ফিচার

‘পচা কলার’ দোকানে মাসে বিক্রি লাখ টাকা

জিহাদুল ইসলাম

Advertisement

সারি সারি কলা ঝুলিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে পচা কলার দোকানে। প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ টাকার কলা বিক্রি হয় এই ছোট্ট দোকানে। পচা কলার দোকান ছাড়াও দোকানটি পরিচিত ‘গরিবের কলা’র দোকান হিসেবে।

স্বাধীন পেশার খোঁজে চাকরি ছেড়ে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় পচা কলার দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন রিয়াজ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আমার এখানে পচা কলা বিক্রি হয়। মাসে প্রায় ৮০ হাজার থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা বিক্রি করি। এর আগে আমি ২ বছর মার্কেটিং বিভাগে চাকরি করছি। আমার ভালো লাগে না তাই ভাবলাম স্বাধীন কিছু করি।’

Advertisement

দোকানে এসেই ক্রেতারা কালো দাগ পড়া কলা দেখে নষ্ট বা পচা কলা বলায় ইচ্ছে করেই দোকানের নাম দিয়েছেন পচা কলার দোকান। তবে পচা কলার দোকান হলেও ফরমালিনমুক্ত ভালো কলা পাওয়া যায় তার দোকানে।

আড়ৎ থেকে কিনে আনা এসব কলায় কোনো কেমিক্যাল বা স্প্রে ব্যবহার না করায় কালো দাগ পড়ে কলার উপরে। রিয়াজ উদ্দিনের দোকানে ভেজালমুক্ত কলা পাওয়ায় প্রতিনিয়ত ভিড় করেন ক্রেতারা।

তবে অনেকে বলছেন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেতেই কলার দোকানের ভিন্নধর্মী নাম দিয়েছেন তিনি। কিছুটা নষ্ট হয়ে যাওয়া ও বিক্রি অনুপযোগী কলাগুলো ছিন্নমূল মানুষের জন্য রাতে দোকানের বাইরে রেখে যান মালিক রিয়াজ উদ্দিন।

আরও পড়ুন

Advertisement

ভয়ংকর এই দ্বীপ থেকে মহাকাশ সবচেয়ে কাছে!ফেলে দেওয়া মাছের আঁশ বিক্রি করে স্বাবলম্বী তারা

তার এই মানবিক গুণের কারণে এলাকার অনেকেই গরিবের কলার দোকান বলে উল্লেখ করেন রিয়াজ উদ্দিনের ছোট দোকানটিকে। রিয়াজ বলেন, ‘রাতে আমি যখন বাসায় যাই তখন বেশি পেকে যাওয়া বা দাগ পড়া কলাগুলো রেখে যাই গরিব মানুষের জন্য।’

রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে পাইকারি কলা কিনে ভ্যানে করে দোকানে নিয়ে আসেন রিয়াজ। সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্রি করে দোকান বন্ধ করেন। আবার বিকেল থেকে কলা বিক্রি শুরু করেন যতক্ষণ তার ভালো লাগে।

ঢাকায় প্রায় এক যুগ ধরে মুদি পণ্যর ব্যবসা করেন রিয়াজ উদ্দিন। এরপর ব্যবসায় মূলধন হারিয়ে ২ বছর চাকরি করেন এনজিওতে। পরবর্তী সময়ে অল্প পরিসরে বিভিন্ন ফলের ব্যবসা শুরু করেন।

রমজান মাসে কলার চাহিদা বেশি থাকায় কলা বিক্রি শুরু করে বুঝতে পারেন এই ব্যবসায় লাভ বেশি। থিতু হন এই ব্যবসায়। গত ৭ বছর ধরে বিক্রি করছেন বিভিন্ন জাতের কলা।

অন্য ফলের ব্যবসা থেকে কলা বিক্রিতে বেশি লাভ হয় বলে জানান ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দিন। পাইকারি এনে ফল বিক্রি করলে খুচরা বিক্রেতাদের লাভ হয় শতকরা ২০ ভাগ। তবে অর্ধেক দামে কিনে আনলেও দ্রুত পচনশীল হওয়ায় খুচরা পর্যায়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় কলা।

তিনি বলেন, ‘ফল বিক্রি করলে ২০ ভাগ লাভ থাকে আর কলাতে ১০০ ভাগ লাভ থাকে। ৬ টাকায় প্রতি পিস কিনে আনলে ১৫ টাকা বিক্রি করা যায়। আর ১২ টাকায় আনলে ২৫ টাকা করে বিক্রি করা যায়।’

শীতকালে এই পচা কলার দোকানে প্রতিদিন বিক্রি হয় ২-৩ হাজার টাকা। গরমের সময় বিক্রি হয় ৪-৫ হাজার টাকা। তবে রমজানের সময়ে প্রতিদিন এই ছোট্ট দোকানে কলা বিক্রি হয় প্রায় ১০ হাজার টাকার।

দোকানের নাম পচা কলার দোকান হওয়ায় এলাকার অনেকেই হাসি ঠাট্টা করতেন বিক্রেতাকে নিয়ে। এমনকি পরিবারের কাছেও লজ্জা পেতে হয়েছে তাকে। তবে এখন সবাই ভালোভাবে গ্রহণ করেছে পঁচা কলার নাম দিয়ে ভালো কলা বিক্রির এই ব্যবসাকে।

মাত্র ১০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন বিয়াজ উদ্দিন। তবে রাজধানীতে ফ্ল্যাট ভাড়া করে স্ত্রী-সন্তাদের নিয়ে সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন তিনি।

রিয়াজ উদ্দিন বলেন, গ্রামে মা-বাবা, ঢাকা আমার স্ত্রী আর দুই মেয়ে আছে। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি সব খরচ মিটিয়ে। অনেক ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা আর আমার ১০ হাজার টাকা মূলধন।

জেএমএস/এমএস