দেশজুড়ে

অসচেতনতায় সৈকতে মারা পড়ছে মা কাছিম

কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন অঞ্চলে এক মৌসুমে মারা গেছে প্রায় ১৯টি অলিভ রিডলি প্রজাতির মা কাছিম। কাছিমের আবাসস্থল ধ্বংস, সাগরে নিষিদ্ধ ক্যারেন্ট জালের ব্যবহার এবং জেলের জালে আটকে পড়ে এসব কাছিম মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। এ অবস্থায় সামুদ্রিক প্রাণী কাছিম রক্ষায় কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

Advertisement

তাদের দেওয়া তথ্য মতে, সেন্টমার্টিনে ৬টি, টেকনাফে ৩টি, শামলাপুরে ১টি, সোনারপাড়ায় ২টি, পেচারদ্বীপ ও হিমছড়ি এলাকায় ৩টি এবং সোনাদিয়া অঞ্চলে ৪টি কাসিম মারা গেছে।

সামুদ্রিক কাছিম রক্ষায় গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরসহ কাজ করছে বেশ কয়েকটি এনজিও। চলতি মৌসুমে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ৭০টি কাছিম থেকে ৮৪৪১টি ডিম সংগ্রহ করেছে। তৎমধ্যে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (কোডেক) নেচার অ্যান্ড লাইফ প্রকল্প টেকনাফের বড় ডেইল, জাহাজপুরা, শীলখালী, মনতলিয়া এবং উখিয়ার ছেপটখালী, মাদারবুনিয়া থেকে ৩৫টি মা কাছিম থেকে ৪০৫৪টি, পরিবেশ অধিদপ্তর সেন্টমার্টিনে ৯টি থেকে প্রায় ১০২৮টি, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট উখিয়ার সোনারপাড়া বিচে ২টি থেকে ২৫৭টি, নেকম টেকনাফ, শীলখালী, মাদারবুনিয়া, পেচারদ্বীপ, হিমছড়ি, সোনাদিয়া থেকে ২৪টি থেকে প্রায় ৩১০২টি ডিম সংগ্রহ করে তাদের নিজস্ব হ্যাচারিতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।

সর্বশেষ ১০ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের শিলখালীতে ৬টি, হামজাপাড়ায় ১টি এবং উখিয়ার ছেপটখালিতে ২টি কাছিম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ৯৪৮টি ডিম। এসব ডিম কোডেক’র হ্যাচারিতে সংরক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে। এরইমধ্যে সেন্টমার্টিনে বেশ কিছু ডিম থেকে ফোটা বাচ্চা সমুদ্রে অবমুক্তও করা হয়েছে।

Advertisement

সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, সারাবিশ্বে গ্রিন, লগারহেড, কেম্পস রিডলি, অলিভ রিডলি, হক্সবিল, লেদারব্যাক এবং ফ্ল্যাট ব্যাকসহ সাত প্রজাতির কাছিম পাওয়া যায়। যেখানে মাত্র অলিভ রিডলি (লেপিডোছেলিস অলিভাসিয়া) এবং হক্সবিল (এরিমোছেলিস ইমব্রিকাটা) দুই প্রজাতির কাছিম আমাদের সমুদ্র উপকূলে দেখা যায়। এদের মধ্যে অলিভ রিডলি প্রজাতির আধিক্য অনেক বেশি। এরা সাইজেও ছোট। এরা সধারণত ৬০ থেকে ৭০ সেমি লম্বা হয় এবং ৩০ থেকে ৩৫ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। এ প্রজাতির মা কাছিমগুলো দলবেধে এসে ডিম ছাড়ে। একটি অলিভ রিডলি সামুদ্রিক কাছিম গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি ডিম দিয়ে থাকে। তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ৬০ থেকে ৭০ দিন সময় লাগে। কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, শামলাপুর, ইনানী, সোনারপাড়া, পেচারদ্বীপ, ননিয়ারছড়া, সোনাদিয়া এলাকায় সমুদ্রের জোয়ারের পানির চেয়েও উচ্চতায় ডিম পারে এরা।

তিনি বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে এ পর্যন্ত ১৯টি অলিভ রিডলি মা কাছিম মারা পড়েছে। এ প্রজাতির কাছিম রক্ষা করতে হলে সৈকত এলাকায় কাছিমের আবাসস্থল যেন ধ্বংস না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে পরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সৈকত এলাকায় আলোকায়ন বন্ধ রাখতে হবে। নিষিদ্ধ করতে হবে ক্যারেন্ট ও টানা জালের ব্যবহার। কাছিম সম্পর্কে জেলেদের অবগত করার পাশাপাশি সমুদ্রে পরিত্যক্ত জাল এবং বিহিংগি জাল ফেলা বন্ধ করতে হবে।

এফএ/জিকেএস

Advertisement