গত ১৫ বছরের বেশি সময় সাংগঠনিক ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি। দলে রয়েছে নানান ত্রুটি-বিচ্যুতি। ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়েও হতাশ নেতাকর্মীদের একাংশ। বিএনপি পুনর্গঠনে ‘অতিমূল্যায়ন’ আর ‘অবমূল্যায়ন’ নিয়ে আছে জটিলতা। চেয়ারপারসন অসুস্থ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে। স্থায়ী কমিটিতে নেই ‘ধার-ভার’ থাকা নেতা। অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটি-নেতৃত্ব নিয়েও আছে অসন্তোষ। সব মিলিয়ে অনেকটা নড়বড়ে অবস্থা বিএনপির। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যর্থতা সেটা আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত করেছে।
Advertisement
বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। দলীয় পদ-পদবি হারানো শঙ্কায় তারা নাম প্রকাশ করতে চান না। দায়িত্বশীল বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বিষয়গুলো পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন। তবে সরকারের ভিন্নমত ও দমন নীতির কারণে তাদের সাংগঠনিক সমস্যা হলেও নেতৃত্ব নিয়ে কোনো সংকট নেই বলে মনে করেন অনেক নেতা।
দলীয় সূত্র জানায়, দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল থেকেই সংগঠনের ভঙ্গুর অবস্থা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কিছু পদ শূন্য রেখেই চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ মাসে সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তিন বছর পর কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও এখনো তা হয়নি। শুধু তাই নয়, সেসব শূন্যপদের অনেক পদ পূরণ হয়নি। আবার কিছু পদে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ।
চেয়ারপারসন-ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
Advertisement
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ সবশেষ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেওয়া হয়। পরবর্তীসময়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া বন্দি হওয়ার পর গঠনতন্ত্র মোতাবেক দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়।
‘ধার-ভার’ নেই স্থায়ী কমিটির
ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে কমিটি ঘোষণার সময়ই ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির দুটি খালি ফাঁকা ছিল। বাকি ১৭ সদস্যের মধ্যে তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার ও মওদুদ আহমদ মারা গেছেন। লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান পদত্যাগপত্র জমা দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। তিনিও পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর দলে সক্রিয় হননি। বর্তমানে বার্ধক্যে ভুগছেন। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার কারণে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অসুস্থ। সালাহউদ্দিন আহমেদ কমিটি ঘোষণার আগে থেকেই ভারতের শিলংয়ে আছেন। দীর্ঘদিন তিনি দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারলেও সম্প্রতি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত হন এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতারের পর কার্যত ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আরও পড়ুন>> আরও একটি ঈদ গেলো, বিএনপির আন্দোলন কতদূর
Advertisement
ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর স্থায়ী কমিটিতে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নিযুক্ত করা হয়। এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, এম মোরশেদ খান, প্রয়াত শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনদের মতো নেতারা স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পেলে স্থায়ী কমিটি আরও সমৃদ্ধ হতো বলে মত নেতাদের।
এই সমাজ থেকেই তো রাজনীতিবিদের জন্ম হয়। ছাত্ররাজনীতি থেকে কয়জন ছাত্রনেতা জাতীয় পর্যায়ে এসেছে। পদ পেলেই তো নেতা হওয়া যায় না। মন্ত্রী-এমপি হলেই তো নেতা হওয়া যায় না। নেতা হতে বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকা লাগে। সেদিক থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্বে ভাটা পড়েছে। রাজনীতি না করেও অনেকে মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন। অন্যদিকে রাজনীতি করতে করতে ওপরে উঠেছে এরকম নেতার এখন সংকট।- গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
স্থায়ী কমিটির নজরুল ইসলাম খান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বর্তমানে স্থায়ী কমিটিতে সেভাবে ভোকাল কেউ নেই। তবে মির্জা ফখরুলের গ্রেফতারের পর থেকে আব্দুল মঈন খান বেশ সরব। বেগম সেলিমা রহমানও কথা বলছেন। এছাড়া জিয়াউর রহমান বা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতাদের ব্যক্তিত্বের যে আকর্ষণ ছিল বর্তমানে সেটা দলের সব পর্যায়ে নেতৃত্বের ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে।
