বিখ্যাত কবি নাজিম হিকমতের জন্ম হয়েছিল ১৯০২ সালের ১৫ জানুয়ারি। তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন ০৩ জুন ১৯৬৩ সালে। আর প্রথম কবিতাটির নাম ‘৩১ মে ১৯৬২’। কবি নাজিম হিকমত জীবনের এক-তৃতীয়াংশ কাটিয়েছেন কারাগারের বন্দি সেলে। তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সশরীরে কিংবা কবিতার কালিতে নিজ মতাদর্শে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জীবনের অধিকাংশ কবিতা কারাবন্দি অবস্থাতেই লিখেছেন তিনি। বাষট্টি বছর বয়সে এসে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধলে নিজের মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকেন।
Advertisement
নাজিম হিকমতের পাঁচটি কবিতা জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো। কবিতাগুলোর ভাষান্তর করেছেন সুনান খান—
৩১ মে ১৯৬২
এই দেখো আমার ভার বহন করতে করতে তুমি এখন ক্লান্ত,
Advertisement
আমি নিজেও ক্লান্ত এখন,আমার চোখ—আমার ছায়া সবই ক্লান্ত,আমার শব্দেরা যেন আগুনের মতো উত্তপ্তআমার সমস্ত অঙ্গ একসঙ্গে মৃত্যুর গান গাইছে—আমি এখন খুব ক্লান্ত, সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুরা যেমন কাঁদতে কাঁদতে হয়ে যায় পরিশ্রান্ত।
তোমার মনে পড়ে?আমাদের কথা ছিল কূপ হওয়ার,অথচ, আমরা হয়েছি আগুন।
একদিন হঠাৎ সময় ফুরাবেসকাল হবে না তখন আর;আসবে না বিকেল কিংবা সন্ধ্যা দিনভর নাকে লাগবে আগরবাতির ঘ্রাণ,
সেদিন তুমি শুনতে পাবে আমার পায়ের ছাপা গান, নিভে যাবে তোমার বুকে বেড়ে ওঠা শিশির ভেজা প্রাণ।
Advertisement
একদিন তুমি শুনবে আমার পদচারণ অথবা তার ওজন,তোমার অন্তরে আমার পায়ের ছাপ নড়ে তোমার সত্তার ভেতরে আমি অনেক অনেক দূরে,
আমি জানি এই ভার পৃথিবীর সব সবচেয়ে দুঃখকর, নিঃশব্দ—দাবাড়ুর চিৎকার হাহাকার।
****
গর্ভবতী
নগ্ন ছিল জন্ম থেকেই গাঢ় বাদামি মাংস, মাঠও প্রস্তুত ছিল সর্বদা,যখন সে তার ফোলা ভেজা ঠোঁট খুলল,বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না সময়,অচেতন শরীর চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ।
অপেক্ষাটি ভোরের আলোতে জীবন্ত ছোট পোকার মতো যা উপরে উপরে ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত পৃথিবীতে,পৃথিবীও আনন্দে কেঁপে উঠেছে ততক্ষণে,চুষে গেছে সমস্ত প্রবাহ, হোক না খোলা কিংবা বন্ধ,
তারপর তন্দ্রাচ্ছন্ন, আরও একটি সুন্দর ঘর্মাক্ত তুলতুলে জীবন।
আহা কী প্রসারিত জীবন—ছায়ায়, মায়ায় শুধুই নতুনত্ব
যে মুখ ফুটে বলতে পারে ‘আমি মৃত্যুর চেয়ে শক্তিশালী’, সে নিশ্চয়ই গর্ভবতী।
****
উষ্ণতা
আমার ঘরের জানালা বনের জন্য খোলা, প্রবল গ্রীষ্মের দুপুরে মেঘের নিচে,বনটি একটি ডিম্বাশয়ের মতো তাকিয়ে থাকে আমার দিকেএই বনের সবুজ গাছের নিচে প্রতিদিন বসে থাকে রক্তমাংস পিণ্ডসহ একজন মানুষ,মেয়েটির মুখ কেমন যেন আর্দ্র উষ্ণে ঘেরা।
নারীটির চোখে থাকে ঝলমলে আলো প্রতিদিন সে আসে, বসে গাছের পাশে বৃষ্টি যখন বনের উপর ঢেলে দেয়;হঠাৎ সে তার সবুজ ঝিরিঝিরি চোখ বন্ধ করে ফেলে
নারীটি তার অর্ধেক খোলা মুখে শুভ্র ভেজা দাঁতে এবং তার সমস্ত হৃদয়ের গোড়ায় উষ্ণভাবে বৃষ্টি অনুভব করে।
****
তুমি আর আমি
আমরা একটি আপেলের আধখানা বাকি আধখানা আমাদের এই বিরাট পৃথিবী আমরা একটি আপেলের আধখানা বাকি আধখানা পৃথিবীর অগণিত মানুষ,তুমি একটি আপেলের আধখানা বাকি আধখানা আমি! আমি আর তুমি।
****
তুমি আমার দেশ
পৃথিবীর সমস্ত পাহাড়ের চূড়ায় তুমি আনাতোলিয়ার একটি মাত্র গ্রামতুমি আমার সব থেকে রূপবতী মহিমান্বিত নগরীতুমি আমার আর্তচিৎকার, তুমি আমার দেশ।
যে পদচিহ্ন তোমাকে খুঁজেছে, সে তো আমারই প্রাণ।
এসইউ/জিকেএস