দেশজুড়ে

খাল খনন বন্ধ করে প্রকৌশলীকে মারধর, আ’লীগ নেতা গ্রেফতার

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে চাঁদা দাবিতে খাল খননে বাধা, প্রকৌশলীদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম (৪৫) ও তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কাকরকান্দি ইউনিয়নের সুতিয়ারপাড় বাজার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আমিনুল ইসলাম নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তার অপর সহযোগীর নাম জাকির হোসেন।

জানা যায়, মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে না পেয়ে স্থানীয় একটি খাল খনন কাজে বাধাদানসহ প্রকৌশলীদের মারধর করা হয়। এ বিষয়ে থানায় মামলা হলে আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, সম্প্রতি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর অধীনে নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের ফুলপুর বান্দের বাজার থেকে কাকরকান্দি ইউনিয়নের রসাইতলা কাঁকরামারি পর্যন্ত ১০.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সুতিয়ার খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই কাজটি সুতিয়ার খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু সমিতির কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এডহক কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে বাস্তবায়ন করে আসছে এলজিইডি। গেলো সপ্তাহে খালটি পুনঃখনন করতে গেলে কাকরকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল কৃষক বাধা দেন।

Advertisement

পরে ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রসাইতলা গ্রামের শাখা খালটি পুনঃখনন করতে দুটি স্কেভেটর নিয়ে কাজ শুরু করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। দুপুরের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুলের নেতৃত্বে একদল কৃষক খনন কাজ বন্ধ করে দেন এবং খনন কাজের তদারকিতে থাকা এলজিইডি শেরপুর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী হাসানুর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী গৌতম বিশ্বাস, কাজি মঈন উদ্দিন ও নালিতাবাড়ী কার্যালয়ের জেনারেল ফেসিলিটেটর মেহেদী হাসানকে মারধর করে আহত করেন। পরে আহতদের পুলিশি উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় রাতেই সহকারী প্রকৌশলী হাসানুর রহমান বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম ও রাকিবুল হাসান বুলবুলসহ ১১ জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনসহ মোট ৩১ জনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় মামলার প্রধান আসামি আমিনুল আসলাম ও জাকির হোসেনকে সুতিয়ার বাজার থেকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।

এদিকে আমিনুল ইসলামকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ করেছেন তার অনুসারী কৃষকরা।

তবে রসাইতলা গ্রামের কৃষক সেকান্দর আলী, শাহ আলমসহ অনেকেই বলেন, আমাদের খালটি মরা। এটি খনন করা হলে খালে পানি জমবে আর সেই পানি থেকে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করতে পারবো।

Advertisement

তারা বলেন, আমাদের কোনো সমস্যা হয় না, তাহলে অন্য এলাকার কৃষকরা কেন এখানে এসে খনন কাজ বন্ধ করে দেয়? এসময় তারা খালটি পুনঃখননের দাবিও জানান।

অন্যদিকে পলাশিয়া গ্রামের কৃষক সোহরাব আলী বলেন, বর্তমানে যাদের দিয়ে সমিতির এডহক কমিটি করা হয়েছে তা গোপনে করা হয়েছে। আমাদের জানানো হয়নি। এজন্য আমাদের দাবি বোরো আবাদ শেষ হলে এবং নতুন কমিটি গঠন করে খালটির পুনঃখনন কাজ শুরু করা হোক।

সহকারী প্রকৌশলী হাসানুর রহমান ও উপসহকারী প্রকৌশলী গৌতম বিশ্বাস বলেন, আমিনুল ইসলামসহ তার লোকজন আমাদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমরা ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় স্থানীয় কৃষকদের ক্ষেপিয়ে খাল খনন কাজে বাধা দেন এবং অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা করে মারধর করেন।

এলজিইডি শেরপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে আমিনুলসহ স্থানীয় কয়েকজন ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। ওই চাঁদা না পেয়ে কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে আমার অফিসের লোকদের ওপর হামলা করা হয়েছে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভুইয়া বলেন, বাদীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা নিয়ে প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ইমরান হাসান রাব্বী/এফএ/এএসএম