আন্তর্জাতিক

পদত্যাগের পরপরই ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন গ্রেফতার

পদত্যাগের পরপরই ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতার করেছে ভারতের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা (ইডি)। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি কেনাবেচায় জড়িত থাকা ও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

Advertisement

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) টানা সাত ঘণ্টা জেরার পর হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতার করে ইডি। তবে তার আগে এ নেতা জিদ ধরে বসেছিলেন, তাকে রাজভবনে নিয়ে যেতে হবে এবং তিনি রাজ্যপালের কাছে আগে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। তারপর অ্য়ারেস্ট মেমোতে সই করবেন।

আরও পড়ুন>> ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিখোঁজ!

ভারতে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় এভাবে পদ ছাড়া ও গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে লালুপ্রসাদ ও জয়ললিতার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও একের পর এক সমন পাঠাচ্ছে ইডি। তিনি সেসব সমন অগ্রাহ্য করছেন। এ কারণে হেমন্তের গ্রেফতারির পর প্রশ্ন উঠেছে, এরপর কি কেজরিওয়াল গ্রেফতার হবেন?

Advertisement

গ্রেফতারের আগে ইডির কর্মকর্তারা হেমন্তকে রাজভবনে নিয়ে যান। সেসময় জোটের সব বিধায়ককে রাজভবনে আসার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিধায়কদের রাজ্যপালের কাছে প্যারেড করানো হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ এভাবেই দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিধায়কদের রাজভবনের গেটে আটকে দেওয়া হয়। হেমন্ত তারপর সমর্থনকারী বিধায়কদের তালিকা রাজ্যপালের হাতে তুলে দেন।

আরও পড়ুন>> অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন মমতা

হেমন্ত সোরেন প্রথমে তার স্ত্রীকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে দলের কয়েকজন বিধায়ক আপত্তি জানান। তাছাড়া ছয় মাসের মধ্যে জিতে আসার বিষয়টিও ছিল। পরে সবার সম্মতিতে ঠিক হয়েছে, দলের প্রবীণ নেতা চম্পাই সোরেন পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন। রাজ্যপালকেও সেটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যপাল আমন্ত্রণ জানালে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে পারবেন।

ইডি’র অভিযোগইডি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, হেমন্ত সোরেন ও তার সহযোগীরা জোর করে প্রচুর জমি দখল করেছেন। এই জমি কেলেঙ্কারি ও অর্থপাচারের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন>> কেজরিওয়ালকে চতুর্থবার তলব ইডির, বাড়ছে গ্রেফতারের আশঙ্কা

ইডির দাবি, দালাল ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এই কাজ করেছিলেন হেমন্ত সোরেন। তারা জমির দলিল বদল করেছেন, জাল দলিল তৈরি করেছেন। তাতে মালিকদের নামবদল করে দেখানো হয়েছে। তার ভিত্তিতে জমি কেনাবেচা হয়েছে। আর এসব করে হেমন্ত ও তার সহযোগীদের প্রচুর আর্থিক লাভ হয়েছে বলে ইডির এক কর্মকর্তা এনডিটিভি’কে জানিয়েছেন।

‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’হেমন্তের দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) এই তদন্তকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিযোগ করেছে।তাদের দাবি, নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতাদের দমন-পীড়নের জন্য ভারতের সরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি।

ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের জোটসঙ্গী হলো কংগ্রেস। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে হেমন্ত সোরেনকে পদত্য়াগ করতে বাধ্য করলো ইডি। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মূলে আবার কুঠারাঘাত করা হলো। আইন সংশোধন করার পর তা দিয়ে এখন বিরোধী নেতাদের ভয় দেখানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> মালদহে রাহুল গান্ধীর গাড়িতে ‌‘হামলা’

তার অভিযোগ, ঝাড়খণ্ডের মতো প্রতিটি বিরোধী শাসিত সরকারকে অস্থিতিশীল করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি।

দিল্লি-ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি তেলেঙ্গানা, কেরালা এবং অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্তে নেমেছে ইডি। প্রত্যেক নেতাই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে, বিবিসিকেএএ/