আইন-আদালত

সঠিক তথ্যের অভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পূর্ণতা আসেনি

 

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি-রোধে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য অবিকৃত অবস্থায় জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে গত পঞ্চাশ বছরে অনেক গবেষণা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তারা সবসময় অজানা একটা শঙ্কার মধ্যে থাকি। শঙ্কার কারণটি হলো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও আজও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে। এর মূল কারণ হলো, সঠিক তথ্যের অভাবে আজো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পরিপূর্ণতা আসেনি।’

Advertisement

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন রচিত ও সম্পাদিত দুটি গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে ‌‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী, বাংলাদেশ চর্চা ও অনন্যা।’ অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন’ এবং মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রবিষয়ক সংকলন ‘মিডিয়া অ্যান্ড দি লিবারেশন ওয়ার’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বই দুটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা অনন্যা।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, কখনো কখনো ব্যক্তিগত এজেন্ডার কারণে, কখনো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায়, কিংবা কখনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ভুলভাবে উপস্থাপন করে স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের গবেষণার নাম করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে বিকৃত ইতিহাস রচনা করে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস জাতীয় জীবনে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে, তার সবচেয়ে বড় শিকার মাদের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে যাদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের পর। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য অবিকৃত অবস্থায় জনগণের সামনে তুলে ধরা।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবর রহমান, গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি সম্পাদক ড. চৌধুরী শহীদ কাদের এবং বই দুটির লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধীরা বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। এগুলোর মোক্ষম জবাব দিতে হলে মুনতাসীর মামুনের এ গ্রন্থগুলোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। একদিকে দলিল সংকলন, অন্যদিকে দলিলের ভিত্তিতে ইতিহাসের পুনর্গঠন-মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিস্তারের জন্য এগুলো খুব প্রয়োজন।’

সভাপতির বক্তব্যে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা বির্নিমাণে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করা যায় না। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের এ কাজটি অত্যন্ত মূল্যবান। আশা করবো ভবিষ্যতে জাতির জনক আইনজীবী না হয়েও আইনের বিষয়ে তার পারদর্শিতা পরবর্তী প্রকাশনায় আরও বিস্তারিত জানতে পারবো।’

এফএইচ/এমএএইচ/

Advertisement