দেশজুড়ে

৫৯ বছর পর চালু হলো সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌবন্দর

বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ প্রটোকলের আওতায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ৫৯ বছর পর চালু হলো হলো রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ও মুর্শিদাবাদের ময়া নৌবন্দর। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জে বন্দরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী।

Advertisement

প্রথম দিনে ১০ টন তুলার একটি ট্রলার যায় ভারতের ময়া বন্দরে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই বন্দরটি চালুর ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। বাণিজ্যে আসবে গতিশীলতা। বন্দরটি চালুর ফলে দুই দেশে দূরত্ব কমবে ১২০ কিলোমিটার।

আর ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের প্রতিনিধিরা বলছেন, এই বন্দর চালুর ফলে শুধু দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কই নয়, দুই দেশের বন্ধুত্বও আরও সুদৃঢ় হবে।

Advertisement

এ সময় রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে নৌপথটি গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ, রাজশাহী ও পাকশী হয়ে আরিচাঘাট পর্যন্ত গেছে। দীর্ঘদিন এটির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ ছিল না। আমি গত পাঁচ বছর বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, লেখালেখি ও ডিও লেটার দিয়েছি। ফলে এটা গতিশীল হয়েছে। অবশেষে প্রথম পর্যায়ে সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথে নৌযান চলাচলের শুরু হলো। পরবর্তীতে এটি রাজশাহী হয়ে আরিচা পর্যন্ত চালু হবে। রাজশাহী নগরীতে নৌবন্দর স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল হবে, অনেক কর্মসংস্থান হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আজ অত্যন্ত আনন্দিত। পিছিয়ে পড়া রাজশাহীতে নৌবন্দর চালু হলো। এটির মাধ্যমে রাজশাহীর ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে। আমরা অনেক দিক দিয়ে উপকৃত হবো।

এদিকে সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর ও সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথে নৌযান চলাচলের উদ্বোধন উপলক্ষে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করে বিআইডব্লিউটিএ। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কালাম আজাদ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম সচিব সেলিম ফকির।

Advertisement

জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-ময়া গোদাগাড়ী-ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বাণিজ্য চালু ছিল। পরে রুটটি বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার বাংলাদেশ সীমান্তের সুলতানগঞ্জে নৌবন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ঘাটটি নদী বন্দরের মর্যাদা পেলো। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের মাধ্যমে এসব পণ্য ভারত থেকে আমদানিতে সময় ও খরচ কমে যাবে। এতে উপকৃত হবেন বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, বছরে এই নৌপথে দুই দেশের মধ্যে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।

এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশের রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান নৌরুটে বাণিজ্য চালুর। রাজশাহী থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও পদ্মার নাব্য সংকটের কারণে কার্যকর করা হয়নি। ফলে রুটটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের ময়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ২০ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা নেওয়া হবে। শুরুতে এই নৌপথে ভারত থেকে পাথর, বালি ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী আনা হবে।

সাখাওয়াত হোসেন/এফএ/জিকেএস