রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বেড়েই চলেছে পানিবাহিত রোগ জন্ডিস তথা হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের প্রকোপ। গত ১৮ দিনে ১৪০ শিক্ষার্থী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের চেয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় এ বিষটি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান চিকিৎসক ডা. মো. লোমান মঞ্জুর (অপু)।
রাবির মেডিকেল সেন্টারের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে ১৫ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯১ শিক্ষার্থী জন্ডিসের পরীক্ষা করায়। এর মধ্যে ৫৩ শিক্ষার্থীর শনাক্ত হয়। তবে ১৫ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি ১৮ দিনে ৩৪০ শিক্ষার্থীর মধ্যে শনাক্ত হয় ১৪০ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল, একাডেমিক ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসে সাবমারসিবল পাম্পের সংখ্যা খুবই কম। এদিকে টিউবওয়েল ও মোটরের পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় এ রোগের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান মেডিকেল সেন্টারারের চিকিৎসকেরা।
Advertisement
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের হোটেলগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন এবং একই পানি দিয়ে একাধিক প্লেট পরিষ্কার, একটি গ্লাস দিয়ে অনেকেই পানি পান করায় ছড়াচ্ছে এসব রোগ।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল এবং একাডেমিক ভবনে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হোটেলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবারের দোকানে অভিযান চালানো দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
নাট্যকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী তাহারাত বলেন, ক্যাম্পাসের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ খাবার তৈরি হচ্ছে। একটি বোতল দিয়ে দশজন পানি খায়। এদিকে প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই। হলের টিউবওয়েলে ময়লা পানি বের হয়। যার ফলে পানিবাহিত এ রোগ ছড়াচ্ছে।
জন্ডিস পরীক্ষা করাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন চিত্ত নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, দুইদিন ধরে মাথা ব্যথা এবং অনেক জ্বর। হয়তো আমারও জন্ডিস ধরা পড়বে বলে জানান তিনি।
Advertisement
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান চিকিৎসক ডা. লোমান মঞ্জুর (অপু) বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্ডিস তথা হেপাটাইটিস এ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ প্রকোপ দেখা দিলেও ইদানীং ক্যাম্পাসে বাইরে মেসে বা ভাড়া বাসায় থাকেন এমন শিক্ষার্থীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে শিক্ষার্থীদের আগে সচেতন হতে হবে। তাদের বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। ক্যাম্পাসে হোটেল ও ক্যান্টিন মালিকদের উচিত রান্না ও খাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা।
এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ জাগো নিউজকে বলেন, যেসব শিক্ষার্থী হলের বাইরে থাকেন তাদের বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ বাইরের শিক্ষার্থীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জন্ডিস প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসের হোটেলে খাবারের গুণগত মান পরীক্ষা করতে অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।
মনির হোসেন মাহিন/এএইচ/জিকেএস