মহাসচিব পদে দায়িত্ব-কর্তব্যের ‘সংঘাত’
২০১১ সালে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেন। এরপর ২০১৬ সালের মার্চে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মির্জা ফখরুলকে ভারমুক্ত করা হয়নি। কাউন্সিলের কয়েকদিন পর পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হন মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হলেও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন সময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
একদিকে স্থায়ী কমিটিতে সমমনা নেতার সংকট অন্যদিকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে মূল দায়িত্ব অন্য দুজন পালন করায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভা-সমাবেশে বক্তব্য আর গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েই তার মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মূল ভূমিকায় মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দায়িত্ব পালন না করতে পারায় দল সাংগঠনিকভাবে ভীষণ রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ও দ্বিতীয় সাংগঠনিক পদ ঘিরে যে পরিস্থিতি তার প্রভাব দলের সর্বত্র পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন অতিমূল্যায়ন হয়েছে তেমনি অবমূল্যায়ন করা হয়েছে নেতাদের। অতি মূল্যায়িতদের কেউ আবার একাধিক পদ আঁকড়ে আছেন।
‘অতিমূল্যায়িত’ অনেক নেতা
ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম, যুগ্ম-মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন, চট্টগ্রামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল মজুমদার, কুমিল্লার সাংগঠনিক সম্পাদক মুস্তাক হোসেন, ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ‘অতিমূল্যায়িত’ হিসেবে চিহ্নিত।
আরও পড়ুন>> স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে তিন মত বিএনপিতে
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সহ-গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সহ-তথ্য বিষয়ক সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, আইন বিষয়ক কায়সার কামাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, তরিকুল ইসলাম তেনজিং, নির্বাহী কমিটির সদস্য ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা রহমানও আছেন এ তালিকায়।
নেতা একজন, পদ একাধিক
বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর দলে এক নেতার এক পদ নীতি জোরালো হয়। এরই ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ২ এপ্রিল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিব পদ ধরে রেখে কৃষক দলের সভাপতি এবং ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। তাকে অনুসরণ করে দলের আরও বেশ কয়েকজন এক পদ ধরে রেখে বাকি পদগুলো থেকে পদত্যাগ করেন। তবে মির্জা ফখরুল এখনো দুটি পদ আঁকড়ে আছেন একটি দলের মহাসচিব অন্যটি স্থায়ী কমিটির সদস্য।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও তার এ পদের সঙ্গে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান পদ ধরে রেখেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। এ পদের পাশাপাশি দলের নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং দপ্তরের দায়িত্বে রয়েছেন রুহুল কবির রিজভী।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব পাবনা জেলা বিএনপির সভাপতি, আব্দুস সালাম ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক, আমানউল্লাহ আমান ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক, ফরহাদ হালিম ডোনার ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, সৈয়দ মেহেদী রুমী কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি, ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উপদেষ্টা।
যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি, সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি, মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব কায়সার কামাল আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব। সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য, আসাদুল হাবিব দুলু রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি, পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরিফুল আলম কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন জামালপুর জেলার আহ্বায়ক, সহ-তথ্য গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব, মিডিয়া সেলের সদস্য, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব, মিডিয়া সেলের সদস্য এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের সদস্য, সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার মিডিয়া সেলের সদস্য, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা মিডিয়া সেলের সদস্য, মোরশেদ হাসান খান সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদকের পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ইউট্যাবের মহাসচিব এবং মিডিয়া সেলের সদস্য। কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, ইশরাক হোসেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য, মীর হেলাল নির্বাহী কমিটির সদস্য, মিডিয়া সেলের সদস্য এবং দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য।
