জীবন পাল
Advertisement
৬০ টাকায় ৩০ টি ডিম কেনেন বাজার থেকে। এরপর সেগুলো সিদ্ধ করে শহরের রাস্তায় রাস্তায় ভ্যানগাড়িতে করে বিক্রি করেন। ২৩ বছর আগে এভাবেই শুরু তার, যা এখনো চলছে। ২০২৪ সালে এসে এই ব্যবসার বয়স দাঁড়িয়েছে ২৪ বছরে। যদিও ৭-৮ বছর বয়সেই ছোটখাট ব্যবসার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। যেসব ব্যবসার মধ্যে রয়েছে জাম্বুরা ভর্তা, মটর, বাদাম ও আঁখ বিক্রি।
ডিম ব্যবসাটা শুরু করেছিলেন ১৫ বছর বয়সে। বর্তমানে তার বয়স ৪০ বছর। গল্পটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান রোডের পশ্চিমবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. ফরিদ মিয়ার। যিনি এই ব্যবসা করেই ২৪ বছরে নিজের আয়ের টাকায় কিনেছেন বসতভিটা, করেছেন বাড়ি।
যার জীবনযুদ্ধের শুরুটা অনেক অল্প বয়স থেকেই। বাবা আরেকটা বিয়ে করে আলাদা হয়ে নতুন সংসারে মনোযোগী হন। যে কারণে মাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়তে হয় ফরিদকে। হার না মেনে শহরের মিশন রোডে ২০০ টাকায় এক রুমের বাসা নিয়ে মাকে নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। ৭ বছর বয়সে বড় বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় মাকে নিয়েই তার পরিবার। পরিবারের হাল ধরতে শহরের শাপলাবাগ, চৌমুহনার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ডিম সিদ্ধ বিক্রি করতেন।
Advertisement
আরও পড়ুনইশারায় বিক্রি হয় পলাশের ভেলপুরি
শুরুর দিকে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করলেও পরবর্তীতে শহরের কালীঘাট রোড পয়েন্টের রাস্তার পাশে বসে স্থায়ীভাবে ব্যবসা করতে থাকেন। তখন দৈনিক ২০০-৩০০ পিস ডিম বিক্রি করতে পারতেন। নিম্নে ২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা বিক্রি হতো। লাভ থাকতো ৫০০-৬০০ টাকা। এর মধ্যে প্রায় দিনই ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত বাকি পড়ে থাকতো। প্রতি পিস ডিম সিদ্ধ বিক্রি হতো ৪ টাকায়। পাইকারি প্রতিপিস ডিম কেনা হতো ২ টাকায়। ৮ টাকায় বাজার থেকে এক হালি ডিম কিনতে পারতেন।
সেই সময় তার পরিবারের খরচ চালাতে দৈনিক খরচ হতো ১৫০-২০০ টাকা। দোকানের খরচ বাবদ দৈনিক প্রয়োজন হতো ১০০-১৫০ টাকা। যার মধ্যে রয়েছে ২ লিটার কেরোসিন, বিটলবণ, কাগজ ও তার নিজের পকেট খরচ। তখনকার সময়ে ১২-১৪ টাকায় ১ লিটার কেরোসিন তেল পাওয়া যেতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন সবকিছুর খরচ বেড়েছে। বেড়েছে পরিবারের সদস্য সংখ্যাও। এখন ফরিদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। স্ত্রীসহ ৫ সন্তানের জনক তিনি।
১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারালেও বেঁচে আছেন মা। ৪ মেয়ে ও ১ ছেলের মধ্যে ৪ জন পড়াশোনা করছে। সবচেয়ে ছোট মেয়েটি এখনও মায়ের কোলে। বর্তমানে ফরিদের পরিবারে দৈনিক খরচ ৭০০-৮০০ টাকা। ভালোমন্দ খেলে খরচের হিসাব গিয়ে দাঁড়ায় ১০০০-১২০০ টাকায়। দোকানের খরচও বেড়েছে। প্রতিদিন কেরোসিন তেল লাগে ২৪০ টাকার। বর্তমানে কেরোসিন তেলের প্রতি লিটার ১২০ টাকা। বিটলবণ, কাগজ মিলিয়ে আরও ১০০ টাকা।
Advertisement
আরও পড়ুন১০ টাকায় জোহরার মুখরোচক ছোলাবুট
তবে বাসাভাড়ার খরচটা এখন আর লাগছেনা ফরিদের। ১০ বছর ব্যবসা করার পর আয়ের টাকা দিয়ে ৩ শতক ৩৩ পয়েন্ট জায়গা কিনেছেন। আরও ৩ বছর পর ২ রুমের বাড়ি বানিয়ে মাসহ স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে শান্তিতে বসবাস করে যাচ্ছেন। নিজের কষ্টের উপার্জিত টাকায় বসতভিটা, বাড়ি করে বেজায় খুশি ফরিদ। বেঁচে থাকা অবস্থায় নিজের সন্তানের করা বাড়িতে থাকতে পেরে তার মায়ের চোখেমুখে সুখ, শান্তি আর আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। তার থেকেও বেশি আনন্দ খুঁজে পান সন্তান হয়ে বয়স্ক মাকে নিজের কষ্টের উপার্জিত টাকায় গড়ে তোলা বাড়িতে রাখার মধ্যে।
প্রতিদিন বিকাল ৫ টা থেকে রাত ১ টা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে চলে তার এ ব্যবসা। বর্তমানে খরচ বাড়লেও কমেছে বিক্রি। এখন দৈনিক ডিম সিদ্ধ বিক্রি হয় ১৫০- ২০০টি। বাজার থেকে ২০০-৩০০ ডিম কিনে আনতে হয়। বর্তমান বাজারে ১০০ পিস ডিমের পাইকারি মূল্য ১৮৫০ টাকা। আগে ডিম সিদ্ধ করে প্রতিপিস ৪ টাকায় বিক্রি করে লাভের হিসাব কষলে টিকতো দেড় টাকা। এখন প্রতিপিস ২৫ টাকায় বিক্রি করার পর ৭ টাকা লাভ হলেও খরচ মিলিয়ে নিম্নে ৩ টাকা থেকে ৩.৫০ টাকা টিকে।
ফরিদ বলেন, ‘আগে কম দামে বিক্রি হতো বেশি। লাভ কম হলেও পুষিয়ে নেওয়া যেত। এখন বিক্রি কম, দামও বেশি।
আগের ব্যবসা ভালো ছিল। আগে কাস্টমারদের সঙ্গে বেশি কথা হতো। মনের মধ্যে আনন্দ থাকতো। আগে কম হলেও ২০০ মানুষ আসতো দোকানে। এখন লাভের সংখ্যা বেড়েছে ঠিক, কিন্তু জিনিসপত্রের দামও তো বেড়েছে। সেজন্য হিসাব মিলেনা’।
আরও পড়ুন
ফেলে দেওয়া মাছের আঁশ বিক্রি করে স্বাবলম্বী তারা ফুটপাতে চা বিক্রি করতেন, এখন কফি শপের মালিককেএসকে/জিকেএস