* দেশব্যাপী ৪৯৫টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২৫টি সমাপ্ত।* দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৮৬টির মধ্যে ২৫টি উদ্বোধন, কাজ চলমান ৪১টির।* তৃতীয় ধাপে ১২৬ স্টেডিয়ামের প্রকল্প তৈরি।* শেষ ধাপে স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে ২৮ উপজেলায়।* বিশেষ প্রকল্পের স্টেডিয়াম নির্মাণ হয়েছে ৯ উপজেলায়, দুটিতে হবে পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম।
Advertisement
চলো খেলতে যাই- সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিমে হেলে পড়লেই কিশোর-তরুণদের মধ্যে কাজ করে খেলতে যাওয়ার তাড়না; কিন্তু খেলবে কোথায়? মাঠ নেই, নেই উন্মুক্ত জায়গা। কিশোররা সারাদিন ইট-পাথরের দেওয়ালেই বন্দি। খেলার সুযোগ না পেয়ে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছেন মাদক, সন্ত্রাসসহ আরও কিছু অপকর্মে।
তরুণদের মাদকের পথ থেকে ফিরিয়ে খেলার মাঠে আনার চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি উপজেলায় উন্মুক্ত মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প তৈরি করে তা ৪ ধাপে বাস্তবায়ন করছে।
Advertisement
এরই মধ্যে প্রথম ধাপের ১২৫টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ শেষ হয়েছে। চলছে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ। দ্বিতীয় ধাপের ২৫ স্টেডিয়াম এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে।
দেশের ৮ বিভাগের ৬৪ জেলার ৪৯৫টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ছিল ১৩১টি। দেশব্যাপী এই স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণের পর ২০১৫ সালে ৭ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কিছু শর্ত সাপেক্ষে তা অনুমোদিত হয়েছিল। এরপরই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের পত্র দিয়ে প্রতিটি উপজেলায় স্টেডিয়ামের জন্য স্থান নির্বাচন করতে বলা হয়।
জেলা প্রশাসকদের প্রেরণ করা স্থানের তালিকা থেকে প্রকল্পের প্রথম ধাপের জন্য ১৩১টি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও পরে ৬ উপজেলায় জায়গা পাওয়া যায়নি।
যে কারণে রংপুর বিভাগের ৫৮ উপজেলার মধ্যে ২০টি, রাজশাহী বিভাগের ৬৭ উপজেলার মধ্যে ১১টি, খুলনা বিভাগের ৫৯ উপজেলার মধ্যে ১৭টি, বরিশাল বিভাগের ৪২ উপজেলার মধ্যে ১০টি, ময়মনসিংহ বিভাগের ৩৫ উপজেলার মধ্যে ১৬টি, ঢাকা বিভাগের ৮৯ উপজেলার ২৭টি, সিলেট বিভাগের ৪১ উপজেলার ৮টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ১০৪ উপজেলার মধ্যে ১৬টিতে (মোট ১২৫ উপজেলায়) শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম ধাপ শেষ হয় ২০১৯ সালের জুনে। প্রকল্পের প্রথম ধাপের ১২৫টি স্টেডিয়াম নির্মাণের ব্যয় ছিল ৭৭ কোটি টাকা।
Advertisement
প্রথম ধাপে নির্মিত স্টেডিয়ামগুলোয় ছিল এক তলা বিল্ডিং এবং উন্মুক্ত মাঠ। কোনো গ্যালারি ছিল না। বিল্ডিংয়ে দুটি ড্রেসিং রুম, অফিস রুম, নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদাভাবে ৩টি করে মোট ৬ টি টয়লেট, বিল্ডিংয়ের সামনে ৩৫টি আরসিসি বেঞ্চ। এক তলা বিল্ডিং হওয়াতে তখন বাজেটও কম ছিল। গড়ে প্রতিটি স্টেডিয়ামের নির্মাণ ব্যয় ছিল ৫২ লাখ টাকা।
প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণ করা হবে ১৮৬টি মিনি স্টেডিয়াম। দ্বিতীয় ধাপের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৪৯ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণ বাবদ আছে ৪০০ কোটি টাকা। প্রথম ধাপে তৈরি করা প্রতিটি স্টেডিয়ামের ব্যয় ছিল ৫২ লাখ টাকার মতো। সেখানে দ্বিতীয় ধাপের প্রতিটি স্টেডিয়ামের ব্যয় ৬ কোটি টাকারও বেশি।
দ্বিতীয় ধাপের নির্মাণাধীন স্টেডিয়ামগুলোর বিল্ডিং ৩তলা। আগেরগুলোতে গ্যালারি ছিল না। দ্বিতীয় ধাপের স্টেডিয়ামে ৩০০ ফুট করে থাকছে উন্মুক্ত গ্যালারি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহা বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর গাইডলাইন অনুযায়ীই দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্প আরও উন্নতভাবে করা হচ্ছে। এখানে তিনতলা বিল্ডিং হওয়াতে দুর্যোগের সময় প্রয়োজন হলে কিছু মানুষ আশ্রয়ও নিতে পারবে। নিচে খালি থাকলে সেখানেও দুর্যোগে মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। টপফ্লোরে ভিআইপিদের বসার ব্যবস্থা থাকবে। ’
পুরো প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে স্টেডিয়াম নির্মাণ হবে ৩১১টি। দ্বিতীয় ধাপের ১৮৬ টি স্টেডিয়ামের মধ্যে কাজ চলমান ছিল ৬৬টির। এর মধ্যে ২৫টির কাজ বেশিরভাগ শেষ হয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে উদ্বোধন হয়ে গেছে।
প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৬ উপজেলা। এ ধাপে স্টেডিয়াম নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের জন্য বাজেট করা হয়েছে ৭৮৬ কোটি টাকা। আর ১৯টি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য সরকারের খাস জমির জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করে রেখেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তৃতীয় ধাপের নির্মাণ কাজ শেষ হলে চতুর্থ ধাপের জন্য বাকি থাকবে ২৮ উপজেলা।
বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে ১১টি উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এর মধ্যে ৯টির নির্মাণ শেষ। এ উপজেলাগুলো হচ্ছে- দিনাজপুরর পার্বতীপুর, বগুড়ার আমদীঘি, চাপাইনবাগঞ্জের শিবপুর, নাটোরের লালপুর, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, ফরিদপুরের ভাংগা, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, নোয়াখালীর সেনবাগ ও বেগমগঞ্জ। গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া ও কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায় আরও দুটি পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম নির্মাণ করবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
স্টেডিয়ামগুলোয় কি কি সুযোগ-সুবিধা থাকবে তা প্রকল্প পরিকল্পনায় নির্ধারণ করা থাকলেও সব জায়গায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রথম পর্বে নির্মাণ হওয়া ১২৫ স্টেডিয়ামের মধ্যে ৮ বিভাগের ৮ টি উপজেলা স্টেডিয়ামের খোঁজ নিলে সে চিত্রই ফুটে উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকদের বক্তব্য অনুযায়ী বিভিন্ন স্টেডিয়ামে বিভিন্ন নির্মাণ ত্রুটি রয়েছে। প্রথম ধাপের নির্মিত স্টেডিয়ামগুলোর একতলা বিল্ডিংয়ে ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা ডেসিংরুম, আলাদা তিনটি করে টয়লেট, ভবনের সামনে ৩৫টি আরসিসি বেঞ্চ নির্মাণের কথা থাকলেও কিছু স্টেডিয়ামে এর ব্যত্যয় ঘটেছে, যা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের বক্তব্যে পাওয়া গেছে।
তবে সবচেয়ে যে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠকরা বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তা হলো রক্ষণাবেক্ষণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোনো বরাদ্দ না থাকা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলার ক্রীড়া সংগঠকরা মিলে যেভাবে পারছেন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছেন। তবে তা নিয়মিত পারছে না অনেক উপজেলা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে তারা বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণ যে বরাদ্দ পায় তা দিয়ে রুটিন কাজ করতেই হিমশিম খেতে হয়। বাড়তি বোঝা হিসেবে যোগ হয়েছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের পেছনে খরচ।
প্রথম ধাপে যে ১২৫ উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ হয়েছে
রংপুর বিভাগ
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী, রাণীশংকৈল, দিনাজপুর জেলা বোচাগঞ্জ, সদর, খানসামা, চিরিরবন্দর, বিরামপুর, নীলফামারী জেলার ডোমার, সদর, জলঢাকা, সৈয়দপুর, লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, রংপুর জেলার গংগাচড়া, তারাগঞ্জ, সদর, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর, চর রাজিবপুর, গাইবান্ধা জেলার সদর, সাঘাটা।
রাজশাহী বিভাগ
জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি, বগুড়া জেলার সোনাতলা, নওগাঁ জেলার পত্নীতলা, ধামইরহাট, বদলগাছী, মহাদেবপুর, রাজশাহী জেলার তানোর, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর, উল্লাপাড়া, পাবনা জেলার সদর, ঈশ্বরদী।
খুলনা বিভাগ
কুষ্টিয়া জেলার সদর, ভেড়ামারা, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা, জীবনগর,ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ, যশোর জেলার শর্শা, কেশবপুর, মাগুড়া জেলার শ্রীপুর, শালিখা, মহম্মদপুর, সদর, নড়াইল জেলার কালিয়া, সদর, লোহাগড়া, বাগেরহাট জেলার মোংলা, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া, সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি।
বরিশাল বিভাগ
বরগুনা জেলার সদর, পাথরঘাটা, পটুয়াখালী জেলার বাউফল, গলাচিপা, ভোলা জেলার লালমোহন, চরফ্যাশন, ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া, সদর, পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া, নাজিরপুর।
ময়মনসিংহ বিভাগ
জামালপুর জেলার মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, শেরপুর জেলার নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, সদর, বারহাট্টা, আটপাড়া, মোহনগঞ্জ, পূর্বধলা।
ঢাকা বিভাগ
টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর, ভুয়াপুর, ঘাটাইল, দেলদুয়ার, নাগরপুর, মির্জাপুর, কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী, বাজিতপুর, মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর, হরিরামপুর, সদর, সাটুরিয়া, মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া, ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর, কাপাসিয়া, রাজবাড়ী জেলার সদর, বালিয়াকান্দি, ফরিদপুর জেলার সদর, গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর, কাশিয়ানী, সদর, মাদারীপুর জেলার শিবচর, রাজৈর, সদর, কালকিনী।
সিলেট বিভাগ
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, ছাতক, সিলেট জেলার সদর, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, সদর, বানিয়াচং।
চট্টগ্রাম বিভাগ
ব্রাম্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর, সরাইল, বিজয়ানগর, নবীনগর, কুমিল্লা জেলার হোমনা, মুরাদনগর, চান্দিনা, নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, ঈদগা, রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই, লংগদু, সদর।
আরআই/আইএইচএস/