আরও পড়ুন>> আপাদমস্তক পরিবর্তনের সুর বিএনপিতে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান নবীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি, শাহ রিয়াজুল হান্নান গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কাপাসিয়া উপজেলার সভাপতি, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক নির্বাহী কমিটির সদস্য, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি, মীর হেলাল নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মিডিয়া সেলের সদস্য, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। দলের সব পর্যায়ে এমন এক ব্যক্তি একাধিক পদ আঁকড়ে রাখার উদাহরণ রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের শুভেচ্ছা দূত নিয়ে ‘বিতর্ক’
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ছয়জনের নাম সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মুখে। এদের মধ্যে রকিবুল ইসলাম বকুলের দলের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের পদ থাকলেও মিয়া নুরুদ্দিন আহমেদ অপু, আতিকুর রহমান রুমন, বেলায়েত হোসেন, মেহেদুল ইসলাম মেহেদী এবং লন্ডনে থাকা আব্দুর রহমান সানির কোনো পদ নেই। দলের দৃশ্যমান সাংগঠনিক কার্যক্রমে তাদের নাম না থাকলেও সংগঠনে পদ-পদবি ও দলীয় মনোনয়ন কার্যক্রমের সময় এই ছয় নাম শোনা যায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে।
অর্থের বিনিময়ে এই ছয়জন নেতৃত্ব তৈরি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দলের পদ-পদবি আর মনোনয়নের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের কারণে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করা হয় না। যে কারণে একদিকে নেতৃত্ব ব্যর্থ হয় অন্যদিকে বিতর্ক ছড়ায়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের শুভেচ্ছাদূতের সমষ্টিকে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য তারেক রহমানের ‘কিচেন কেবিনেট’ হিসেবে আখ্যা দেন।
স্থায়ী কমিটির শূন্যপদগুলো অবশ্যই পূরণ হবে। কিন্তু দলে নানান সমস্যা রয়েছে। আমরা দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেও সম্পন্ন করতে পারিনি। একটি ভালো সময়ের অপেক্ষা করছি। আমাদের পুনর্গঠন কাজও প্রায় শেষ করে এনেছিলাম। কিন্তু আন্দোলন, সরকারের নিপীড়নের কারণে পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি।- বেগম সেলিমা রহমান
তবে এর বিপক্ষেও মত রয়েছে। দলের একটি অংশ মনে করে দল পুনর্গঠন ও মনোনয়নের সময় একটি স্বার্থান্বেষী মহল চেয়ারপারসনের শুভেচ্ছাদূতদের বিতর্কিত করতে তাদের নাম ব্যবহার করেন বলেই বিতর্ক ছড়ায়।
বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পরিস্থিতি
জৌলুসহীন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও হাবিব-উন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে ছাত্রদলের যে কমিটি গঠন হয়েছিল ওই কমিটি ছিল ছাত্রদলের সবশেষ ‘মানসম্মত’ কমিটি। তারপর থেকে সংগঠনটির নেতৃত্বে যারা এসেছেন তারা নেতাকর্মী বা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেভাবে আকৃষ্ট করতে পারেননি।
‘কমিটি বাণিজ্যে’ নড়বড়ে যুবদল
১৯৮৭ সালের ২৩ মার্চ যুবদলের কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন মির্জা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কমিটি যুবদলের সর্বকালের সেরা কমিটি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীরা। এই কমিটির পর থেকেই মূলত সংগঠনের ‘কমিটি বাণিজ্য’ শুরু হয়।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল
হাবিব-উন নবী খান সোহেল ও মীর সরাফত আলী সপুর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দলের যে কমিটি হয়েছিল সেটাকেই বেস্ট মনে করছেন নেতাকর্মীরা। এর পরের কমিটি সেভাবে আবেদন তৈরি করতে পারেনি।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলে ‘কৃষক সংকট’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে কৃষক দল দীর্ঘদিন নিস্তেজ হয়ে থাকলেও বর্তমানে শফিকুর রহমান তুহিন ও শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে কৃষক দল চাঙা হয়েছে। তবে বিএনপির এই কৃষক সংগঠনে কতজন কৃষক রয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে!
