নোয়াখালীর চাটখিলে আফরোজা-শাহীনুর দম্পতির ঘরে জোড়া লাগানো দুই কন্যা শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। তাদের আলাদা করাসহ চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে নিম্ন আয়ের দরিদ্র পরিবারটি।
Advertisement
জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে শিশুদের বাবা শাহীনুর ইসলাম বলেন, ‘কাপড়ের মিলে শ্রমিকের কাজ করি আমি। জোড়া লাগানো শিশুদের কীভাবে চিকিৎসা করাবো বুঝতে পারছি না। আমার সন্তানদের বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীসহ সহৃদয় ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য কামনা করছি।’
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যমজ দুই সন্তানের জন্ম দেন তার স্ত্রী আফরোজা। দুই শিশুর নাম রাখা হয়েছে মায়মুনা ও মরিয়ম। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যমজ শিশু দুটিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করতে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
শিশুদের মা আফরোজা সুলতানা নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার বদলকোট ইউনিয়নের উত্তর বদলকোট দরগাহ বাড়ির মাহবুব আলমের মেয়ে। আফরোজার স্বামী শাহানুর ইসলাম মুন্সীগঞ্জের ভাটারচরে একটি কাপড়ের মিলে শ্রমিকের কাজ করেন। তার বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায়।
Advertisement
আফরোজা সুলতানা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। স্বামী শ্রমিক ও দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। দুই সন্তানের অপারেশনের খরচ চালানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। অ্যাম্বুলেন্সে করে যে ঢাকায় নিয়ে যাবো সেই ভাড়াও আমাদের কাছে নেই। তাই সরকারি খরচে চিকিৎসাসহ সমাজের সামর্থ্যবানদের সহযোগিতা চাই।’
যমজ শিশুদের নানি ফাতেমা আক্তার বলেন, ১০ মাস আগে শাহীনুর ইসলামের সঙ্গে আফরোজার বিয়ে হয়। দুটি পরিবারই দরিদ্র। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার আট মাসের মাথায় আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে যমজ শিশুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে জন্মের পর দেখা যায় তাদের বুক-পেট জোড়া লাগানো।
২৬ জানুয়ারি ভোরে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে জন্মের পর শিশুদের নোয়াখালীতে নিয়ে আসা হয়। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ঢাকায় চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ শিশুদের পরিবারের নেই। আর নোয়াখালীতে তাদের কোনো চিকিৎসাও নেই।
জানতে চাইলে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মো. সাইফুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, জোড়া লাগানো হলেও তারা পৃথকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে এর উন্নত চিকিৎসা আছে। এজন্য আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ এখানে তাদের ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই।
Advertisement
২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে আনার পর সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সাইফুদ্দিন ও শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জহিরুল ইসলামসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল শিশু দুটিকে দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সেখানে নিলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করা যাবে। এজন্য অর্থের প্রয়োজন। তবে পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে নিতে পারছেন না বলে আমাদের জানিয়েছেন।’
ইকবাল হোসেন মজনু/এফএ/এএসএম