ফরিদপুরে কোতোয়ালি থানার নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি সুটকেসে পাওয়া মরদেহের পরিচয় ও হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির নাম মিলন প্রামাণিক। এ ঘটনায় রোজিনা আক্তার নামে এক নারীকে রাজধানীর কদমতলী থানার জুরাইন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। এর আগে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রোজিনাকে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দিনগত রাত ৩টার দিকে কদমতলী থানার জুরাইন এলাকার দেওয়ান বাড়ির ষষ্ঠতলা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জানান, গত ২৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৭ দিকে কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট নতুন বাসস্ট্যান্ড গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের পাশ থেকে একটি পরিত্যক্ত লাগেজ দেখে ৯৯৯ এ কল দেন স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় লাগেজের তালা ভেঙে একব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশের একটি চৌকস টিম মামলাটির তদন্ত শুরু করে। উন্নত তথ্য-প্রযুক্তি ও স্থানীয় তদন্তের মাধ্যমে জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারি সকাল ৮টার দিকে অজ্ঞাতনামা একজন বোরকা পরিহিত নারী মাহেন্দ্র করে এসে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিকাশ পরিবহনে একটি টিকিট কাটেন এবং লাগেজটি গাড়ির মালামাল রাখার বক্সে রেখে নাস্তা করার কথা বলে চলে যায়।
Advertisement
কিন্তু গাড়িটি ছাড়ার মুহূর্তে লাগেজের মালিককে না পেয়ে গাড়ি কর্তৃপক্ষ সেটি ঘটনাস্থলে রেখে যায়। প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে গভীর তদন্তকালে পুলিশ টিম রাজবাড়ীর গোয়ালন্দঘাট থানার গোয়ালন্দ বাজার থেকে মাহেন্দ্র চালককে গ্রেফতার করে পুলিশি হেফাজতে নেয়। তার দেওয়া তথ্যমতে, লাগেজ বহনকারী রিকশাচালককে হেফাজতে নিয়ে গোয়ালন্দঘাট থানার পতিতাপল্লীর রুবেল মাতুব্বরের বাড়ির দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া রোজিনার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঘটনার পর থেকে রোজিনা পলাতক ছিলেন।
গ্রেফতার রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি প্রায় ১০/১২ বছর ধরে গোয়ালন্দঘাট দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে আছে। তার বয়স যখন ১৪ বছর তার বাবা মা তাকে বিয়ে দেন। বিয়ের কিছু দিন পর তার বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর চায়ের দোকানদার হাকিমের সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। হাকিম মারা যাওয়ার পর সে সুজন নামে একজনকে তৃতীয় বিয়ে করেন।
আসামির বরাদ দিয়ে এসপি আরও জানান, এ মামলার নিহত মিলন প্রামাণিকের বাড়ি পাবনা সদর হলেও রাজবাড়ী জেলায় বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করতেন এবং মাঝে মধ্যে যৌনপল্লীতে যেতেন। গত ২৬ জানুয়ারি তিনি আসামির ভাড়া বাসায় যান এবং (২৭ জানুয়ারি) রাত অনুমানিক ২টার দিকে দেনা-পাওনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে নিহত ব্যক্তি আসামির মাকে তুলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামি তার পরিহিত ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে মিলনকে হত্যা করেন।
এরপর তার (মিলন) মৃত্যু নিশ্চিত হলে খাট হতে নামিয়ে মরদেহটি কালো রঙের একটি কম্বল, একটি সাদা লাল বেগুনি রঙের বড় বেডশিট, একই রঙের তিনটি বালিশের কাভার দ্বারা মুড়িয়ে লাগেজে ভরেন। পরে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মরদেহভর্তি লাগেজটি নিয়ে রিকশায় করে গোয়ালন্দ বাজারে চলে যান। সেখান থেকে ফরিদপুর যাওয়ার জন্য ৬০০ টাকা দিয়ে একটি মাহেন্দ্র ভাড়া করে ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের পাশে বিকাশ পরিবহনের একটি টিকিট কাটেন এবং হেলপারের সহায়তায় লাগেজটি গাড়ির বক্সের সামনে রাখেন। কিন্তু গাড়ি ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হলে কৌশলে নাস্তা খাওয়ার কথা বলে চলে যাস রোজিনা।
Advertisement
এ সময় সংবাদ সন্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. হাসানুজ্জামানসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এন কে বি নয়ন/এমএএইচ/