জাতীয়

ঢাকা-রোমে ফের ডানা মেলার অপেক্ষায় বিমান, প্রস্তুতি কতদূর?

দীর্ঘ নয় বছর বিরতির পর আবারও ইতালির রোমে ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আগামী ২৬ মার্চ থেকে ঢাকা–রোম রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করবে সংস্থাটি। প্রথমদিকে এই রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান।

Advertisement

তবে ঢাকা-রোম ফ্লাইটের তারিখ ঘোষণা করলেও সার্বিক প্রস্তুতিতে পিছিয়ে রয়েছে সংস্থাটি। এখনো রোমের ফিউমিচিনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্লট মেলেনি। ঢাকা-রোম-ঢাকা বা ঢাকা-রোম একমুখী টিকিটমূল্যও নির্ধারণ করা হয়নি। ফ্লাইটটি সরাসরি যাবে নাকি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে বিরতি নেবে- তাও ঠিক করা হয়নি। এছাড়া ঠিক কবে নাগাদ টিকিট বিক্রি শুরু হবে, তাও স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, ২৬ মার্চ ফ্লাইটের শিডিউল ধরেই তারা সব কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন। এরপর শুরু হবে টিকিট বিক্রি।

আরও পড়ুন: ২৬ মার্চ থেকে ঢাকা-রোম ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি বিমানের

Advertisement

দীর্ঘদিন পর ফের ঢাকা-রোম ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নেওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা জানান, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন। দেশের ভ্রমণপিপাসুদেরও পছন্দের শীর্ষে ইতালির ঐতিহ্যের রোম, ভেনিস, মিলানসহ বিভিন্ন শহর। এই রুটে বিমান ফ্লাইট চালু করলে প্রবাসী, ব্যবসায়ী, ভ্রমণপিপাসুদের যাতায়াতে সুবিধা হবে।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন। দেশের ভ্রমণপিপাসুদেরও পছন্দের শীর্ষে ইতালির ঐতিহ্যের রোম, ভেনিস, মিলানসহ বিভিন্ন শহর। এই রুটে বিমান ফ্লাইট চালু করলে প্রবাসী, ব্যবসায়ী, ভ্রমণপিপাসুদের যাতায়াতে সুবিধা হবে।

এসব বিষয়ে কথা হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও শফিউল আজিমের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা–রোম সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে। এ লক্ষ্যে রোমে বিমানের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) নিয়োগ ও স্টেশন চালু করাসহ সব ধরনের কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে এই রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি চলছে। আমাদের টার্গেট থাকবে এই রুটের প্রবাসীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা।’

আরও পড়ুন: কম ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে লাভে বিমান, নাখোশ বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো

Advertisement

সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ইতালিতে নিয়মিতভাবে বসবাস করছেন এক লাখ ৫০ হাজার ৬৯২ জন বাংলাদেশি। ইতালিতে বসবাসকারী বাংলাদেশি ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন কাজে যাওয়া-আসা মিলিয়ে এই রুটে বছরে ৩ লাখের বেশি যাত্রী রয়েছে।

তবে ঢাকা থেকে ইতালির কোনো রুটে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে ট্রানজিটের মাধ্যমে যাতায়াত করেন তারা। ফলে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর মাধ্যমে দেশ থেকে চলে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এখন রোম থেকে সরাসরি বিমানের ফ্লাইট শুরু হলে তার সুফল মিলবে।

আরও পড়ুন: অনলাইন টিকিটে বিমান ভ্রমণের তারিখ পরিবর্তন করা যাবে

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানান, যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় ১৯৮১ সালের ২ এপ্রিল ঢাকা-রোম ফ্লাইট চালু করে বিমান। তখন বহরে থাকা বোয়িং–৭৭৭ ইআর উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইটটি পরিচালিত হতো। শুরু থেকেই এই রুট জনপ্রিয় হয়। বিমানও রাজস্ব লাভ করে। কিন্তু তখন বিমানের বহরে পর্যাপ্ত উড়োজাহাজ ছিল না। ফলে শিডিউল ঠিক রাখতে পারতো না সংস্থাটি।

এতে এক পর্যায়ে কমতে থাকে বিমানের যাত্রী। অনেক সময় আসন সক্ষমতার তুলনায় গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি যাত্রী মিলতো না। এভাবে অব্যাহত লোকসানের কারণে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিলে রোম রুটের সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় বিমান।

সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার দিয়ে পরিচালনার কথা ভাবছি। এ উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা থেকে ৯ ঘণ্টায় রোমে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তবে ফ্লাইটটি সরাসরি যাবে নাকি ভায়া হয়ে যাবে, তা এখনো নির্ধারণ করিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-রোম ফ্লাইটের শুরু থেকেই এই রুটে প্রচুর রাজস্ব আয় করেছিল বিমান। এভাবে টানা দুই যুগ লাভজনক ছিল রুটটি। কিন্তু পরে নানান অনিয়ম-দুর্নীতি, উড়োজাহাজ সংকটের কারণে এই রুটে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। এখন ফের এই রুটে ফ্লাইট চালু হলে সেবার মান ঠিক রাখা জরুরি। নাহলে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা যাবে না।

আরও পড়ুন: প্রতি লিটার জ্বালানিতে প্লেনের মাইলেজ কত?

ইতালির রোম শহরের টার্মিনি এলাকায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে পরিবার নিয়ে বাস করেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রফিকুল আলম। আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা-রোম ফ্লাইট চালুর সংবাদ পেয়ে মুঠোফোনে জাগো নিউজের এই প্রতিবেদককে বিমানের ফ্লাইটে ভ্রমণে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

রফিকুল আলম বলেন, ‘দুই যুগ আগে পরিবার নিয়ে বিমানের ফ্লাইটেই রোমে আসি। প্রথম দিকে প্রতিবছরই বিমানের ফ্লাইটে দেশে আসা-যাওয়া করতাম। টিকিট কেনার সময় অন্য এয়ারলাইন্সের দিকে তাকাতাম না। কিন্তু দেখলাম, দিন যত যাচ্ছে এই রুটে বিমানের সেবার মান ততই খারাপ হচ্ছে। কোনোভাবেই শিডিউল ঠিক রাখতে পারছিল না। পরে ২০০৯ সালের পর থেকে বিমানের ফ্লাইটে যাওয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এখন আবার ঢাকা-রোম ফ্লাইট চালুর খবর পেলাম। এ খবর সত্যিই আনন্দের। তবে যাত্রীসেবার মান বাড়িয়ে কীভাবে বিমানকে লাভজনক করা যায় তা সংশ্লিষ্টতের ভালো করে ভাবতে হবে।’

আরও পড়ুন: মেসির বাড়ির ওপর দিয়ে কেন উড়তে পারে না বিমান?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ২৬ মার্চ থেকে ঢাকা-রোম ফ্লাইট চালু করতে আগ্রহী। সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার দিয়ে পরিচালনার কথা ভাবছি। এ উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা থেকে ৯ ঘণ্টায় রোমে পৌঁছানো সম্ভব হবে। সেটির ওপর আমরা কাজ করছি। তবে ফ্লাইটটি সরাসরি যাবে নাকি ভায়া হয়ে যাবে, তা এখনো নির্ধারণ করিনি। যাত্রীদের জন্য যেটি ভালো হবে, তা-ই করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন বিমানের বহরে ১৬টি বোয়িং কোম্পানির উড়োজাহাজসহ মোট ২১টি এয়ারক্রাফট আছে। এছাড়া দুইটি কার্গোসহ আরও ১০টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনাও রয়েছে।’

এমএমএ/কেএসআর/এএসএম