মতামত

বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির শেষ কোথায়?

‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ান’ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেশের স্বাভাবিক রাজনীতির পথ এভাবেই রুখে দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে ১৫ আগস্ট হত্যার পর তার সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী মানুষদের একজন ছিলেন জিয়া। অনেকের মতে, জিয়া ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের অন্যতম কুশীলব। অবৈধভাবে প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছ থেকে ক্ষমতা দখলের পর জিয়া এই কথাটি বলেন বলে বিভিন্ন লেখকের বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দলগুলোকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। আর সেটি করার জন্যই জামায়াত ইসলামের মত ধ্বংসাত্মক ধর্ম ভিত্তিক দলগুলোকে রাজনীতির সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে ধর্ম নিরপেক্ষতা, সম্প্রীতি, সাম্য, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের যেই লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, সেখান থেকে একেবারে ইউটার্ন নিয়ে বাংলাদেশকে মৌলবাদী এক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেন মেজর জিয়া।

বাংলাদেশে ধ্বংসাত্মক রাজনীতির যে সূচনা জিয়াউর রহমান করে গেছেন, তাই পরবর্তী সময়ে বয়ে নিয়ে গিয়েছে ক্যান্টনমেন্টে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি রাজনৈতিক গঠনমূলক কোনো কার্যক্রম গড়তে পারেনি কখনই। বরং প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, রাজনীতির বাহিরে গিয়ে বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক উপায়ে বা অন্যের হাত ধরে ক্ষমতায় আসার পথ খুঁজে বেরিয়েছে। ২০২৪ সালের সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও ছিলো না এর ব্যতিক্রম।

একটি রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক আন্দোলন করলে তার মূল লক্ষ্যই থাকে মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানানো। ২০০১ সালে ভুয়া ভোটার তালিকা করে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিলো। বিষয়টি একদম প্রমাণিত সত্য হলেও তৎকালীন সময় মূল রাজনীতি থেকে বিচ্যুত হয়নি আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তারা সংসদে থেকে যেমন তৎকালীন সরকারের প্রতিবাদ জানিয়েছে। তেমনিভাবে তাদের প্রতিবাদ ছিলো রাজপথে।

Advertisement

পুলিশের মার খেয়ে প্রয়াত নাসিমের মাথা ফেটে রক্তে লাল হয়েছিলো সাদা পাঞ্জাবি। কিন্তু তিনি রাজপথ ছাড়েন নাই। পুলিশও হত্যা করেন নাই। রাজপথে আন্দোলনের সময় বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ মতিয়া চৌধুরীর শাড়ি খুলে ফেলা হয়েছিলো। একদিনে গ্রেফতার করা হয়েছিলো ৪০ হাজার নেতা কর্মী। মাত্র ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে ৮ হাজার নেতাকর্মীকে বন্দি করা হয়েছিলো। হত্যা করা হয়েছিলো আহসানউল্লাহ মাস্টার সহ অগণিত আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাকে। দেশজুড়ে জঙ্গিদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাসী কার্যক্রম কোনো কিছুই আওয়ামী লীগকে তার মূলধারার রাজনীতি থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। এটাই তো একটি রাজনৈতিক দলের সফলতা।

অন্যদিকে বিএনপি হাঁটছে আওয়ামী লীগের ঠিক উল্টো পথে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে হারের কারণগুলো মেনে নিয়ে দলটি নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারতো, যেখানে তরুণরা সর্বোচ্চ ভোট দিয়েছিলো যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিপক্ষে। কিন্তু এরপরও দলটি জামায়াতকে ত্যাগ করেনি। বরং ২০১৪ সালে ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে নিজেরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। জনগণের ম্যান্ডেট না নিয়ে দলীয় ম্যান্ডেট নিয়ে বিএনপির এই আহ্বানে সারা দেয়নি দেশের মানুষ। উল্টো যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে দেশে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে প্রায় একশোর বেশি সাধারণ জনগণকে পুড়িয়ে মারার মাধ্যমে বিশ্বের বুকে এবং দেশের মানুষের কাছেও সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ লাভ করে বিএনপি। যেই তকমা পরবর্তী ৫ বছরেও ঘোচাতে পারেনি বিএনপি।

