জাতীয়

খেলার মাঠ-পার্কের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা জরুরি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ন্যূনতম ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা থাকা প্রয়োজন। সেখানে ঢাকা শহরের মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ খেলাধূলার পরিষেবার মধ্যে বাস করেন। দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতেও আছে খেলার মাঠের তীব্র সংকট। সাম্প্রতিক সময়ে নগর এলাকার মাঠ-পার্ক উন্নয়নে গৃহীত উদ্যোগসমূহ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু উন্নয়নকৃত মাঠগুলোতে প্রবেশগম্যতা ও অন্তর্ভুক্তিতার অভাবে এলাকাবাসী খেলাধূলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি নীতিমালা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে মাঠ-পার্কের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে।

Advertisement

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইপিডি পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান এবং বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড.শায়ের গফুর, এবং আইপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম।

এসময় ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বর্তমানে মাঠগুলোতে খেলার সুযোগ সংকীর্ণ হয়ে আসছে। বিদ্যালয়গুলোতেও খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। ফলে কিশোর গ্যাং ও মাদকের প্রকোপ বাড়ছে। সিটি করপোরেশনের আওতায় বিভিন্ন মাঠ উন্নয়ন করা হলেও শর্তাবলি জুড়ে দেওয়ায় বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রবেশের সুযোগ হারিয়ে গেছে। এ অবস্থায় নগর এলাকায় ওয়ার্ডভিত্তিক মেয়েদের খেলার সুযোগ রেখে পরিকল্পনামাফিক খেলার মাঠ তৈরি এবং এলাকাভিত্তিক চাহিদা বিবেচনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এজন্য খেলার মাঠ-পার্ক-গণপরিসর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা গ্রহণ করা আবশ্যক।

Advertisement

অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, গবেষণা অনুযায়ী ঢাকায় ২৩৫টি খেলার মাঠ থাকলেও এর মধ্যে ১৪১টি প্রাতিষ্ঠানিক মাঠ। বিদ্যমান মাঠগুলোতে শিশু-কিশোরদের অবাধ প্রবেশ নেই। অথচ মহানগরী, বিভাগীয় এবং জেলা শহরসহ দেশের সব শহরাঞ্চলের খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুযায়ী, মাস্টারপ্ল্যানে মাঠ-উদ্যান বা জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত থাকলে কোনো অবস্থাতেই এর চরিত্র পরিবর্তন করা যাবে না।

বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. শায়ের গফুর বলেন, খেলার মাঠ রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত জরুরি। খেলার মাঠ সংকুচিত হয়ে যাওয়ার পিছনে ক্ষমতার অপব্যবহার দায়ী। খেলার মাঠ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে শিশু-কিশোররা বড় অংশীদার। তাদের মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। খেলার মাঠ জনগণের একটি নাগরিক চাহিদা। নগরে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া যায় তাহলে এই নাগরিক চাহিদা পূরণে বরাদ্দ দেওয়া অসম্ভব কেন?

আইপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ১০ হাজার ৭৪০টি স্কুলে কোনো খেলার মাঠ নেই। তাহলে শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরি ও মানসিক বিকাশ কীভাবে হবে? এজন্য মাদকের ব্যবহার ও অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। আপদকালীন সময়ে, যেমন- অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্পের সময় মানুষের আশ্রয় নেওয়ার কোনো জায়গা থাকছে না। বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় মাঠ ছাড়া কোনো স্কুলের অনুমোদন না দেওয়া, কতটুকু দূরে দূরে মাঠ তৈরির চাহিদা রয়েছে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

এসময় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন সমাজকর্মী এবং তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিইং বাংলাদেশের পলিসি অফিসার তালুকদার রিফাত পাশা, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনির, শিশুদের মুক্ত বায়ুসেবন সংস্থার সদস্য মো. সেলিম, ডিডিপির সভাপতি জাকির হোসেন, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহাজ্জোত হোসেন, ধানমন্ডি কচিকণ্ঠ হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এইচএম নুরুল ইসলামসহ আরও অনেকে। আরএএস/এসআইটি/এএসএম

Advertisement