দেশজুড়ে

ফুটপাত ভাড়া দিয়ে মাসে অর্ধকোটি টাকা চাঁদা তুলছেন ‘নেতারা’

রাজশাহীর রেলগেটে ফুটপাত দখল করে স্থানীয় নেতারা মাসে চাঁদা তুলছেন অর্ধকোটি টাকারও বেশি। এই ফুটপাতে রয়েছে অর্ধশতাধিক দোকান। দোকানের আকার অনুসারে দৈনিক চাঁদা দিতে হয় ৪ থেকে ৬০০ টাকা।

Advertisement

পুলিশ বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সিটি করপোরেশন বলছে, এখন থেকে প্রতি মাসে চলবে তাদের অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর রেলগেট থেকে শালবাগান ফুটপাতে সারি সারি দোকান। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি ফুটপাত। পুরো ফুটপাত জুড়ে রয়েছে অর্ধশতাধিক অবৈধ দোকান। প্রতিটি দোকান থেকে আকারভেদে চার থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলেন স্থানীয় নেতারা। ফলে এই সড়ক থেকেই মাসে গড়ে অন্তত ৬০ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এখানে ব্যবসা করতে প্রশাসন থেকে কেউ বাধা দেয় না বলছেন অবৈধ দখলদার ব্যবসায়ীরা।

নাম না প্রকাশ করে এক ফল বিক্রেতা বলেন, এখানে আমি এক বছর ধরে আছি। আমার এক ভাই ব্যবসা করতো, এরপর আমাকে দিয়েছে। আমি প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে দিয়ে এখানে ব্যবসা করি। তবে কাকে টাকা দেন সেটা তিনি জানাননি।

Advertisement

তার পাশেই বসে ছিলেন আরেক বেকারির দোকানি। তিনিও বলেন, আমি এখানে বহুদিন ধরে ব্যবসা করি। আমার পাশে এখানে মোটর ডিপার্টমেন্টের সভাপতির পাখির দোকান রয়েছে। এখানে কেউ ডিস্টার্ব করে না। আমরা লোকাল ছেলেপেলে। আমাদের কর্ম না থাকার কারণে ফুটপাতে বসে ব্যবসা করছি। ১০-১২ বছর ধরে ব্যবসা করছি। সিটি করপোরেশনের জায়গা, তাই ভাড়া দেওয়া লাগে না।

পুরো ফুটপাতজুড়ে যখন অবৈধ দখলদার, তখন বাধ্য হয়েই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন সাধারণ যাত্রীরা। বেসরকারি একটি স্কুলের শিক্ষক সিরাজুম মনির বলেন, ফুটপাত দখল হয়ে গেছে, যার কারণে আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। কর্তৃপক্ষকে একটি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। দোকানপাট আর বাসের কাউন্টারে ফুটপাত ভরে গেছে। ফলে ফুটপাত দিয়ে হাঁটা সম্ভব হয় না। বিধায় আমরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করছি।

এদিকে ফুটপাত যখন অবৈধ দখলে, তখন পাশের রাস্তা দখলে রেখেছেন হিউম্যান হলার এবং সিএনজি মালিকরা। নম্বরবিহীন এই যানবাহন পুলিশের সামনেই চলাচল করছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, চাঁদাবাজির সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আর সিটি করপোরেশন বলছে, দ্রুত অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে অবৈধ দখলদারদের।

Advertisement

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) অনির্বাণ চাকমা বলেন, নম্বরপ্লেট বিহীন যে গাড়িগুলো সামনে পড়ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মামলার সংখ্যা নেহাত কম নয়, অনেক। কেউ সুবিধা নিচ্ছে এই ধরনের অভিযোগ আমার কানে আসেনি। যদি আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য বা ট্রাফিক সদস্য এর সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর ইসলাম তুষার বলেন, আমরা উচ্ছেদ করেছি, আবার দখল হয়ে গেছে। তবে এবার তা সম্ভব না। কারণ আমরা নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছি। আমরা আশা করি এবার এটি কন্টিনিউয়াস চলবে। প্রতি মাসে এই উচ্ছেদ অভিযান চালাবো।

তিনি জানান, চলতি প্রকল্পে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ফুটপাতে সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যয় করেছে অন্তত ২ কোটি টাকা। আর এটি ধরে রাখতে চাই। তাই অভিযান অব্যাহত রাখবো।

এফএ/জেআইএম