পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রদল নেতা নাজমুল মৃধাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে বাবার জানাজায় অংশ নেওয়ার ঘটনার কারণ কি খুঁজে বের করার নির্দেশনায় দায়ের করা রিটের শুনানি আজ।
Advertisement
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রয়েছে রিটটি। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লা।
এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ছাত্রদল নেতা নাজমুল মৃধার ডান্ডাবেড়ি পায়ে বাবার জানায় অংশ নেওয়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
‘ডান্ডাবেড়ি পায়ে বাবার জানাজায় অংশ নিলেন ছাত্রদল নেতা’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে এনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে গত ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
Advertisement
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে গত ১৩ জানুয়ারি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রদল নেতা নাজমুল মৃধা ডান্ডাবেড়ি পায়ে বাবার জানাজায় অংশ নেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার আরজি জানান বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, তিনি (নাজমুল মৃধা) কত মামলার আসামি? তাকে কেন ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আনতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের জেলের ভেতরে রাখার মধ্যে কোনো ক্রেডিট নেই।
আদালতে আজ ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিছ উল মাওয়া আরজু।
আদালত ওইদিন আরও বলেন, এ খবর (ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে জানাজায়) আমরা পড়েছি। তখন আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, একের পর এক ধরনের ঘটনা ঘটছে। রাষ্ট্র দিন দিন নাগরিকদের প্রতি রুঢ় আচরণ করছে।
Advertisement
আদালত বলেন, চাইলে আগের রিটে (যশোরে চিকিৎসাধীন এক যুবদলের এক নেতাকে ডান্ডাবেড়ি পরানো নিয়ে) সম্পূরক আবেদন দিতে পারেন। চাইলে নতুন করে আবেদন নিয়েও আসতে পারেন।
কায়সার কামাল বলেন, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এসেছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে এক ছাত্রদল নেতা ডান্ডাবেড়ি পায়ে বাবার জানাজা পড়েছেন। এ বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আদালত বর্তমানে ডান্ডাবেড়ি পরানোর বিষয়ে যে মামলা আছে সে মামলায় অন্তর্ভুক্ত বা এ বিষয়ে আলাদা একটি আবেদন করতে নির্দেশনা দেন।
কায়সার কামাল বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে তার নাগরিকদের প্রতি হিংস্র আচরণ করছে। দিন দিন এটি বেড়ে চলেছে। যে কারণে এর একটা সেটেলমেন্ট দরকার। আমরা বলেছি, এসব ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে খারাপ হচ্ছে। কারণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এগুলো আসছে। সবকিছু বিবেচনা করে আদালত আমাদের একটি আবেদন করতে বলেছেন। আমরা শিগগির আবেদন করবো। পৃথকভাবে একটি আবেদন করতে পারি বা আগের আবেদনের সঙ্গে সংযুক্তও করতে পারি।
এই আইনজীবীর অভিযোগ, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপরই এ ধরনের নৃশংসতা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় অংশ নিয়েছেন ছাত্রদল নেতা নাজমুল মৃধা। সময় সংক্ষিপ্ত হওয়ায় নির্ধারিত জানাজার আগেই আয়োজন করা হয় বিশেষ জানাজার। ১৩ জানুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার সময় নাজমুলের হাতকড়া খুলে দেওয়া হলেও খোলা হয়নি পায়ের ডান্ডাবেড়ি। জানাজা শেষে তাকে আবার পটুয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
এফএইচ/এসএনআর/এসএম