আন্তর্জাতিক

ফিরে তাকানোর সময় নেই, ভালো কিছু করতে হবে: কলকাতায় সানজিদা

‘পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই। খেলার সঙ্গে আমার দেশের সুনাম জড়িত। তাই আমাকে ভালো কিছু করতে হবে, সেরা পারফরমেন্সটা দিতে হবে।’ ভারতের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে খেলতে আসা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় সানজিদা আক্তার শনিবার (২৭ জানুয়ারি) এসব কথা বলেন।

Advertisement

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নারী ফুটবল টিমের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিদেশ খেলোয়াড় হিসেবে প্র্যাকটিস সেরেছেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার মেয়ে সানজিদা। এরই মধ্যে ক্লাবটির হয়ে খেলেছেন একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচও এবং ম্যাচটি তারা জিতেওছে। দলে সানজিদার পারফর্মেন্স নিয়ে অনেকেই খুশি।

ম্যাচ শেষে অনেকেই এগিয়ে এসে তার সঙ্গে কথা বলেন, সেলফি তোলেন। বিষয়গুলো বেশ ভালো লেগেছে সানজিদার। তবে ফুটবল যেহেতু একটি দলগত খেলা, তাই কেবলমাত্র তাকে ভালো খেললেই হবে না পুরো দলকেও ভালো খেলতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার সেন্ট জেমস স্কুল অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কার- ২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন সানজিদা। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জার্নি করে নতুন একটি জায়গায় এসেও আমি আমার স্বাভাবিক খেলা খেলেছি। দলের অনেকেই আমার খেলার প্রশংসা করেছেন। খেলা শেষ অনেকে আমার সঙ্গে সেলফিও তুলেছেন।

Advertisement

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) পরবর্তী ম্যাচ খেলতে নামছে ইস্টবেঙ্গল দল। প্রতিটি ম্যাচের আগেই খেলোয়াড়দের যে মানসিক চাপ নিতে হয় তা নিয়ে সানজিদার বক্তব্য, এত চাপ নিয়ে তো খেলোয়াড়রা খেলতে পারে না, তবুও নিতে হয়। যেহেতু আমি এখানে এসেছি, আমি চেষ্টা করবো আমার সেরাটা দেওয়ার।

‘ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে এর আগেও আমাদের বাংলাদেশ থেকে অনেক প্লেয়ার খেলতে এসেছেন, তাদের কয়েকটি রেকর্ডও রয়েছে। এসবের সঙ্গে আমার দেশের সুনাম জড়িত। আমি সেটা রক্ষা করার চেষ্টা করবো। তাছাড়া আমার পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই, আমাকে ভালো কিছু করতে হবে।’

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে বাংলাদেশের খ্যাতনামা অনেক খেলোয়াড়ই খেলে গেছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন খন্দকার ওয়াসিম ইকবাল (১৯৮৬), মোনেম মুন্না (১৯৯১ ও ১৯৯৩), রিজভী করিম রুমি (১৯৯১), গোলাম মোহাম্মদ ঘাউস (১৯৯১), শেখ মোহাম্মদ আসলাম (১৯৯১), রাকিব হোসেন (১৯৯৫) ও মিনাজুর রহমান (১৯৯৫)। দেশ স্বাধীনের আগেও বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলে গেছেন। তবে ক্লাবটির হয়ে এই প্রথম কোনো নারী বিদেশি ফুটবলার খেলতে নেমেছেন।

একজন নারী বিদেশি ফুটবলার হিসেবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যোগদান নিয়ে সাজিদা বলেন, ইস্টবেঙ্গলের পুরুষ টিমে আমাদের বাংলাদেশের অনেকেই খেলে গেছেন। কিন্তু বিদেশি নারী খেলোয়াড় হিসেবে ক্লাবটিতে আমিই সর্বপ্রথম যোগদান করেছি। এটা অবশ্যই অনেক ভালো লাগার। বিশেষ করে, নারী ফুটবলারদের কাছে এমন একটা ক্লাবে খেলতে পারাটা গর্বের বিষয়।

Advertisement

সানজিদা আরও বলেন, আমাদের দেশে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনেক ফ্যান-ফলোয়ার আছে। আমি এখানে যোগ দেওয়ার আগে যেভাবে আমাদের দেশে এটা নিয়ে মাতামাতি হয়েছে, তাতে আমার অনেক ভালো লেগেছে।

বাংলাদেশের ফুটবল ভবিষ্যৎ নিয়ে সানজিদা বলেন, বাংলাদেশের ফুটবল আগের থেকে অনেকটা এগিয়েছে। আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো ফুটবলার আছে। আমার মনে হয়, পরবর্তী সময়ে আমাদের আরও অনেক খেলোয়াড় বিদেশের মাটিতে খেলতে যাবেন। আমাদের দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ভারতীয় মহিলা লীগ ক্লাব কিকস্টার্টে খেলছেন।

‘আমার মনেই হচ্ছে না যে আমি বিদেশে এসে খেলছি। কারণ এখানকার ভাষা এক, সবকিছুই এক। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তাদের থেকে সব রকম সহযোগিতা পাচ্ছি। আসলে ফুটবলের ভাষা বিশ্বজুড়েই এক।’

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, রাইট উইংগার হিসেবে খেলা ২২ বছর বয়সী সানজিদা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের বয়সভিত্তিক সব বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে খেলেছেন। অনুর্দ্ধ ১৪, অনুর্দ্ধ ১৬, অনুর্দ্ধ ১৮ ও অনুর্দ্ধ ১৯ বিভাগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলা সানজিদা বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। ২০২২ সালে বাংলাদেশের সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে সানজিদার অবদান অনস্বীকার্য।

ডিডি/এসএএইচ