# প্রকল্পের যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না পরিকল্পনা কমিশন# ৩২৫টি বইয়ের গুরুত্ব কী- জানতে চাইবে কমিশন# সেমিনার-কনফারেন্স, প্রশিক্ষণ-ভ্রমণে ব্যয় অযৌক্তিক# কয়েক খাতে ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানোর প্রস্তাব
Advertisement
দক্ষ লেখক তৈরি ও ৩২৫টি প্রকাশনা বিষয়ক প্রকল্পের আওতায় মোট ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করেছে বাংলা একাডেমি। শুধু ৩২৫টি প্রকাশনা খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে কীসের ভিত্তিতে ব্যয় ধরা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। প্রকল্পের আওতায় একজন পরামর্শকের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ বই প্রকাশের জন্য কোনো পরামর্শকের প্রয়োজন আছে কি না- এমন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
‘ভাষা, সাহিত্য, পাঠ্য ও পাঠ্যসহায়ক গ্রন্থ প্রণয়ন এবং প্রকাশনা’ শীর্ষক এ প্রকল্পের প্রস্তাব এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি সময় থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
আরও পড়ুন>>> মেগা প্রকল্পে উন্নয়ন দৃশ্যমান, চাপে রিজার্ভ
Advertisement
প্রকল্পের বিষয়ে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক বিভাগে সভা করবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি। সভায় প্রকল্পের ব্যয়ের বিষয়ে সার্বিকভাবে আলোচনা করা হবে। এছাড়া কোন ধরনের প্রকাশনা হবে, এসব প্রকাশনার আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, লেখক তৈরি হবে কীভাবে- এসব বিষয়েও বাংলা একাডেমির কাছে জানতে চাইবে পরিকল্পনা কমিশন।
এসব বিষয়ে কথা হয় পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান (স্কাইসোয়াম উইং) মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। জাগো নিউজকে আশরাফুল বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভা হবে। প্রকল্পের মূল কাজ প্রকাশনা। এই প্রকাশনা কীসের ভিত্তিতে হবে? টেন্ডার করে নাকি বাংলা একাডেমির নিজস্ব প্রেস আছে? কত পেজের বইয়ে কত টাকা খরচ? বাংলা একাডেমি কীভাবে ব্যয় ধরেছে- এসব জানতে চাইবো।’
কীসের ভিত্তিতে ব্যয় ধরা হয়েছে এবং প্রকল্পের যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না পরিকল্পনা কমিশন। ফলে বাংলা একাডেমির এমন আবদার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
আরও পড়ুন>>> বাংলা একাডেমি পুরস্কার ফেরত: যা বললেন জাকির তালুকদার
Advertisement
তিনি বলেন, ‘একটা বইয়ের দাম কত টাকা, কীভাবে দক্ষ লেখক তৈরি হবে- পিইসি সভায় সবকিছু আলোচনা হবে। এছাড়া ৩২৫টি বইয়ের গুরুত্ব কী- এসব জানতে চাইবো। তারা (বাংলা একাডেমি) ব্যয় ধরে টাকা চাইবে আর আমরা দিয়ে দেবো- বিষয়টি এমন নয়। বিস্তারিত জানতে চাইবো। বই কীভাবে সংরক্ষণ হবে, সংরক্ষণ হলে সাধারণ মানুষ পড়তে পারবে কি না- জানতে চাইবো। পাঠক ব্যবহার না করলে (পড়তে না পারলে) ওই বইয়ের দরকার আছে বলে মনে করি না। বইয়ের তালিকা একটা দিয়েছে। এসব বইয়ের গুরুত্ব কী? এটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?- এসব বিষয়ে জানতে চাইবো।’
প্রকল্পের গুরুত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন আইটেম (খাত) আছে। এসব খাতের ব্যয়ের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন ব্যাখ্যা চাইতেই পারে, আমরা পিইসি সভায় ব্যাখ্যা দেবো।’
বাংলা একাডেমি ব্যয় ধরে টাকা চাইবে আর আমরা দিয়ে দেবো- বিষয়টি এমন নয়। বিস্তারিত জানতে চাইবো। বই কীভাবে সংরক্ষণ হবে, সংরক্ষণ হলে সাধারণ মানুষ পড়তে পারবে কি না- জানতে চাইবো।
