নোয়াখালীতে নিখোঁজের সাত বছর পর ভারসাম্যহীন কিশোরীকে ফিরে পেলো তার স্বজনরা। সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় আদরের সন্তান জবাকে কাছে পেয়ে বাবা-মা ও স্বজনরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। এসময় আবেগ ঘন পরিবেশে উপস্থিত অনেকেই নিজের অজান্তে কেঁদে ফেলেন।শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালীর মাইজদী বিআরডিবি হলে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে জবাকে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদ। জবাকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যিনি তাকে সুস্থ করে তুলেছেন সেই হৃদয়বান মানুষটি হলেন শামীম আহমেদ। পেশায় তিনি ব্যাংকার। যমুনা ব্যাংকের প্রধান শাখায় সিনিয়ন এক্সিকিউটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।জাগো নিউজকে তিনি জানান, গত বছরের ১৭ আগস্ট তিনি অফিস শেষে রাজধানীর আদাবরে নিজ বাসার ফেরার পথে পল্টন মোড়ে রাস্তার পাশে একটি জরাজীর্ণ ছেরা কাপড় পরে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে দেখতে পান। মেয়েটিকে কিছু টাকা দিয়ে তিনি বাসায় চলে যান। কিন্তু তান মন পড়ে থাকে মেয়েটির প্রতি। পরের দিন তিনি অফিসে এসে তার সহকর্মী, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার আলী সাব্বীরের সঙ্গে মেয়েটির বিষয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে ফেসবুকে আরো কিছু বন্ধুর সঙ্গে মেয়েটির বিষয়ে শেয়ার করেন। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে কোনোভাবেই হোক তাকে সাহায্য করতে হবে। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ। শুরু হলো মেয়েটিকে সাহায্যের ব্যাপারে যাবতীয় প্রস্ততি। পরবর্তীতে তিনি (শামীম আহমেদ) পল্টন মডেল থানা, জাতীয় মাননিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর সহকর্মী আলী সাব্বীর, পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য বন্ধুদের নিয়ে ১১ নভেম্বর পল্টন থানা পুলিশের সহযোগিতায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে শেরে বাংলা নগরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করেন। মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় তার নাম দেয়া হয়েছিলো `আদুরী`। দীর্ঘ চিকিৎসা ও নিবিড় পরিচর্যায় আদুরী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে। এক পর্যায়ে আদুরী তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী ও বাবা-মাতার নাম বলায় শামীম আহমেদ ও অন্যান্য বন্ধুরা খোঁজ নিয়ে অবশেষে তার পরিবারের ঠিকানা ও স্বজনদের খুঁজে পেলেন। তিনি আরো জানান, আদুরীকে (জবাকে) তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তার সকল ওষুধসহ বিভিন্নভাবে আর্থিক সহযোগিতা চালিয়ে যাবেন।অনুষ্ঠানে এসে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদ আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে এখনো ভালো মানুষ আছেন। বিশেষ করে ব্যাংকার শামীম আহমেদ, তার সহকর্মীরা ও পরিবারের সদস্যরা এভাবে এগিয়ে না আসলে কখনো জবাকে তার পরিবারের সদস্যরা খুঁজে পেতেন না। তিনি এখন থেকে জবার ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নেন। জবার বাবা আলাউদ্দিন শহরে রিকশা চালিয়ে সংসার চালান। তার পরিবারের আরো তিন সন্তান রয়েছে। আদরের সন্তানকে পেয়ে তিনি যেমন খুশী পাশাপাশি মেয়েটিকে পরিপূর্ণ সুস্থ করতে অভাবের সংসারের বাড়তি টাকার জন্য দুশ্চিন্তায় আছেন। আর মা কাজল বেগম নাড়ী ছেঁড়া ধন জবাকেকাছে পেয়ে তো হাত ধরে বসে আছেন। তিনি জানান, সন্তান পাগল হোক আর ভালো হোক সন্তান তো সন্তানই। ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে রেখে যে সন্তান জন্ম দিয়েছি তাকে কি ছেড়ে থাকা যায়? এ বছরগুলো কীভাবে পার করেছি আমার আল্লাহ জানেন। তিনি হাত তুলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। উল্লেখ্য, ব্যাংকার শামীম আহমেদ ও তার বন্ধুরা এর আগে বান্দরোনের থানচিতে ঘুরতে গিয়ে গাছের নিচে বসে থাকা অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন অন্তর (শিউলী রাণী সরকার) নামে এক মেয়েকে উদ্ধার করে চিকিৎসা শেষে তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন। এ বিষয়টি ১১ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতেও প্রচার করা হয়। মিজানুর রহমান/এমএএস/এবিএস
Advertisement