ে তুমিই দেখাও আলোআমাদের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানুকতাদের সরবরাহ বিদ্যুৎ না পেলেও আমরা আলোহীন নইবহুমাত্রিক বিশ্লেষণে ও বহুরৈখিক বিবেচনায়তোমাকে প্রয়োজন, খুব প্রয়োজন।
Advertisement
রাষ্ট্র-সমাজ শব্দ দুটি উচ্চারণমাত্র তুমি আরও বেশি অপরিহার্য হয়ে ওঠোমনে পড়ে বিদ্রোহ-বিপ্লবের স্বপ্নধ্যানেতোমাকে স্তবের মতো উচ্চারণ করিযেও না, বারণ করছি; যেও নাস্থির জানি, তুমি গেলেই অঙ্গীকারগুলো হারিয়ে যাবে।
তুমি প্রাত্যহিক জীবনের খুব জরুরি অনুষঙ্গতুমি তাবৎ নির্মাণের রূপকার, অনিন্দ্যসুন্দরতুমি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের অববাহিকায় চরিত্রায়ণএত ক্লেদের মাঝেও তুমি দহনবেলার উচ্চারণতুমি হৃদয়ের গভীরে অন্তর্গত বোধ ও সৌন্দর্যতুমি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ও নিঃসংশয়পর্যবেক্ষণ তীক্ষ্ণ, সূক্ষ্ম, তোমার প্রকাশ অনবদ্য।
যেও না, বারণ করছি; যেও নাতুমি চলে গেলে রূপগত পরিচর্যার পরিচয়মিশে যাবে ধুলোয়।
দুই.জয়শ্রীর ক্ষয়
Advertisement
জয়শ্রীর মাথাভর্তি ঘন চুলের সৌন্দর্যের কাছেঅরণ্যের গভীরতার সৌন্দর্যও হার মেনেছিল।
জয়শ্রী না বলা বেদনায় ফোটাতে চেয়েছিল ফুলকিন্তু বালিকা থেকে নারী হয়ে উঠতে গিয়ে ক্রমেই ভাঙছিল তার ভুল।
জয়শ্রী মানুষ হওয়ার পণ করেছিলকিন্তু দুঃসময় তার স্বপ্নে হুল ফোটাতে শুরু করল।
জয়শ্রী মুক্তাঙ্গনে দাঁড়িয়ে প্রত্যয়গুলো ওড়াতে চেয়েছিলকিন্তু বৈরী বাতাস ঝড় হয়ে সব তছনছ করে দিল।
জয়শ্রী ভালোবাসার আঙুল ছুঁয়ে ব্রহ্মাণ্ড জয় করতে চেয়েছিলকিন্তু ইচ্ছার কপাটগুলো ঠাস ঠাস করে বন্ধ হয়ে গেল।
জয়শ্রী বহ্নিতাপে মুছে দিতে চেয়েছিল শঙ্কার চিহ্নগুলো কিন্তু হায়, নারী হয়ে ওঠাই যে তার কাল হয়ে দাঁড়াল!
তিন.কষ্টের নিবিড় চাষবাস
সময়ের পাঁজরের ভাঁজে ভাঁজে যখনই চোখ আটকে যায়কষ্টের সঙ্গে কষ্টগুলো কাতারে কাতারে দেখি শুয়ে আছেযেন এক একখানি অন্তহীন খরায় দগ্ধ অঞ্চল!
মানুষ এত কষ্ট বয়ে বেড়ায় কী করে!কষ্ট কি কখনও হয়ে ওঠে না বিদ্রোহী?পরিতাপের বর্ণমালা ছড়িয়ে যায় না জমিনজুড়ে?এমন প্রশ্নে বহুবার তিরবিদ্ধ হয়ে এও দেখেছিসময়ের তরঙ্গায়িত বুকে দীর্ঘশ্বাসের ঢেউয়ে ঢেউয়েওদের কি উথালপাথাল দাপাদাপিঅসংখ্য কষ্ট একসঙ্গে কেঁদে ওঠেঅথচ কি বিস্ময়, তবু জীবনের চোখের পাতা গলেচিবুক বেয়ে জল পড়ে না অনেকেরই!
কোনো কোনো মানুষ কীভাবে নিজের ভেতর নিজেই শেষনিঃশ্বাস ছাড়েকেউ দেখে না, জীবন্মৃতের ভেতর প্রাণের আর্তনাদমর্মস্পর্শী, খুব মর্মস্পর্শী কষ্টগুলো কীভাবে হয় ব্যথিত ব্যাকুলতবে এও তো জানি, সব বেদনার ছায়া দৃশ্যমান নয় ।
কারও কারও অপার অবধি কষ্টের ভেতর আনন্দ অনর্গল কথা বলেহিসাব মেলানো ভার, কতজন কষ্টে দগ্ধ হয়ে বেঁচে থাকেনিজেকে নিঃশেষ করে অন্যকে অশেষ করতেকারও কারও অজন্তামূর্তি যেন কষ্ট-শিল্পের গাঢ় সৃজনের সম্ভাষণকষ্টগুলো ফসল ফলায় অনেকের বুকের উর্বর জমিনে।
কি সুন্দর অন্ধ কষ্টগুলো দুঃসময়ের সঙ্গেহেঁটে চলে ভূদৃশ্যের বর্ণনা হয়েওই পথের দিকে তাকিয়ে ফিরে ফিরে অন্ধ হয়ে যাইমানুষের হৃদয়ে শ্রেষ্ঠ আশ্রয়ে হাতড়াই, শুধুই হাতড়াইএও তো জানি, কষ্টও কখনও কখনওকীভাবে সোনার পাথরবাটি হয়ে যায়।
এইচআর/এএসএম