অস্তিত্ব সংকটে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল
নজরুল ইসলাম খান ও জাফরুল হাসানের নেতৃত্বে শ্রমিক দলের যে কমিটি ছিল সেই মানের নেতৃত্ব দিয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপি শ্রমিক দলের কমিটি গঠন করতে পারেনি। ৯০ দশকের আন্দোলনে ছাত্রদলের পাশাপাশি শ্রমিক দলের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল। আর বর্তমান শ্রমিক দলের কার্যক্রম অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন, গঠনতন্ত্রের নিয়মের কারণে সেখানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। আবার নিয়মিত কমিটিও হচ্ছে না।
‘পরিচয় সংকটে’ জাসাস নেতারা
ওয়াসিমুল বারী রাজীব, চাষী নজরুল ইসলামদের মতো গুণী ব্যক্তিরা এক সময় জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসে ছিলেন। বর্তমানে যারা এ সংগঠনের দায়িত্ব রয়েছেন খোদ সংগঠনের মধ্যেই তাদের পরিচয় সংকট রয়েছে।
জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কার্যক্রম বন্ধদুই গ্রুপের কোন্দলে সম্প্রতি সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া জাতীয়তাবাদী তাঁতী দল, জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলে তাঁতি এবং মৎস্যজীবীরা কতজন সম্পৃক্ত রয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আবেদন হারাচ্ছে পেশাজীবী সংগঠনগুলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সাদা দল প্রতিষ্ঠার সময় থেকে প্রখ্যাত শিক্ষকদের সংগঠন ছিল। ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ অনেক প্রখ্যাত ও বিদগ্ধ শিক্ষক সাদা দলের সঙ্গে ছিলেন। পরবর্তীসময়ে সাদা দল স্বতন্ত্র শিক্ষক সংগঠন থেকে বেরিয়ে এসে দলীয় সংগঠন হয়। বর্তমানে সাদা দলের যেসব নেতা আছেন তাদের অনেকেরই পিএইচডি ডিগ্রি নেই। কেউ কেউ নামমাত্র গবেষণা করেছেন। আন্তর্জাতিক মানের কোনো জার্নালেও লেখেন না। তাদের কমিটিতে ঘুরে ফিরে একই মুখ দেখা যায়। তাদের কর্মসূচিও একটি। সেটা মানববন্ধন। এর বাইরে দেরিতে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া তাদের কোনো কিছুতে দেখা যায়নি। সম্প্রতি শিক্ষাক্রম ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও তাদের পক্ষ থেকে কোনো বিশ্লেষণ কিংবা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বিগত দেড় দশক ধরে বর্তমান একদলীয় সরকার ক্রমাগতভাবে ভিন্নমত বাধাগ্রস্ত করে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। সবাই দেখেছে, কীভাবে আমাদের বিগত কাউন্সিলের আগের মধ্যরাত পর্যন্ত সভাস্থল অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।- ড. আব্দুল মঈন খান
এছাড়া ইউট্যাবের মহাসচিব মোর্শেদ হাসান খান ইতিহাস বিকৃতির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। যদিও এজন্য পরবর্তীসময়ে তিনি ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। কিন্তু প্রচারণা রয়েছে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তিনি বহিষ্কার হয়েছেন।
আরও পড়ুন>> কর্মসূচি সংকটে বিএনপি!
