রাজনীতি

‘উন্নয়ন এগিয়ে নিতে একদিনও থেমে থাকিনি’

ইকরামুল হক টিটু। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র। ওয়ার্ড কাউন্সিলর থেকে পৌর মেয়র, এরপর সিটি মেয়র হয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো এই সিটিতে নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচনে ইকরামুল হক টিটুও একজন প্রার্থী। গত ৫ বছরের অগ্রগতি, আগামীর প্রতিশ্রুতি নিয়ে মেয়র টিটু মুখোমুখি হয়েছেন জাগো নিউজের।

Advertisement

একান্ত সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন গত ৫ বছরের কাজের চিত্র। দাবি করেছেন, বেশিরভাগ সময় কেটেছে বৈশ্বিক সংকট মেকাবিলায়। তারপরও নগরবাসীকে নিয়ে চেষ্টা করেছেন, সব সামলে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আমরা সেভাবে কাজ করতে পারিনি। তবে, উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একদিনও থেমে থাকিনি। সীমিত সম্পদের মধ্যে থেকে সেসব কাজ করার চেষ্টা করেছি।’

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালাহ উদ্দিন জসিম। ক্যামেরায় ছিলেন জহির খান।

আরও পড়ুন: কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচন ৯ মার্চ

Advertisement

জাগো নিউজ: নবগঠিত সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন গত ৫ বছর। উল্লেখযোগ্য কী কাজ করেছেন?

ইকরামুল হক টিটু: নির্বাচিত হয়েই একটি আধুনিক ময়মনসিংহ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলাম। বিশেষ করে, আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা। সে অনুযায়ী আমাদের যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য, সেটা যেন সহজভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। এর মধ্যে মূল চ্যালেঞ্জ ছিল- জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট নিরসন বা সড়ক সুপ্রশস্ত করা, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা ও নগরের সেবাগুলো সহজ করা। এসব নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পও তৈরি করি। এগুলো হলো- যানজট নিরসনের জন্য ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণ, যাতে শহরের ভেতরে যত্রতত্র ট্রাক না থাকতে পারে। এছাড়ও বেশ কয়েকটি বাস টার্মিনাল প্রকল্পও তৈরি করেছি, যাতে প্রতিটি প্রান্তে একটি করে বাস টার্মিনাল থাকে। শহরের ভেতরে যেন গাড়িগুলোকে প্রবেশ করতে না হয়।

শিশুদের বিনোদনের জন্য ৪০ একর জায়গায় শেখ রাসেল শিশুপার্ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এতে শিশুসহ সব মানুষের জন্য রয়েছে সুন্দর পরিবেশ। এছাড়াও কবরস্থান নির্মাণ, শ্মশানঘাট নির্মাণ ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও প্রকল্পের মধ্যে রেখেছি। রাস্তাঘাট পুনর্নির্মাণ, সংস্কার, ফুটপাত নির্মাণসহ যাবতীয় নাগরিক সুবিধা আমাদের পরিকল্পনায় ছিল।

দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ৬ মাস পরেই বৈশ্বিক মহামারি করোনার কবলে পড়তে হয়। করোনায় অনেকটাই স্থবির ছিলাম। প্রথম এক বছর স্বাভাবিক কাজ করতে পারিনি। করোনা নিয়ন্ত্রণে এলে আরেক সংকট ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়।

Advertisement

কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ৬ মাস পরেই বৈশ্বিক মহামারি করোনার কবলে পড়তে হয়। করোনায় অনেকটাই স্থবির ছিলাম। প্রথম এক বছর স্বাভাবিক কাজ করতে পারিনি। করোনা নিয়ন্ত্রণে এলে আরেক সংকট ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়। যা গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। দেখা যাচ্ছে ৫ বছরের মধ্যে ৪ বছরের অধিক সময় বৈশ্বিক সংকট নিয়েই চলতে হয়েছে আমাদের। তারপরও আমরা একটি উন্নয়ন প্রকল্প দাখিল করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী সেটি অনুমোদনও করেছিলেন। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েকশ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ শেষ করেছি। কয়েকশ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার এই প্রকল্পের মাধ্যমে করেছি। ফুটপাত করেছি। ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। রাতে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য স্থাপন করেছি প্রায় ৭ হাজার আধুনিক সড়কবাতি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করেছি চারটি। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬শ মানুষ এখানে সেবা নেয়। গরিবদের বিনামূল্যে সেবা দেই।

