প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবং নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিলো গত ৩১ ডিসেম্বর। এরপরও তারা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। বিসিবি থেকে বলা হয়েছিলো দায়িত্ব চালিয়ে যেতে। জানুয়ারি শেষ হয়ে ফেব্রুয়ারিরও প্রায় অর্ধেক শেষ হতে চললো। গুঞ্জন ছিল, অন্তত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত নির্বাচক পদে তারা থাকতে পারেন।
Advertisement
তবুও, নির্বাচক প্যানেলে যদি পরিবর্তন আসেই, তাহলে কে হতে পারেন প্রধান নির্বাচক, তা নিয়ে কিছুটা গুঞ্জন ছিল। আলোচনায় দু’একজনের নামও শোনা যাচ্ছিলো; কিন্তু সোমবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় যে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, তা রীতিমত বিস্ময় জাগানিয়া। অনেকেই চমকে গেছেন প্রধান নির্বাচকের নাম শুনে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু এর আগে বিসিবিতে অনেক বড় বড় দায়িত্ব সামলেছেন। বিসিবি পরিচালক হিসেবে টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বও সামলেছেন। সে জায়গায় গাজী আশরাফ লিপুকে প্রধান নির্বাচক করা হবে, এটা স্বপ্নেও কেউ চিন্তায় আনেনি।
কিন্তু বিসিবির বোর্ড সভা শেষে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যখন নাম ঘোষণা করলেন, তখন বিস্ময়ের সীমা ছাড়িয়ে যায়। পরে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট নানা মহলে জাগো নিউজের কথা হয়েছে। তাতে বোঝা গেছে, বিষয়টা অনেকেই জানতেন না। যে কারণে ঘোষণাটা প্রায় সবার কাছে চমকপ্রদ হিসেবেই ঠেকেছে।
Advertisement
বিপিএলে দুর্দান্ত ঢাকার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিসিবির অন্যতম পরিচালক এবং ক্রিকেট অপরাশেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি বিপিএল উপলক্ষে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। যে কারণে সোমবারের গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড মিটিংয়ে হাজির ছিলেন না। বোর্ড সভা শেষে তিনিও শুনলেন প্রধান নির্বাচক হিসেবে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বিষয়টা তার কাছে চমকপ্রদ এবং সারপ্রাইজিং ছিল বলে মন্তব্য করেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। আজ (মঙ্গলবার) সকালে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে দুর্দান্ত ঢাকার অনুশীলন শুরুর আগে মিডিয়ার মুখোমুখি হন তিনি। সেখানেই সুজনের কাছে প্রধান নির্বাচকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
তখন খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘লিপু ভাইয়ের অনেক ক্রিকেট মেধা। আমাদের অনেক সিনিয়র। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেকদিন ধরে দেখছেন। জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন, আবাহনীর অধিনায়ক ছিলেন। উনাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। উনি আসাতে ভালো হতে পারে। নির্বাচক হতে পারেন বা এমন কিছু আমি আগে শুনিনি। খুবই চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত এসেছে বিসিবি থেকে। ’
গাজী আশরাফ লিপু সাবেক অধিনায়ক হতে পারেন, ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক থাকতে পারেন; কিন্তু অনেক দিন তো তিনি ক্রিকেটের বাইরে। তো তাকে প্রধান নির্বাচক হিসেবে নির্বাচন করাটা কেমন হয়েছে। আপনার মূল্যায়ন কী?
Advertisement
জানতে চাইলে সুজন বলেন, ‘ক্রিকেট যিনি খেলেছেন তার ক্রিকেটজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলা তো অস্বাভাবিক। অধিনায়কত্ব করেছেন, এত বছর ধরে ক্রিকেটের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মাঝখানে বড় গ্যাপ আছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট দেখে, টিভিতে আমরা সবাই কথা বলতেই পারি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে কী হচ্ছে, প্রিমিয়ার লিগ বা বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে কি হচ্ছে। ’
সুজনের মনে হয়, গাজী আশরাফ লিপুর মানিয়ে নিতে খুব বেশি কঠিন হবে না। তিনি বলেন, ‘তবে আমার মনে হয় না এটা উনার জন্য খুব একটা কঠিন হবে। মানিয়ে নিতে বেশি সময় লাগবে না। উনার ক্রিকেট মেধা, বিচক্ষণতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না, দ্বিমত থাকতে পারে না। ’
সুজনের জন্য লিপুর নামটা সারপ্রাইজিং ছিল, ‘তবে আমার জন্য খুবই সারপ্রাইজিং ছিল। আমি নামটা শুনিনি। বাতাসে অনেক নামই ভাসছিল, গুঞ্জন ছিল। আমার জন্য অবাক করা কারণ, আমি ক্রিকেট অপারেশন্সের ভাইস চেয়ারম্যান অথচ আমি জানিই না। এটা আমার খুব অবাক লাগল।’
গাজী আশরাফ লিপুর কাছ থেকে রাজ্জাক-হান্নানরা অনেক কিছু শিখতে পারবে বলে বিশ্বাস সুজনের। তিনি বলেন, ‘লিপু ভাই যথেষ্ট বুদ্ধিমান মানুষ। আমরা যখন উনার সাথে খেলেছি, তরুণদের সেভাবেই সাপোর্ট করেছেন। রাজ্জাক-হান্নানের সাথে সেভাবেই গুছিয়ে নেবেন, তারাও শিখতে পারবে। ’
প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুর সঙ্গে গাজী আশরাফ লিপুর কাজ করাটা কেমন হতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, ‘এটা তো আমি বলতে পারব না। ডিল শুরু হোক, তারপর না বোঝা যাবে! তবে পেশাদার দুনিয়ায় এসব কথা না থাকাই ভালো। এখানে পেশাদার কথাবার্তা হওয়াটাই ভালো। লিপু ভাই পেশাদারিত্বের সাথেই কাজ করবেন। আমি বিশ্বাস করি, সিলেকশন প্যানেলকে সঠিকভাবেই নেতৃত্ব দেবেন। হাথুরুর সাথেও পেশাদার সম্পর্ক থাকা জরুরি। সিলেকশনের জায়গায় সিলেকশন থাকবে। কোচের মতামতে অন্যায় কিছু দেখি না। রসায়ন ভালো হলে অনেক দূর যাবে।’
গাজী আশরাফ লিপুকে প্রধান নির্বাচক করা নিয়ে আপনার সঙ্গে কী একদমই আলোচনা হয়নি? জবাবে সুজন বলেন, ‘আমি তো আগেই ক্লিয়ার করলাম, এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমি ক্রিকেট অপারেশন্সের ভাইস চেয়ারম্যান, অথচ আমি জানিই না, ক্রিকেট অপারেশন্স সিলেক্টর নিচ্ছে, কে হচ্ছে! খুবই অবাক করার মতো। তাহলে আমার এই পজিশনে থাকার প্রয়োজন কি সেটাও জানি না আসলে।’
আইএইচএস/জিকেএস