২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। ড. কামালকে দলের নেতৃত্ব প্রদান করে যেই জোট গঠন করে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখে বিএনপি, সেই জোটের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু ছিলো সাধারণ মানুষের কাছে? সরকার পতন করে সাধারণ মানুষের লাভ কি? সাধারণ মানুষ বিএনপির এই জোটটিকে ক্ষমতায় আনলে কি লাভ হবে তাদের? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি। এমনকি দলটির মধ্যে আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় মনোনয়ন বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে।

দেখা যায়, জনপ্রিয় নেতা ও বর্ষীয়ান অনেক রাজনীতিবিদকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দিচ্ছে বিএনপি। ফলে নৈতিকভাবেই নির্বাচনে বড় ধরণের লড়াইয়ের মানসিকতা হারায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এরপর নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষে মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিদেরও তেমন প্রচারণা করতে দেখা যায়নি। বরং নির্বাচনের দিন হেরে যাবার আগ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়াই যেন দলটির জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

Advertisement

২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ না নিয়ে ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে মেতে ওঠে বিএনপি-জামায়াত জোট। গোটা দেশ নির্বাচনকে ঘিরে উৎসব আর উন্মাদনায় টগবগ করলেও তারা ব্যস্ত ছিলো জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতে। তবে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এই জোটের প্রয় সব কর্মসূচিই ব্যর্থ। মানুষ মেতে ছিলো নির্বাচনী প্রচারে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ উন্নীত করার লক্ষ্যে আরও একবার নির্বাচিত আওয়ামী লীগ কাজ করছে।

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের বড় সাফল্য ডিজিটাল বাংলাদেশে উত্তরণ। গতবার ভোটের আগে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’ - এই চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়া হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ার কথাও বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে।

প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সুশাসনের। গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদের মাধ্যমে ফের গড়ে তোলা হবে স্থিতিশীল বাংলাদেশ। বলা হয়েছে, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষার কথা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ইশতেহার প্রকাশ করে তিনি জনকল্যাণমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেবে। ক্ষমতায় এসেই সেটা কার্যকর করে দেখিয়েছে দলটি। এবার প্রতিশ্রুতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ। সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কর্মসূচি চলমান থাকবে। স্থানীয় সরকারকে আরও কার্যকর করার পাশাপাশি ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা স্থাপনের অঙ্গীকার রয়েছে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে।

উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারিখাতের গুরুত্ব অব্যাহত থাকবে এবারও। আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনকেও গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এবারের ইশতেহার অনুসারে, পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাসে পাবে সরকারের অগ্রাধিকার। ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। তরুণ যুবসমাজকে ‘তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ প্রকল্পের মাধ্যমে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হবে। কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি, শিল্প উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রেও উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।

 

আওয়ামী লীগ শুধু ভোটে জেতার জন্যই গালভরা কথা ইশতেহারে লেখে না। যে প্রতিশ্রুতি তারা দেন, সেই প্রতিশ্রুতি পালনও করেন তারা। গত ১৫ বছরের শাসন সেটাই প্রমাণ করে। গোটা দেশের সার্বিক উন্নয়নই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।

 

শেখ হাসিনার হাত ধরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার। সেই উন্নয়ন ধারা থাকবে অব্যাহত। সুনীল অর্থনীতির মাধ্যমে বিকশিত হবে বাংলাদেশ। সমুদ্র সম্পদের সঠিক ব্যবহার দেশকে আর্থিক ভাবে আরও সচ্ছল করে তুলবে।

সামাজিক নিরাপত্তা ও সেবার ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে এবার আওয়ামী লীগের ভোট প্রচারে। সর্বজনীন পেনশনের জন্য সময়োপযোগী উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে, বর্তমান সরকারের আমলেই ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন প্রণীত হয় এবং ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট মাসে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন হয়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞানে সমৃদ্ধ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ রূপকল্প-২০২১ এর ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-২০৪১ এর কর্মসূচিতে মৌলিক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবা উন্নত ও সম্প্রসারিত করার কথা বলা হয়েছে।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকেই হাতিয়ার করার কথা বলছে আওয়ামী লীগ। সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করবে সরকার। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে-সংস্কৃতির ভেতর দিয়েই সভ্যতা, মানবতা, বিশ্বজনীনতা ও জাতীয়তা সমৃদ্ধ ও বিকশিত হয়। খেলাধুলার বিকাশে প্রত্যেক উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ চলছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রীড়া ক্লাব গড়ে তুলে বিনা মূল্যে ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে খেলার মাঠের উন্নয়ন, ক্রীড়া অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তাসহ ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট সকলের প্রশিক্ষণ সুবিধাদি সম্প্রসারণে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে আগামী বছরগুলোতে।

