মতামত

পুকুর চোররা যেন রক্ষা না পায়

সরকারি নির্মাণ কাজে যে কতোটা পুকুর চুরি হতে পারে তার প্রমাণ যেন চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন ৫ তলা  ভবনটি। এই ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে বাঁশ।  এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে ভবনটির নির্মাণ কাজ স্থগিত করে ওই কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত বিশ্বাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কৃষি অধিদপ্তর। নির্মাণ কাজে এ ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। দুঃখজনক যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে এ ধরনের ভয়াবহ অনিয়ম ঘটেই চলেছে। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। সহযোগী একটি দৈনিকের এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৫ তলা ভবনে রডের পরিবর্তে ব্যবহূত হয়েছে বাঁশ! ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জয় ইন্টারন্যাশনাল’ পিলার ঢালাইয়ে বাঁশ ব্যবহারকালে বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে আসে। পরে স্থানীয় জনতা হাতুড়ি দিয়ে পিলার ভেঙে দেখেন অনেক স্থানে রডের পরিবর্তে ব্যবহূত হয়েছে বাঁশের চটা। এ ঘটনাকে ‘পুকুর চুরি’ এবং বিপজ্জনক নির্মাণ কাজ বলে অভিহিত করেছেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে ভবনটির নির্মাণ কাজ স্থগিত করে ওই কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত বিশ্বাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কৃষি অধিদপ্তর।কথায় আছে, সরকারি মালের নাকি দরিয়ায় ঢেলে দেওয়ার মতো অবস্থা হয়। তাই নির্মাণ কাজ তদারকি করার সুনির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক থাকলেও তাদের গাফিলতিতেই ঘটে বড় ধরনের  অনিয়ম। অনেক ক্ষেত্রে দেখেও না দেখার ভান করে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া যোগসাজশেও ঘটে এই পুকুর চুরির ঘটনা। এ জন্যই নির্মাণের কিছু দিন না যেতেই ধসে পড়ে ভবন, ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে রাস্তাঘাট। একদিকে সরকারি অর্থের শ্রাদ্ধ হয়, অন্যদিকে মানুষের ভোগান্তিরও কোনো সীমাপরিসীমা থাকে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন ভবনটি যদি লোকচক্ষুর অন্তরালে নির্মিত হতো তাহলে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করার ফলে ঘটতে পারতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা। আপাত রক্ষা যে এলাকাবাসী এটি দেখে ফেলেছিল। বর্তমান সরকার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কিন্তু উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়নে যদি মান রক্ষা করা না হয় তাহলে সেই উন্নয়ন টেকসই হবে না। আখেরে উন্নয়নের যে লক্ষ্য সেটিও বাস্তবায়িত হবে না। আলোচন্য ভবনটি নির্মাণকালে যে অনিয়ম হয়েছে সেটি তো খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে পুকুর চুরির সঙ্গে জড়িতরা যদি পার পেয়ে যায় তাহলে এ ধরনের অনিয়ম কোনোদিনই বন্ধ হবে না। কেবল সাময়িক বরখাস্ত নয়, জাতির সাথে যারা বেঈমানি করে তাদের কঠোর শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স দেখাচ্ছে বর্তমান সরকার। মানুষ এ ব্যাপারে তখনই আস্থা রাখতে পারবে যখন তারা দেখবে যে অপরাধীরা যতোই শক্তিশালী হোক ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে তারা যেতে পারছে না। এইচআর/এমএস

Advertisement