আরও পড়ুন: ‘নৌকা ছাড়াই’ স্থানীয় সরকার নির্বাচন, আইনে যা আছে

প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে বিভিন্ন স্লাব এরিয়ায় কাজ করেছি। রাস্তা, ড্রেন, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, তাদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, ঝরেপড়া শিশুদের লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। চেষ্টা করেছি বেকারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার। বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েলসহ অন্যান্য কাজ করেছি। বিভিন্ন জায়গায় পানি সরবরাহ লাইন সম্প্রসারণের কাজ করেছি। নগরিক সেবার প্রাত্যহিক কাজগুলো সহজ করতে ৩৩টি ওয়ার্ডকে ভাগ করেছি তিনটি অঞ্চলে। এর ফলে নাগরিকরা ঘরের কাছাকাছি থেকে সিটি করপোরেশনের সব সেবা নিতে পারছেন। এছাড়া বেশিরভাগ সেবা অনলাইনেও করে দিয়েছি।

জাগো নিউজ: আপনার দায়িত্বের বেশিরভাগ সময়ই করোনা মহামারি ছিল। সে সময়ে নগর সেবক হিসেবে কী কী কাজ করেছেন?

ইকরামুল হক টিটু: করোনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাগরিকদের নিরাপদ রাখতে তাদের পাশে ছিলাম। প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের কাজ ছিল মানুষকে সচেতন করা, ঘরে রাখা এবং সরকারের সব নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। এসব কাজ সরাসরি মাঠ পর্যায়ে থেকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছি। সে সময়ে কর্মহীন মানুষকে পৌঁছে দিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা। সেই সময়ে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। হাসপাতালগুলোতেও আমাদের পক্ষ থেকে সুরক্ষা সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের পরিবহনে আমরা গাড়ির সাপোর্ট দিয়েছি।

করোনায় মৃতদের পরিবহনেও গাড়ি দিয়েছি। সে সময়ে চিকিৎসকরাও চেম্বারে বসতে পারতেন না, সিটি করপোরেশনে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করে আপদকালীন সেবা দিয়েছি কয়েক হাজার মানুষকে। সিটি করপোরেশনের ৫২৫টি স্থানে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে সহায়তা হিসেবে দিয়েছি ৭৯ লাখ টাকা। এছাড়াও ঈদ উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যে নগদ অর্থ দিয়েছেন, সেটিও তালিকা করে পৌঁছে দিয়েছি মানুষের হাতে। এরপর প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার যে উদ্যোগ নিলেন, সেটি মাঠ পর্যায়ে থেকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। টিকা প্রদানের হার ৯০ শতাংশের ওপরে।

জাগো নিউজ: সারাদিন নগরে ঘুরে আপনার এইসব কাজের প্রশংসা আমরা জনমুখে শুনেছি। তবে জলাবদ্ধতা, যানজট নিরসনের মতো বড় সমস্যার সমাধান সেভাবে হয়নি। আবারও নির্বাচিত হলে এগুলো সমাধানে পরিকল্পনা কী?

