মিয়ানমারের মাগওয়ে অঞ্চলে সামরিক জান্তাবিরোধী দুই বিদ্রোহী যোদ্ধাকে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি প্রায় তিন মাস আগে ঘটলেও জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এ নৃশংস অপরাধের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে চলমান উত্তেজনা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী। সেখানে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বয়স ২০ এর কোঠায় দুই তরুণ যোদ্ধাকে প্রথমে একটি গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাদের শরীরে আগুন ধরিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
আগুনে পোড়ানোর আগে দুই যুবককে স্বীকার করতে বাধ্য করা হয় যে, তারা স্থানীয় পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) সদস্য। সেনাবাহিনী তাদের মুখ দিয়ে স্বীকার করতে বাধ্য করে যে, তারা ‘কুকুর’। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের অনেক বেসামরিক নাগরিক সামরিক জান্তার সেনাদেরকে ‘মিলিটারি ডগস’ বলে ডাকেন।
Advertisement
যারা ওই দুই বিদ্রোহীকে পিডিএফের সদস্য বলে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের পরনে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম ছিল। অন্যরা ছিল সাদা পোশাকে। তাদেরকে ঘটনার সময় ওই দুই যুবককে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
জীবন্ত পুড়িয়ে মারার আগে ওই দুই তরুণকে তাদের নির্যাতন করা হয়েছে বলে ভিডিওতে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের গুরুতর জখম ও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। ওই তরুণদের হাতে পায়ে লোহার শিকল বেঁধে একটি গাছের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে নিজেদের কুকুর বলে সম্বোধন করতে বাধ্য করার পর ওই দুই তরুণকে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর গায়ে জ্বালানি তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে জনসম্মুখেই তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। সে সময় আনন্দিত কণ্ঠে এই অপরাধকে ‘বিজয়’ হিসেবে দাবি করেন এক সেনাসদস্য।
ইরাবতী জানিয়েছে, নিহত দুই তরুণ বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইয়াও ডিফেন্স ফোর্সের (ওয়াইডিএফ) সদস্য ছিলেন। ওয়াইডিএফের দাবি, তাদের ওই সদস্যের নাম ফো তে ও থার হাতুং।
Advertisement
২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর মিয়াউক খিন ইয়ান গ্রামে একটি অভিযানের সময় জান্তা সেনা ও পিউ সো হতি সদস্যরা তাদের আটক করে নিয়ে যান। এমনকি, ওই দুই তরুণের ফাঁসির সাক্ষী থাকার জন্য গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে একজন করে সদস্য পাঠাতে বলেছিল জান্তা বাহিনী।
ওয়াইডিএফ বলেছে, গাঙ্গাও শহরের মায়ুক খিন ইয়ান গ্রামে জান্তা সেনা ও তাদের মিত্র পিউ সো হতি মিলিশিয়া সদস্যরা এই ঘটনার জন্য দায়ী। তারা ওই গ্রামটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন সামরিক বাহিনী সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সাবেক আইনপ্রণেতা বুলেট হ্লা শয়ি।
বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালানোর জন্য কুখ্যাত এই পিউ সো হতি মিলিশিয়া। তারা গ্রামে গ্রামে গোলা নিক্ষেপ করে। গোষ্ঠীটি ২০২২ সালের মার্চে একই গ্রামের দুজনকে নির্যাতন করে হত্যা করেছিল। তাদের ভয়ে অনেকেই এই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
ওয়াইডিএফ বলেছে, সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বেসামরিক নাগরিকদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই অত্যাচার থেকে বাঁচতে হলে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। এটিই এখন একমাত্র উপায়।
সূত্র: দ্য ইরাবতী
এসএএইচ