গত কয়েক বছর ধরে দেশে ধারাবাহিকভাবে বেকার মানুষের সংখ্যা কমছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক বছরে (২০২৩ সালে) বেকার কমেছে প্রায় লক্ষাধিক। আর গত ছয় বছরে বেকার কমেছে প্রায় আড়াই লাখ। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি বেকার কমেছে গত বছর। বিবিএসের সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
Advertisement
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ২৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বেকার ছিলেন। এর আগের বছর ২০২২ সালে বেকার ছিলেন ২৫ লাখ ৮০ হাজার। অর্থাৎ শুধু ২০২৩ সালে বেকার কমেছে ১ লাখ ১০ হাজার। ২০১৫-১৬ সালে দেশে বেকার ছিলেন ২৭ লাখ মানুষ। অর্থাৎ সাত বছরে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা কমেছে দুই লাখ ৩০ হাজার। সম্প্রতি সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩-এর চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সেই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান বের করা হয়েছে। বিবিএস বলছে, গত এক বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে দেশে পুরুষের চেয়ে নারী বেকার কমেছে বেশি।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে ১৪৩২ শ্রমিক নিহত
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী বেকার মানুষের হিসাব করে বিবিএস। আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী, ৩০ দিন ধরে কাজপ্রত্যাশী একজন মানুষ যদি সর্বশেষ সাতদিনে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টাও কাজ করার সুযোগ না পান, তাহলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
Advertisement
বিবিএসের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে ২৪ লাখ ৭০ হাজার বেকারের মধ্যে পুরুষ বেকার রয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার। ২০২২ সালে বেকার পুরুষ ছিলেন ১৬ লাখ ৬০ হাজার। অর্থাৎ ২০২২ সালের তুলনায় পুরুষ বেকার কমেছে ২০ হাজার।
২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে পুরুষ বেকার বেশি না কমলেও উল্লেখেযোগ্য হারে কমেছে বেকার নারীর সংখ্যা। বর্তমানে দেশে নারী বেকার রয়েছেন ৮ লাখ ৩০ হাজার জন। যেখানে ২০২২ সালে ছিলেন ৯ লাখ ২০ হাজার জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বেকার নারী কমেছে ৯০ হাজার।
বিবিএসের তথ্যে বেকারের হারেও কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। বর্তমানে দেশের মোট জনশক্তির ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেকার। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ছিল ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বেকারের হারের দিক থেকেও নারীর চেয়ে পুরুষ এগিয়ে। বর্তমানে বেকার পুরুষের হার ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং নারী বেকারের হার ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন: দেশের উত্তরে দারিদ্র্য কমে বাড়ছে দক্ষিণে
Advertisement
সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের শ্রমশক্তিতে আছেন ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। ২০২২ সালে ছিলেন ৭ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ গত এক বছরে শ্রমশক্তিতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ৪ লাখ মানুষ। গত এক বছরে নারীর চেয়ে পুরুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হয়েছে বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে শ্রমশক্তিতে যুক্ত রয়েছেন ৪ কোটি ৮১ লাখ ১০ হাজার পুরুষ এবং ২ কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার নারী। ২০২২ সালে ছিলেন ৪ কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার পুরুষ এবং ২ কোটি ৫৭ লাখ ৮০ হাজার নারী।
এদিকে, গত এক বছরে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে কর্মে নিয়োজিত ছিলেন ৭ কোটি ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। সেখানে কর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা ২০২৩ সালে ৫ লাখ বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার।
বিবিএসের হিসাবে গত এক বছরে কর্মে নিয়োজিত মোট জনসংখ্যা বাড়লেও কমেছে নারীর সংখ্যা। বর্তমানে দেশে কর্মজীবীদের মধ্যে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার পুরুষ ও ২ কোটি ৪৫ লাখ ১০ হাজার নারী। ২০২২ সালে ছিল পুরুষ ৪ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরে কর্মে নিয়োজিত পুরুষ বেড়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজার, বিপরীতে নারী কমেছে ৩ লাখ ৫০ হাজার।
আরও পড়ুন: দেশে প্রতি পরিবারের গড় ঋণ ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা
বিবিএস ১ লাখ ২৩ হাজার ২৬৪টি খানা থেকে বছরব্যাপী তথ্য সংগ্রহ করে। ওইসব তথ্যের ভিত্তিতে শ্রমশক্তি জরিপটি করা হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে ত্রৈমাসিক বা প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ শুরু করেছে বিবিএস। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ ও জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা।
এদিকে, পরিবর্তন হচ্ছে কর্মক্ষেত্রেও। খাতভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কৃষি থেকে সরে শিল্প এবং সেবা খাতে ঝুঁকছে মানুষ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে কৃষি খাতে কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন ৩ কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার, সেবায় ২ কোটি ৭২ লাখ ২০ হাজার এবং শিল্প খাতে রয়েছেন ১ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ।
২০২২ সালে কৃষি খাতে নিয়োজিত ছিলেন ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার, সেবায় ২ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার এবং শিল্পে ১ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে সেবা খাতে ৭ লাখ এবং শিল্প খাতে বেড়েছে ২ লাখ হাজার।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালেও শক্তিশালী থাকবে ধনী দেশের শ্রমবাজার
অন্যদিকে কৃষি খাতে কর্মে নিয়োজিত জনসংখ্যা কমেছে ৪ লাখ ৬০ হাজার। তবে কৃষি খাতে কমলেও সার্বিকভাবে এখনো এ খাতে কর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা বেশি।
এমওএস/এমকেআর/জিকেএস