প্রয়াত নাজমুল হুদা, খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতো নেতৃত্ব জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে নেই। এদিকে সাংবাদিকদের সংগঠনে প্রয়াত আমানুল্লাহ কবির, রিয়াজ আহমেদ এবং শওকত মাহমুদদের মতো নেতৃত্বও অনুপস্থিত। চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে এ জেড এম জাহিদ হোসেনরা যখন নেতৃত্বে ছিলেন তখন সংগঠনের যে আবেদন ছিল এখন তা লক্ষ্য করা যায় না।
মিডিয়া সেল মানেই শায়রুল২০২০ সালের ২০ জুন জহির উদ্দিন স্বপনকে আহ্বায়ক ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে সদস্য সচিব করে বিএনপির ১০ সদস্য বিশিষ্ট মিডিয়া সেল গঠন করা হয়। এই সেল থেকে তথ্য পেতে সংবাদকর্মীদের একমাত্র ভরসা শায়রুল কবির খান।
মিত্র সংগঠনগুলোতেও ভাঙন
দীর্ঘদিন বিএনপি সমমনা দলগুলো নিয়ে জোটভিত্তিক আন্দোলন করলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেশ আগেই তারা জোট বিলুপ্ত করে আন্দোলনে নামে। এ যাত্রায় বিএনপির সঙ্গে আরও ৩৫টি দল যুক্ত হয়। তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। এই দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সঙ্গে ৫১ মিনিট টেলিফোনে আলাপ করেও তারেক রহমান তাকে বিএনপির সঙ্গে রাখতে পারেননি। দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নামসর্বস্ব দলের নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমানের দীর্ঘ সময় কথোপকথন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের ব্যর্থতার প্রতিফলন হিসেবেই দেখছে বিএনপি নেতাকর্মীদের একাংশ। তবে চলমান আন্দোলনে মিত্র দলগুলো কর্মসূচিতে সরব।
ঢাকা সংলগ্ন বিএনপির পরিস্থিতি
আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য রাজধানী ঢাকা প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হলেও ২০০১ সালের পর থেকে কার্যত ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব সেভাবে আন্দোলনমুখী হয়ে উঠতে পারেনি। অবিভক্ত ঢাকার প্রথম আহ্বায়ক ছিলেন আবুল হাসানাত, পরবর্তীসময়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মীর শওকত এবং তারপরে প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বে ২০০১ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতাদের ব্যক্তিত্ব দলীয় কর্মী ও সাধারণ মানুষকে যে আকর্ষণ করতো বর্তমানে তার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। বিগত সময়ে ঢাকা শহরে বিএনপির হয়ে যারা ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হয়েছেন এবং আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বর্তমানে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ নেই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাবেক কমিশনার খাজা হাবিব, এম এ কাইয়ুম, নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা প্রমুখ। এছাড়া ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর মধ্যে মানিকগঞ্জে প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুরে চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, প্রয়াত হান্নান শাহ, মুন্সিগঞ্জের প্রয়াত শাহ মোয়াজ্জেম, মিজানুর রহমান সিনহাদের মতো আকর্ষণীয় নেতৃত্ব তৈরিতে বিএনপি ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
চট্টগ্রামে চাঙা নয় বিএনপি
চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মো. শাহাদাত হোসেনের কমিটির পরে আজ পর্যন্ত যে কমিটি রয়েছে তারা সংগঠনকে সেভাবে চাঙা করতে পারেনি।
বরিশাল ও আশপাশের পরিস্থিতি
বরিশালে মুজিবুর রহমান সরোয়ার ও এবায়দুল হক চানের পর যেসব নেতৃত্ব দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কেউ নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন সৃষ্টি করতে পারেননি। ভোলায় মোশাররফ হোসেন শাজাহান মারা গেছেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ কার্যত কোণঠাসা। হাফিজ ইব্রাহিমের ইশারায় চলছে ভোলা বিএনপি। পটুয়াখালীতে আলতাফ হোসেন চৌধুরী নেই, পিরোজপুর-বরগুনা বিএনপির বেহাল দশা।
রাজশাহীর পরিস্থিতি
রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনুর পর যারা সেখানকার নেতৃত্বে রয়েছেন তারা আন্দোলন জমাতে পারেননি। নাদিম মোস্তফা, আমিনুল হকের মতো আকর্ষণীয় নেতৃত্ব আর তৈরি হয়নি।
খুলনাঞ্চলের পরিস্থিতি
খুলনায় শেখ রাজ্জাক আলী, তৈয়বুর রহমান, শফিকুর রহমান মনা বা নজরুল ইসলাম মঞ্জুদের নেতৃত্বে যে আন্দোলন তৈরি হতো খুলনা বিএনপির এখনকার অভিভাবক রকিবুল ইসলাম বকুল এবং আজিজুল বারী হেলালদের নেতৃত্বে সেটি দেখা যাচ্ছে না। দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বর্তমানে এ বিভাগের সর্বোচ্চ নেতা হলেও গত দেড় দশকে তিনি ২৪ ঘণ্টার জন্য এলাকায় গেছেন কি না সেটা নিয়ে সন্দিহান সবাই।
