বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক স্পাইওয়্যারের অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক গ্রেডের স্পাইওয়্যারের বিস্তার রোধে এই প্রথম এত বড় পদক্ষেপ নিলো বাইডেন প্রশাসন। ধারণা করা হচ্ছে, এই পদক্ষেপের ফলে ভারত ও ইসরায়েলের মতো মার্কিন মিত্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
Advertisement
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে স্পাইওয়্যারের বিরুদ্ধে এই কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, যেসব দেশ স্পাইওয়্যারের অব্যবহার করে নাগরিকদের নির্বিচারে আটক, জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় জড়িত- সেসব দেশের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন: অ্যামনেস্টির অভিযোগ: ইসরায়েলি প্রযুক্তি দিয়ে সাংবাদিকদের নজরদারি করছে ভারত
বিবৃতি আরও বলা হয়, বিশেষ করে, যারা স্পাইওয়্যার প্রযুক্তি ব্যবহার করে দমনপীড়ন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ সীমিত করেছে, ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত, বাণিজ্যিক স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে নাগরিকদের গোপনীয়তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশসহ ভিন্ন মতের মানুষদের হুমকির মুখে ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
Advertisement
বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন বলেন, যারা বাণিজ্যিক স্পাইওয়্যারের অপব্যবহার করে সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, ভিন্নমতাবলম্বী ও অন্যান্যদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে নির্বিচারে আটক, হয়রানি ও বেআইনিভাবে নজরদারি করছে, দমন বা ভয় দেখানোর মতো ঘটনায় জড়িত, সেসব ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের নিকটবর্তী সদস্যরা এই ভিসানীতির আওতায় পড়বে ও তাদের উপরে তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে।
আরও পড়ুন: পশ্চিম তীরের সহিংসতাকারীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিদেন থেকে জানা গেছে, অভিযোগ রয়েছে, এসব স্পাইওয়্যারের অপব্যবহারে যুক্ত রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এসব দেশের সরকার শত শত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দী, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের বিরুদ্ধে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। আর স্পাইওয়্যারের এমন ব্যবহারকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স সক্ষমতার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছে বাইডেন প্রশাসন।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, প্রায় তিন বছর আগে পেগাসাস স্পাইওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে নিজস্ব বাণিজ্যিক স্পাইওয়্যার ব্যবহারও নিষিদ্ধ করে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিল মার্কিন সরকার। বাণিজ্যিক স্পাইওয়্যার তৈরিতে বিশ্বে সবার শীর্ষে রয়েছে ইসরায়েল। ফলে মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এমন কঠোর অবস্থান দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে।
Advertisement
আরও পড়ুন: ফের নির্বাচিত হলে মুসলিমদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেবেন ট্রাম্প
স্পাইওয়্যার মূলত এমন একটি সফটওয়্যার, যা ব্যবহার করে যে কারও ফোনের ম্যাসেজ, কল লিস্ট, ইমেইল, ছবি ও অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব। এমনকি, এটি ব্যবহার করে যে কার ছবিও তোলা যায়। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকার ইসরায়েলর কাছ থেকে এ সফটওয়্যার কিনে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে।
গত বছরের শেষদিকে ভারতের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা এনএসও’র তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে শীর্ষ সাংবাদিকদের টার্গেট করার অভিযোগ তুলেছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। তাদের যৌথ তদন্তে এ সংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণও উঠে এসেছিল।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এসএএইচ