আলতাফ পারভেজ। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বিষয়ক গবেষক। লিখছেন রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। মিয়ানমার পরিস্থিতি, বাংলাদেশে এর প্রভাব প্রভৃতি বিষয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
Advertisement
জাগো নিউজ: আপনি মিয়ানমারের ঘটনাপ্রবাহে নজর রাখছেন। নিয়মিত লিখছেন। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারকে পড়তে হবে, তা পর্যবেক্ষণে ছিল কি না?
আলতাফ পারভেজ: হ্যাঁ, আমি প্রায় নিশ্চিত ছিলাম। আমি দু’বছর ধরে নিয়মিত বলছি, মিয়ানমারে একটা অস্থিরতা তথা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠতে যাচ্ছে। আমার এই অনুমানের ভিত্তি ছিল সেখানকার বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চলে বিভিন্ন জাতির প্রতিরোধ আন্দোলনের সামগ্রিক প্রস্তুতি দেখে এবং ভূ-রাজনীতিতে এ অঞ্চলের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া দেখে।
আরও পড়ুন>> ‘আশি বছর পরে এসে ঔপনিবেশিক কাঠামোতে রাষ্ট্র চলবে না’
Advertisement
মিয়ানমারে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রবল জের বইছিল। এর মধ্যে সেখানে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল এবং নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘটনা আমার অনুমানকে গতি দেয়। মিয়ানমারের ভেতরে খোদ বামাররা তখন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করে। এখন তো প্রায় মিয়ানমারজুড়ে গৃহযুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটে গেছে বলা যায়।
তারা গৃহযুদ্ধকে একটা উচ্চতায় এরই মধ্যে নিয়ে গেছে। তারা শিগগির বিজয়ী না হলেও মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংগ্রাম আরও বেগবান হবে এবং বিভিন্ন জাতি একটা ফেডারেল শাসনব্যবস্থার ভেতর দিয়ে তাদের ঐক্যের জমিন খুঁজে নিতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
জাগো নিউজ: অনেকেই বলছেন মিয়ানমার ভেঙে পড়ছে। আদৌ কি তাই? নাকি দেশটি জান্তা শাসনের পতন ঘটতে যাচ্ছে?
আলতাফ পারভেজ: দেশটি আসলে বিভক্তই। হয়তো ভৌগোলিকভাবে নয়, জাতিগতভাবে তো অবশ্যই। সেখানে অধিকাংশ প্রদেশে প্রবল ধাঁচের গেরিলা শাসন আছে। এসব প্রদেশে আলাদা সংস্কৃতি, আলাদা নেতৃত্ব। তবে ভৌগোলিকভাবে দেশটি দ্রুত ভেঙে পড়বে কি না সেটা এখনই বলা যায় না। যদিও তার প্রবল সম্ভাবনা আছে। বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এখনই কেন্দ্রীয় মিয়ানমার ও প্রান্তিক মিয়ানমারের মধ্যে আর্থ-সামাজিক দূরত্ব অনেক। গৃহযুদ্ধ সেই দূরত্ব ক্রমেই বাড়াচ্ছে।
Advertisement
আরও পড়ুন>> ‘মিয়ানমার বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যাপকভিত্তিক নীতি-কৌশল দরকার’
মিয়ানমারের প্রধান জাতি বামাররা সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ বিভেদ, দূরত্ব আরও বাড়বে। গৃহযুদ্ধ বর্তমানে যে চেহারা নিচ্ছে তাতে সেনাবাহিনী দুর্বল হওয়ার মাধ্যমেও দেশটি বিভক্ত হতে পারে। অর্থাৎ তখন আঞ্চলিক জাতিগুলো একসঙ্গে বসে একটা সমাধানে আসতে না পারলেও বিভক্তির ঝুঁকি থাকবে।
জাগো নিউজ: মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ কী দেখছেন?
আলতাফ পারভেজ: আমি ইতিবাচক এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি। মিয়ানমারের যে প্রজন্ম এখন প্রতিরোধ সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা অনেক পরিণত, সাহসী, রাজনীতি সচেতন। তারা গৃহযুদ্ধকে একটা উচ্চতায় এরই মধ্যে নিয়ে গেছে। তারা শিগগির বিজয়ী না হলেও মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংগ্রাম আরও বেগবান হবে এবং বিভিন্ন জাতি একটা ফেডারেল শাসনব্যবস্থার ভেতর দিয়ে তাদের ঐক্যের জমিন খুঁজে নিতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
জাগো নিউজ: আরাকান আর্মি কী চায়?
আরও পড়ুন>> ‘রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের চীননির্ভরতার বদল দরকার’
আলতাফ পারভেজ: তারা তাত্ত্বিকভাবে আরাকানের হারানো স্বাধীনতা ফিরে চায়। তবে আপাতত তাদের স্বায়ত্তশাসনই চাওয়া। আরও কমিয়ে বললে এ মুহূর্তে তারা আরাকানজুড়ে সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। ফলে তারা আরাকানের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।
তারা তাত্ত্বিকভাবে আরাকানের হারানো স্বাধীনতা ফিরে চায়। তবে আপাতত তাদের স্বায়ত্তশাসনই চাওয়া। আরও কমিয়ে বললে এ মুহূর্তে তারা আরাকানজুড়ে সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। ফলে তারা আরাকানের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।
জাগো নিউজ: অং সান সুচির ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে?
আলতাফ পারভেজ: ওনার ভূমিকা এখন প্রতীকী মাত্র। চলতি গৃহযুদ্ধ উনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন না। এরই মধ্যে দেশটিতে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রথম দিকে ওনাকে কারাবন্দি করে পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে ভুল করেছে। এখন হয়তো তার সঙ্গে তারা সমঝোতায়ও আসতে চাইতে পারে। তবে তার খুব বেশি আর সুযোগ নেই। কারণ পরিস্থিতি অনেক দূরে এগিয়ে গেছে।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে কি না?
আলতাফ পারভেজ: উদ্বেগ নিশ্চয়ই বেড়েছে। যেহেতু নতুন করে আশ্রয়প্রার্থী মানুষ আসছে। গুলিতে মানুষ মরছেও। এরকম ঘটনা আগামীতে আরও ঘটতে পারে। তাছাড়া অঞ্চলজুড়ে আরও অস্থিতিশীলতা বাড়লে বাংলাদেশের জন্য আরও ঝামেলা বাড়তে পারে। দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেশীর বাড়িতে আগুন লাগলে কে আর শান্তিতে থাকতে ঘুমাতে পারে?
এএএস/এএসএ/এমএস