ইকরামুল হক টিটু: যেভাবে করার লক্ষ্য স্থির করেছি, বৈশ্বিক সংকটে সেভাবে করতে পারিনি। তবে, আমরা উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য একদিনও থেমে থাকিনি। সীমিত সম্পদের মধ্যে থেকে সেসব কাজ করে যাবার চেষ্টা করেছি। ময়মনসিংহ সিটির ৩৩টি ওয়ার্ডে একযোগে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ চলমান। সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে। কাজ চলছে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার উন্নয়নেও। এগুলো শেষ হলে জলাবদ্ধতার চিরচেনা রূপ থাকবে না, যানজট নিরসন হবে, জনগণ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে। এর বাইরেও সড়ক প্রশস্ত করতে একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি, সেটিও প্রক্রিয়াধীন। বাস ও ট্রাক টার্মিনালের প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, সেটি অনুমোদন হলে এই অবস্থার আরও ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।

ময়মনসিংহ সিটির ৩৩টি ওয়ার্ডে একযোগে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ চলমান। সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে। কাজ চলছে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার উন্নয়নেও। এগুলো শেষ হলে জলাবদ্ধতার চিরচেনা রূপ থাকবে না, যানজট নিরসন হবে, জনগণ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে।

 

আরও পড়ুন: হাজার হাজার কোটি টাকার স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোনো বরাদ্দ

ময়মনসিংহে আগে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে কিছু এলাকায় দুই-একদিন পানি জমে থাকতো। সি কে ঘোষ রোড, গাঙ্গিনার পাড়, স্টেশন রোড, নতুন বাজার, দুর্গা বাড়ি রোড, বড় বাজার, ছোট বাজার, ট্রানপট্টি রোড, মহার্জ রোড, মেছোয়া বাজারে পানি জমে থাকতো। আমরা আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নির্মাণ করেছি। এর ফলে এখন সেই চিরচেনা সমস্যা অনেকটা সহনীয় মাত্রায় এসেছে। পরবর্তী নেটওয়ার্কগুলো তৈরি করতে পারলে এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।

জাগো নিউজ: যানজটের বড় কারণ শহরের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেললাইন। এটি স্থানান্তরেরও প্রস্তাব এসেছে। এ বিষয়ে আপনার উদ্যোগ বা পরামর্শ কী?

ইকরামুল হক টিটু: ময়মনসিংহ শহরের ভেতরে বেশ কয়েকটি রেলগেট রয়েছে। একটি ট্রেন পাসের জন্য প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাস্তা বন্ধ থাকে। সানকিপাড়া রেলগেট থেকে সি কে ঘোষ পর্যন্ত ৫টি পয়েন্ট। দূরত্ব ২ থেকে ৩ কিলোমিটার। এই পুরো এলাকা একসঙ্গে আধাঘণ্টা স্থবির থাকে একটি ট্রেন পাস হওয়ার জন্য। শহরের মধ্য দিয়ে এভাবে ট্রেন চলাচলের ফলে দিনের অধিকাংশ সময় নগরে তীব্র যানজট থাকে। তবে কয়েক বছর আগে এখানে ইলেকট্রনিক গেট ছিল না। তখন ট্রেন পাসের জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন, ৫ মিনিট বা ৩মিনিট রেলগেট বন্ধ থাকতো। অথচ ইলেকট্রনিক গেট করার পর এখন প্রায় ২০ মিনিট বন্ধ থাকে। এ বিষয়ে আমাদের রেল বিভাগকে উদ্যোগ নিতে হবে, আন্ডারপাস বা ওভারপাস নির্মাণ করা।

 

একটা সমীক্ষা করে রেললাইন শহরের বাইরে দিয়ে যদি নেওয়া বা স্থানান্তর করা যায়। তাহলে শহরের যানজট নিরসন হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনেও এটি কাজে আসবে। কারণ আমাদের ড্রেনেজ নেটওয়ার্কের জন্য রেললাইনও বড় প্রতিবন্ধকতা।

আমাদের আরেক দাবি, একটা সমীক্ষা করে রেললাইন শহরের বাইরে দিয়ে যদি নেওয়া বা স্থানান্তর করা যায়। তাহলে শহরের যানজট নিরসন হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনেও এটি কাজে আসবে। কারণ আমাদের ড্রেনেজ নেটওয়ার্কের জন্য রেললাইনও বড় প্রতিবন্ধকতা।