শ্রমিক কল্যাণ ও শ্রম নীতি আরও বেশি মানবিক করার কথা বলছে আওয়ামী লীগ। নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নারী উন্নয়নে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। গ্রামীণ নারীদের সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং শ্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে। গ্রামীণ নারীদের অন-লাইনে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে।

শিশু কল্যাণ, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও প্রতিবন্ধী কল্যাণে সরকারের কর্মসূচি থাকবে অব্যাহত। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ সম্প্রসারণ করা হবে। “বঙ্গবন্ধু প্রতিবন্ধী সুরক্ষা বীমা” চালু করা হয়েছে। প্রবীণদের ক্রিয়াশীল রাখতে, সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে তাদের অবদান যুক্ত হবে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে আরও যত্নশীল হবে সরকার। সংবিধানের আলোকে সকলের অধিকার সুরক্ষায় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করবে আওয়ামী লীগ। হিজড়াদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যেই উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা হয়েছে তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে, আরও উন্নত হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অবদান গোটা দুনিয়াই স্বীকার করে। গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে ৭ম অবস্থানে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা ও খাপ খাইয়ে চলা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ভৌত-প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ। তাই সেই চ্যালেঞ্জ সঠিক ভাবে মোকাবেলা করার বিষয়েও অঙ্গীকারবদ্ধ বাংলাদেশ।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ আওয়ামী লীগ। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিতে সবচাইতে বড় ভূমিকা রাখে আওয়ামী লীগ। তাই সেই স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত নৌকার হাতেই। পররাষ্ট্র নীতিতে যুদ্ধ নয়, শান্তিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডে জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর উপস্থিতি রোধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

আওয়ামী লীগ শুধু ভোটে জেতার জন্যই গালভরা কথা ইশতেহারে লেখে না। যে প্রতিশ্রুতি তারা দেন, সেই প্রতিশ্রুতি পালনও করেন তারা। গত ১৫ বছরের শাসন সেটাই প্রমাণ করে। গোটা দেশের সার্বিক উন্নয়নই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।

দেশকে অনুন্নত অবস্থান থেকে মধ্যম আয়ে উন্নীত করার পথে আওয়ামী লীগ যখন উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখায়, তখনও ধ্বংসাত্মক এবং হিংস্র রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচনকে ঘিরে ট্রেন লাইন উপড়ে ফেলে, ট্রেনের বগি ও লাইনে অগ্নি সংযোগ, এক পুলিশ সদস্য সহ কমপক্ষে ৭ জনকে হত্যা সহ অসংখ্য অগ্নি সংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটানো হয়। বরাবরের মতই ভোটে না যাওয়ার জন্য সংখ্যালঘুদের হুমকি প্রদান করে দলটির নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয়, গুজব ও ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে নিজ নেতাকর্মীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে দলটির বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে বলা যায়, গঠনতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আদর্শের পথকে না বেছে নিয়ে আরও একবার অগণতান্ত্রিক ও সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে বিএনপি। যার মাধ্যমে মূলত দেশের মূল রাজনীতির ধারা থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে বিএনপি।

রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে দলটির নিবন্ধনও এখন হুমকির মুখে। রাষ্ট্রের কাছে নিবন্ধন হারাবার পর কি হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে দলটি? দুর্নীতি পরায়ণ ও অপরাধীর নেতৃত্বে থেকেই কি এক সময় দেশের রাজনীতি থেকে আরও দূরে সরে যাবে দলটি? নাকি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণা করে ঘুরে দাঁড়াবে দলটি? এই সিদ্ধান্তটা বিএনপির নেতাকর্মীদেরই নিতে হবে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এইচআর/জিকেএস