হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা। বহু গুণে গুণান্বিত হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বহু মানবিক গুণেরও অধিকারী। তার সেই সরল হৃদয় ও মানবিক গুণের নানা দিক তুলে ধরতে ‘আমার হুমায়ূন স্যার’ বই লিখেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ডা. এজাজ।
Advertisement
স্মৃতিচারণামূলক এ বইটিতে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে নিজের কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো সাবলীল ভঙ্গিতে বর্ণনা করেছেন। বইটি প্রকাশ করেছে সময় প্রকাশন। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় বইমেলায় সময় প্রকাশনের স্টলে হাজির ডা. এজাজ। নিজ হাতে অটোগ্রাফসহ পাঠকদের হাতে বই তুলে দিচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি ভক্ত-অনুরাগীদের নানা আবদার মেটাতেও ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় এ অভিনেতাকে।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা বইগুলো এখনো তুমুল জনপ্রিয়। তার মধ্যেই তাকে নিয়ে নিজেই বই লিখে ফেললেন। কোনো দায়বোধের জায়গা থেকে কি না—এমন প্রশ্নে ডা. এজাজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘হ্যাঁ, স্যারকে সবাই চেনেন। তার উপন্যাস সম্পর্কে সবাই জানেন, নাটক-চলচ্চিত্র সম্পর্কে জানেন। মানুষ হুমায়ূন আহমেদ, তার যে মানবিক কাজগুলো, মানবিক হৃদয়, মানুষকে উপকার করার তাড়না; সেসবের প্রায় সব কাজে আমি সাক্ষী।’
তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সঙ্গে আমার অনেক দিনের পথচলা। এক যুগেরও অনেক বেশি। একদম সঠিক হিসাবটাও করতে পারি না। যখন কাজ করার উদ্যম, স্পৃহা বেশি ছিল; তখনকার পুরো সময়টা আমি স্যারের সঙ্গে কাটিয়েছি। তার কাজে সমর্থন করে গেছি। স্যারের যে ভালো ভালো কতগুণ, কতদিক। একজন মানুষ হিসেবে স্যার যে কতটা ওপরে, সেই খবরটা অনেকে রাখেননি, অনেকে জানেনও না। আমার মনে হলো—এগুলো মানুষ জানবে না? আমি হয়তো ওতো সুন্দর করে লিখতে পারবো না। তবে এটা আমার জানানো দায়িত্ব।’
Advertisement
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করে ডা. এজাজ বলেন, ‘কনকনে শীতের রাত। কোথায় কোথায় মানুষ ঘুমিয়ে আছে, আস্তে করে গিয়ে গায়ের ওপর কম্বলটা জড়িয়ে দিয়ে আসতেন স্যার। কাউকে দেখানোর জন্য না। একটা কম্বল দেবো চারটি ক্যামেরা হাজির করবো—তেমনটা না। সেই প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলে ক্যাম্প করে রোগী দেখেছি। এখন তো রোগী দেখার চেয়ে শো-অফ বেশি। লোক দেখানোর প্রবৃত্তি। কিন্তু উনি যেসব মানবিক কাজ করেছেন, সেগুলো ছিল পুরোটাই হৃদয় থেকে। এ বিষয়গুলো মানুষ জানে না। সেটা জানলে অনেকে স্যারের জন্য দোয়া করবেন, প্রার্থনা করবেন।’
হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে জীবনের প্রথম মোবাইল ফোন উপহার পেয়েছিলেন বলে বইয়ে উল্লেখ করেছেন ডা. এজাজ। মোবাইলটি এখন কোথায় আছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে যখন ওটা (মোবাইল) নষ্ট হতে শুরু করলো। আমি মেরামত করে ব্যবহার করতাম। যখন একেবারেই আর মেরামত করা গেলো না, তখন আমি সংরক্ষণ করে রেখেছিলাম। কিন্তু সংসার তো স্ত্রীর হাতে। সে বাসা সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখে। কোন জিনিস কখন, কোথায় যায় বলা মুশকিল। একসময় খুঁজে দেখি মোবাইলটা আরা নেই। ওই মোবাইলটা এখনো মিস করি।’
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে অনেক স্মৃতি। ১৬০ পৃষ্ঠার ‘আমরা হুমায়ূন স্যার’ বইয়ে নিশ্চয়ই তুলে আনা সম্ভব হয়নি। স্মৃতিগুলো নিয়ে আরও লেখার ইচ্ছা আছে কি না, এমন প্রশ্নে ডা. এজাজ বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি লিখে যাবো। স্যারকে নিয়ে বছরে অন্তত একটা করে বই লিখবো। স্যারের সুন্দর সুন্দর স্মৃতিগুলো নিয়ে কাজ করবো। মানুষকে জানাতে লিখবো, চেষ্টা করে যাবো।’
সময় প্রকাশনের কর্মী মহিউদ্দিন বলেন, ‘ডা. এজাজের লেখা আমার হুমায়ূন স্যার বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। মানুষ এসে বইটি চেয়ে নিয়ে দেখছে এবং কিনছেও। প্রথম পাঁচদিনে ভালো বিক্রি হয়েছে। আশা করা যায়, বিক্রিটা আরও বাড়বে।’
Advertisement
এএএইচ/জেডএইচ/