ফিচার

বেতার দিবসে কেমন আছেন কথাবন্ধুরা

আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব বেতার দিবস’। আধুনিক পৃথিবীর দূরত্বের দৌরাত্ম্য কমাতে বেতারই ছিল প্রধান ও জনপ্রিয় মাধ্যম। ইথার তরঙ্গে তথ্য ও বিনোদনের মাধ্যমে শ্রোতামনের তৃষ্ণা মেটাতে বেতার উপস্থাপকদের জনপ্রিয়তার আবহ অতীত থেকেই চলমান। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে- ‘শতাব্দীজুড়ে তথ্য, বিনোদন ও শিক্ষা বিস্তারে বেতার।’ দেশের বেতারের ইতিহাসে বেসরকারি রেডিওগুলোর যাত্রা শুরুর পর থেকে ‘কথাবন্ধু’ পরিচয়ে শব্দসৈনিকদের জনপ্রিয়তা অতীতকে ছাড়িয়ে যায়। চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সুবিধা ও ভিডিও কন্টেন্টের যুগে ধসে পড়া বেতার জগতে বর্তমান কথাবন্ধুদের অবস্থান ও সংগত বিষয়ে প্রকাশ করা অভিব্যক্তির সংকলন করেছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, কথা বলেছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় তিন কথাবন্ধুর সঙ্গে—

Advertisement

নাগরিক কোলাহলের শহরে মানুষ বেতারমুখী হোক: আরজে লগ্ন

একান্ত শ্রোতার অভাবে শব্দ-বমি পেলে কষ্ট হতো। মাথায় পাকানো ভুতুড়ে শব্দমালাকে শহরের গলি-ঘুঁপচিতে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা থেকেই বেতারে কাজ শুরু করলাম। সে বছর ছয়েক আগের কথা। দেশের বেসরকারি বেতারগুলো তখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। পথেঘাটে, ঘরে-বাইরে সবাই রেডিও শোনে। বিনোদনের অন্যান্য মাধ্যমগুলো সহজলভ্য না থাকায় কথাবন্ধু হিসেবে নিজের উপর ছিল অগাধ দায়িত্ব। কিছুটা বুঝে উঠতেই কাঁধে চাপল গল্প, কৌতুকের পাশাপাশি সঠিক তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব। উপভোগ করলাম, পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডারের বিস্ময়কর অজানাকে নিজে জেনে শ্রোতাদের কর্ণকুহরে পাঠানোর কাজটা উপভোগ্যই মনে হলো। প্রথম দুটো বছর বেশ ভালোই চললো।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, লকডাউনের পর থেকেই ছন্দ-পতনে পড়লাম। মানুষ মুঠোফোনের রেডিও রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর ইউটিউবের পথ ধরল। খেই হারানো পথে গা ভাসানো আত্মরক্ষায় শেষ তিনটা বছর কথা বলছি। অযাচিত দায় নিয়েই কথা বলছি। আগের মতো না হলেও ছোট সংখ্যার একান্ত কিছু শ্রোতাদের জন্যে কথা বলছি, আপেক্ষিক পছন্দের মানদণ্ডে খুঁজে নিচ্ছি আত্মতৃপ্তি। এর ফাঁকে গভীর আশাবাদী হয়ে সুদিনের প্রত্যাশা করছি। নাগরিক কোলাহলের শহরে মানুষ আবারও রেডিও বা বেতারমুখী হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন•পরিত্যক্ত সুইমিং পুলে রঙের ছটা 

মধ্যরাতের ভবঘুরে হয়ে কথা বলি: আরজে সালমান

অন্যান্য পরিচয়ের মাঝে কথাবন্ধু সালমান আমার নতুন পরিচয়। কবিতায় গল্প বলে পাঠকদের ভালোলাগায় থাকার বিষয়টা অনেক আনন্দের। আর কথাবন্ধু সালমান পরিচয় সেই আনন্দে আলাদা একটা মাত্রা যোগ করেছে। জীবনের কথাগুলো সহজে পৌঁছে যাচ্ছে পাঠক-শ্রোতাদের কাছে।

জীবনের নানান অধ্যায়ে থাকে নানান গল্প। দিনশেষে রাতের কার্নিশে বসে আমরা সেইসব গল্পের শেষ অধ্যায় মিলাতে থাকি। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মিলাতে গিয়ে তৈরি হয় নানা স্মৃতি নানা স্বপ্ন নানা কল্পনা। তৈরি হয় ভালোবাসা, নতুন করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। কিছু খাতায় গল্প মেলে, কিছু পাতায় লেখা হয় কবিতা। সেইসব গল্প শোনা ও শোনানোর জন্য প্রতি শনি থেকে বৃহস্পতি রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এই শহরে নির্ঘুম জেগে থাকে এক মধ্যরাতের ভবঘুরের মতো কথা বলি।

Advertisement

এ কথাগুলোর মাধ্যমেই আমার পথচলা। এখনো কথা বলছি। সবাই ভালোবাসছে। তরুণরা অনেক বেশিই পছন্দ করছে। ক'জন শুনছে তার থেকে ক'জন ভালোবেসে যাচ্ছে এটাকেই বড় করে দেখছি। বেতার দিবসে সব শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা। যাপিত জীবনের নানান দুঃখবোধ, হাসি-আনন্দ, বিষণ্ণতা আর বিষাদের গল্পগুলো সবার কাছে ছড়ানোর জন্য হলেও রেডিও বেঁচে থাক।

মাইক্রোফোনের গল্প যেন ফিকে হতে থাকা স্বপ্নের মতোই সুন্দর: আরজে আশিক

একসময় মনে হতো, রেডিওর হট সিটে বসে মাইক্রোফোনে কথাই বলাই আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। অন এয়ারের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতাও তাই এখনো স্বপ্নের মতই সুন্দর। কিন্তু সে স্বপ্ন আর তীব্র ইচ্ছে ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করে। বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় স্টেশন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান শিল্পীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারেন না। মেধা মননের উপযুক্ত বিনিময় না পাওয়ায় মনও আর বসছে না এ কাজে। আধুনিকায়নের মোড়কে বেতারের সঙ্গে সম্পর্ক ঘুচিয়ে দিচ্ছে কোম্পানিগুলো, অথচ বেতারই সবচেয়ে সহজ এবং ঝামেলাহীন মাধ্যম। ভক্ত শ্রোতাদের বেশিরভাগই এখন শুধু শুনতে নয়, দেখতেও আগ্রহী। কিন্তু আমরা যে সময় রেডিওকে শুনতাম আর কল্পনায় কথাবন্ধুদের ছবি আঁকতাম, সে যুগের অবসান কি সত্যিই হলো অবশেষে! তবে আমার ধারণা, যে মাইক্রোফোনের বিপরীতে শ্রোতারা বুদ হয়ে শুনতো আর জীবনবোধ উপলব্ধি করতো তার শেষ কখনই নয়।

আরও পড়ুন•মরিচ মাখিয়ে ভাজা বরফ খাওয়া জনপ্রিয় যেখানে 

সিদ্ধ ডিম বেচে হয়েছেন স্বাবলম্বী, করেছেন বাড়ি 

কেএসকে/জিকেএস