যানজট নিরসনে একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। রেল বিভাগ, সড়ক বিভাগ, পুলিশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের অবস্থান থেকে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছি, সফলও হয়েছি। কিন্তু ধরে রাখতে পারিনি। সামনে সুযোগ পেলে আবারও উদ্যোগ নিয়ে সঠিক সমন্বয়ে কাজ করবো।

জাগো নিউজ: নগর উন্নয়নে মূল চ্যালেঞ্জ রাজস্ব আয় ও সেবার সমন্বয়। সেবার জন্য রাজস্ব নিতে হবে। আবার জনগণকেও সন্তুষ্ট রাখতে হয়। অভিযোগ উঠেছে, রাজস্ব আদায় বেশি হচ্ছে। আসলে কি তাই?

ইকরামুল হক টিটু: রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একটি সরকারি নির্দেশনা থাকে, প্রতিটি সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা কীভাবে রাজস্ব মূল্যায়ন করবে। সেখানে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জন্য বার্ষিক রাজস্ব প্রতি বর্গফুটে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের তো নবসৃষ্ট সিটি করপোরেশন এবং বিশেষ করে ১২টি ওয়ার্ড সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যুক্ত হয়েছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে রাজস্ব সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসতে আলোচনা করে তিন ক্যাটাগরি নির্ধারণ করি। আবাসিক ‘এ’ ক্যাটাগরি তিন টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরি ২ টাকা ২৫ পয়সা এবং ‘সি’ ক্যাটাগরি দেড় টাকা করা হয়। পরবর্তী সময়ে নাগরিকরা অনুরোধ করলেন পুনর্বিবেচনার জন্য। যার ফলে আমরা ৪০ শতাংশ ছাড় দিয়েছি। ছাড়ের পর রেট হয় ‘এ’ ক্যাটাগরি এক টাকা ৭০ পয়সা, ‘বি’ ক্যাটাগরি ৭০ বা ৮০ পয়সা এবং ‘সি’ ক্যাটাগরি ৫০ বা ৫৫ পয়সা হবে। এভারেজে তিন ক্যাটাগরিতে দুই টাকার নিচে এসে দাঁড়াবে। অথচ সরকারিভাবে নির্ধারিত ছিল ১৫ টাকা। অন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে তুলনা করলে বুঝতে পারবেন আমরা কতটা কমিয়েছি।

আরও পড়ুন: ভালুকায় হেইলিবেরি স্কুল, শিক্ষার্থীপ্রতি বছরে খরচ ৪০ লাখ টাকা

এরপরও যারা ঋণের টাকায় বাড়ি করেছেন বা পরিবারের অভিভাবক মারা গেছেন, প্রতিবন্ধী- তাদের জন্য আমরা বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করেছি। এর বাইরেও হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে রিভিউ করলে আমরা বিবেচনা করবো। প্রায় ৩০ থেকে ৩২ হাজার নাগরিক রিভিউ করেছেন। আমরা পর্যালোচনা করে তাদের চাহিদা মাফিক নির্ধারণ করেছি। তারপরও বলবো, নাগরিকরা যদি মনে করেন এটি খুব বেশি হয়েছে। আমরা যদি আগামীতে সুযোগ পাই, নির্বাচিত হই, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারি তা বিবেচনা করবো।

জাগো নিউজ: ময়মনসিংহে বিভাগীয় সদরদপ্তর স্থাপন ও আশপাশের এলাকার উন্নয়নে একটি মেগা প্রকল্প ছিল। ওই প্রকল্পের অগ্রগতি কতদূর?