দক্ষ লেখক তৈরি ছাড়াও প্রকল্পের আওতায় ৩২৫টি প্রকাশনা, ২৪০টি প্রশিক্ষণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি কেনা, গবেষণা ও উন্নয়ন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেনা হবে। এছাড়া কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক, অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামাদি, আসবাবপত্র, ফিটিং ও ফিক্সার, গাড়ি, প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন>>> ‘গোপনে’ গ্যাসের প্রিপেইড মিটার ভাড়া ১০০ টাকা বাড়ালো তিতাস
প্রকল্পে গাড়ি ভাড়া বাবদ ধরা হয়েছে ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। ৩২৫টি গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় প্রস্তাব করেছে বাংলা একাডেমি। এছাড়া আপ্যায়ন ব্যয়, শ্রমিক মজুরি, সেমিনার-কনফারেন্স, বইপত্র ও সাময়িকী, ভ্রমণ ব্যয়, কম্পিউটার সামগ্রী, অন্যান্য ব্যয়, সম্মানী, অনুষ্ঠান ইত্যাদি খাতে ধরা হয়েছে এক কোটি ৫২ লাখ ১৯ হাজার টাকা।
তবে প্রকল্পের কিছু খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পটি মূলত গ্রন্থ প্রকাশনা সংক্রান্ত। এক্ষেত্রে সেমিনার-কনফারেন্স খাতে ২৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ খাতে ২ কোটি ৬ লাখ, ভ্রমণ খাতে ১৫ লাখ ৮০ হাজার, কম্পিউটার সামগ্রী কেনা বাবদ ২২ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এসব খাতে ব্যয়ের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।
তবে প্রকল্পে বই মুদ্রণের জন্য বিশেষজ্ঞদের সম্মানীর ব্যবস্থার দরকার আছে। এখানে পরামর্শক নিয়োগের প্রয়োজন নেই। ফিটিং ও ফিক্সার খাতে ১৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ৩০ লাখ টাকা, আসবাবপত্র খাতে ২৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য মনিহারি খাতে ২৯ লাখ ২৩ হাজার টাকার ব্যয় প্রাক্কলন অত্যধিক বলে দাবি কমিশনের। ফলে এ ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানো যেতে পারে বলে মত দিয়েছে কমিশন।
বাংলা একাডেমি জানায়, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, পাঠ্য ও পাঠ্যসহায়ক গ্রন্থ প্রণয়ন ও প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির লালন, পরিচর্যা, উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধন এবং বাংলা ভাষার মাধ্যমে জ্ঞান চর্চার অনুশীলনই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। এছাড়া বাংলা ভাষায় উচ্চতর পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা ও জ্ঞান চর্চায় সহায়তা এবং ওই উদ্দেশ্যে গবেষণা করা। সব মিলিয়ে প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ লেখক তৈরি হবে বলে দাবি বাংলা একাডেমির।
আরও পড়ুন>>> ভালো বেতনের আশ্বাসে বিদেশে নিয়ে যৌনকর্মীর ফাঁদ
প্রকল্পের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বাংলা একাডেমি জানায়, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষায় পাঠ্য ও পাঠ্যসহায়ক গ্রন্থ প্রণয়ন এবং প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করতে গিয়ে বাংলা একাডেমি দেখছে যে, বর্তমানে এ ব্যবস্থাপনা আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন নয়।
যেহেতু উচ্চশিক্ষার কোনো পর্যায়েই বাংলা ভাষার ব্যবহার আগে ছিল না, সেহেতু পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা, পারিভাষিক শব্দ প্রভৃতির অভাব রয়েছে। এসব মোকাবিলায় ধাপে ধাপে নানান পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলা একডেমি। এরই অংশ হিসেবে নতুন এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির লালন, পরিচর্যা, উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধন এবং বাংলা ভাষার মাধ্যমে জ্ঞানের অনুশীলন হবে।
এমওএস/কেএসআর/জেআইএম