টঙ্গীর তুরাগ নদীরতীরে তাবলীগ জামাত আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির উদ্দেশ্যে চলছে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ফজরের নামাজের পর শুরু হয় এই বয়ান।
Advertisement
টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান এরইমধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) হবে আখেরি মোনাজাত। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত এ ঢল অব্যাহত থাকবে।
দু’দিন ধরে সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রয়েছেন মুসল্লিরা। প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর আমবয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শনিবার ফজরের পর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সাঈদ বিন সাদ, বাংলা তরজমা করেন মুফতি ওসামা ইসলাম। সকাল সাড়ে ১০টায় তালিমে হালকা মোয়াল্লেমদের সঙ্গে কথা বলবেন ভারতের মাওলানা আব্দুল আজিম। জোহরের নামাজের পর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা শরিফ। বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা মাহমুদুল্লাহ।
Advertisement
আসরের নামাজের পর বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা ওসমান। বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা আজিম উদ্দিন। বয়ানের পর যৌতুকবিহীন বিবাহ পড়ানো হবে।
মাগরিবের নামাজের পর বয়ান করবেন ভারতের মুফতি ইয়াকুব। বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।
এছাড়া রোববার ফজরের পর বয়ান করবেন ভারতের মুফতি মাকসুদ। বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা আব্দুল্লাহ। বয়ানের পরই হেদায়েতের কথা ও দোয়া পরিচালনা করবেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
Advertisement
তিনি বলেন, রোববার সকাল দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তাশকিল
ইজতেমা প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি খিত্তায় তাশকিলের জন্য বিশেষ স্থান রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে আল্লাহর রাস্তায় বের হতে ইচ্ছুকরা নাম তালিকাভুক্ত করে সেখানে অবস্থান করছেন। কাকরাইল মসজিদের মুরব্বিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় দ্বীনের মেহনতে পাঠানো হবে।
ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লি
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকাল পর্যন্ত জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ৫৪টিরও অধিক দেশ থেকে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বিদেশি মুসল্লি আসেন। ভাষাভাষি ও মহাদেশ অনুসারে ময়দানে ৪ তাবুতে রয়েছেন মেহমানরা। এর মধ্যে রয়েছে ইংরেজি খিমা, উর্দু খিমা, আরবি খিমা ও বাংলা খিমা।
নিরাপত্তা ও যান চলাচল
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম জানান, শনিবার মধ্যরাত থেকে মোনাজাত শেষে রোববার বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মিরেরবাজার থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত, কামারপাড়া থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এবং বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকা কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। প্যান্ডেলের ভেতর ও বাইরে মুসল্লিবেশে রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পর্যাপ্ত সদস্য। এছাড়া প্রায় ৭ হাজার আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য দিয়ে পুরো ইজতেমা ময়দানকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে।
বিশেষ ট্রেন
টঙ্গীর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা জানান, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে রেলওয়ে বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে। ইজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইজতেমা ময়দানে ফ্রি চিকিৎসা সেবা
বিশ্ব ইজতেমায় আগত দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দিতে বিভিন্ন প্রতষ্ঠান প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও মুসল্লিদের ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন হাজার হাজার মুসল্লিকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে।
১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমা আয়োজন করা হয়। ১৯৬৬ সালে গাজীপুরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমান ময়দানে স্থানান্তর করা হয় বিশ্ব ইজতেমা।
২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটে। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (মাওলানা সাদপন্থি) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিচ্ছেন। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/এএসএম