ইকরামুল হক টিটু: প্রকল্পটি এরই মধ্যে অনুমোদন হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। এটি শেষ হলে পরবর্তী অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিকল্পনা করে রেখেছি। ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হলে আমাদের পক্ষ থেকে পরিকল্পনার যতটুকু বাস্তবায়ন প্রয়োজন সে বিষয়ে উদ্যোগ নেবো।

জাগো নিউজ: প্রতীক নিয়ে নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন কি না?

ইকরামুল হক টিটু: দলীয় সভাপতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে না। আমরা অবশ্যই সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি সব সময় নেত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবারই অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলতে চাই- এই নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক হবে। নাগরিকরা তাদের সঠিক রায়ের প্রতিফলন ঘটাবেন। এট মাথায় নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন: দেশের প্রথম শব্দনিরোধক পার্ক গুলশানে

জাগো নিউজ: দলগতভাবে এই নির্বাচন না করার কারণে যে যার মতো প্রার্থী হয়েছেন, কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। এটি দলে বিভাজন তৈরি করবে কি না?

ইকরামুল হক টিটু: আমরা আদর্শিক রাজনীতি করি। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অভিভাবক। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সেটি মাথায় নিয়ে আমরা কাজ করি। সঙ্গত কারণে নির্বাচন নিয়ে কিছুটা উত্তাপ-উত্তেজনা থাকতেই পারে। আমরা আমাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবো। এরপর প্রাত্যহিক কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। সাংগঠনিক কাজও সেভাবে করবো। এটি আমাদের জন্য খুব বেশি সমস্যা নয়। নির্বাচন পরবর্তী আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচি পালন করবো। নির্বাচন একটি পক্রিয়া, যে যত বেশি মানুষের কাছে গেছেন, সেবা দিয়েছেন, সেটি মূল্যায়ন করে আমাদের নাগরিকরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। আমি মনে করি, রাজনীতি এবং নির্বাচন সাংঘর্ষিক নয়।

জাগো নিউজ: সব প্রার্থীর ইশতেহার থাকে। ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি দেন। এই নির্বাচনে আপনার প্রতিশ্রুতি কী?

ইকরামুল হক টিটু: আমরা চাই একটি স্মার্ট সমৃদ্ধ নগর গড়ে তুলতে। সেজন্য আমাদের অনেক কিছুর প্রয়োজন। জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশের উন্নয়ন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ নিশ্চিত করা, বেকারদের কর্মসংস্থান, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে সহযোগিতা করা, মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলায় কাজ করা। এগুলোই আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও কিছু কাজ করতে হবে। সার্বিক বিষয়ে নাগরিকদের পরমর্শ নিয়ে একটি ইশতেহার প্রস্তুত করবো। যদি আগামী দিনে জনগণ আমাকে সুযোগ দেয়, আমার অবস্থান থেকে সেটি বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করবো।

জাগো নিউজ: নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?

ইকরামুল হক টিটু: যেহেতু দীর্ঘদিন কাজ করেছি, সবসময় মানুষের পাশে থেকেছি। যে কারণে আমি শতভাগ আশাবাদী, ইনশাআল্লাহ জনগণ আগামী দিনেও আমাকে কাজ করার সুযোগ দেবে।

জাগো নিউজ: বর্তমান মেয়রের পাশপাশি প্রার্থী হিসেবে ভোটাদের কাছে প্রত্যাশা কী?

ইকরামুল হক টিটু: দীর্ঘদিন মানুষের জন্য কাজ করেছি। মানুষের পাশে থাকাটাই ইবাদত মনে করি। সবার সঙ্গে মিলেমিশে এই নগরীকে যেন সুন্দর করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করেছি। বিগত দিনের কাজের মূল্যায়ন করে জনগণ আগামী দিনে অবশ্যই আমাকে মূল্যায়ন করবে। তবে দীর্ঘদিন যেহেতু কাজ করেছি, হয়তবা আমারও ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। নিশ্চয়ই আমাদের নাগরিকরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। তাদের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা।

এসইউজে/কেএসআর/এমএস