কুমিল্লার পরিস্থিতি
কুমিল্লায় বিএনপির তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন যাদের মধ্যে এম কে আনোয়ার এরই মধ্যে মারা গেছেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া দীর্ঘদিন অসুস্থ, সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনও অসুস্থতায় ভুগছেন। এই মাপের নেতৃত্ব কুমিল্লায় বিএনপি আর তৈরি করতে পারেনি।
বিএনপি অধ্যুষিত এলাকায় পরিস্থিতি নড়বড়ে
দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়াকে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে ধরা হয়। সেখানকার বিএনপি নেতৃত্ব নড়বড়ে অবস্থা। ওখানে বিএনপির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখানে কখনো ভিপি সাইফুল, কখনো জিএম সিরাজ, কখনো হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলকেও বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে দেখা হয়। এ অঞ্চলগুলোতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জিয়াউল হক জিয়াদের মতো নেতৃত্ব বিএনপি তৈরি করতে পারেনি।
আওয়ামী ঘাঁটিতে বিএনপি যেমন
দীর্ঘদিন থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জে বিএনপির করুণ পরিস্থিতি। এ জেলায়ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি দলটি। কখনো এম এইচ খান মঞ্জু, কখনো সাইফুর রহমান নান্টু, কখনো সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জেলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিশোরগঞ্জে মেজর (অব.) আক্তার বা ওসমান ফারুকের মতো নেতৃত্ব তৈরি হয়নি।
বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের বড় ছেলে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. খোন্দকার আকবর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সময় নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সততা ও দেশপ্রেমের যে মানদণ্ড ছিল সত্যি কথা বলতে এখন সেটা নানা বাস্তবতায় সময়ের সঙ্গে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। এখন এক পরিস্থিতি তখন ছিল অন্য পরিস্থিতি। এখন ক্ষমতার লড়াইয়ে অর্থসহ আরও অনেক কিছু প্রয়োজন। সময়ের চাহিদায় নেতৃত্ব নির্বাচনেও পরিবর্তন এসেছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে সম্প্রতি এ বিষয় নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এই সমাজ থেকেই তো রাজনীতিবিদের জন্ম হয়। ছাত্ররাজনীতি থেকে কয়জন ছাত্রনেতা জাতীয় পর্যায়ে এসেছে। পদ পেলেই তো নেতা হওয়া যায় না। মন্ত্রী-এমপি হলেই তো নেতা হওয়া যায় না। নেতা হতে বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকা লাগে। সেদিক থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্বে ভাটা পড়েছে। রাজনীতি না করেও অনেকে মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন। অন্যদিকে রাজনীতি করতে করতে ওপরে উঠেছে এরকম নেতার এখন সংকট।’
সাংগঠনিক পরিস্থিতি সম্পর্কে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের নেতৃত্বে কোনো সংকট হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। বর্তমান নেতৃত্ব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অধীনেই। তিনি আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন। মতামত গ্রহণ করেন। যেহেতু খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাই আমাদের দলে যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির শূন্যপদগুলো অবশ্যই পূরণ হবে। কিন্তু দলে নানা সমস্যা রয়েছে। আমরা দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেও সম্পন্ন করতে পারিনি। একটি ভালো সময়ের অপেক্ষা করছি আমরা। আমাদের পুনর্গঠন কাজও প্রায় শেষ করে এনেছিলাম। কিন্তু আন্দোলন, সরকারের নিপীড়নের কারণে পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বিগত দেড় দশক ধরে বর্তমান একদলীয় সরকার ক্রমাগতভাবে ভিন্নমত বাধাগ্রস্ত করে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। সবাই দেখেছে, কীভাবে আমাদের বিগত কাউন্সিলের আগের মধ্যরাত পর্যন্ত সভাস্থল অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জেলা কাউন্সিলগুলো যেখানেই করার চেষ্টা হয়েছে, সেখানেই আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের যোগসাজশে প্রকাশ্যে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। কাজেই সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলতে দেওয়া হয়নি– এটা সর্বজনবিদিত। ফলে কিছুটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। এজন্য দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই পরিবেশে সব রাজনৈতিক দলেরই সাংগঠনিক কার্যক্রম নিশ্চিত হবে।’
কেএইচ/এএসএ/এএসএম