ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মিরপুরের গৈদারটেক এলাকার ১২ একর জলাশয় রক্ষা ও সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার অ্যান্ড সিড হেলথ ল্যাবরেটরি নির্মাণের জন্য জলাশয় ভরাট অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত।
Advertisement
পাশাপাশি জলাশয়ের ভরাট অংশ তিন মাসের মধ্যে পুনরুদ্ধার করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং জলাশয় হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিএডিসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং ওই এলাকার তিন বাসিন্দার করা রিটের বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রোববার (২৮ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আশরাফ আলী, ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান শুভ, অ্যাডভোকেট সৈয়দা সিলমা তামারিনা ও অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মোরশেদ। বিএডিসির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এস এম জহুরুল ইসলাম। রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইমাম হাসান এবং ডিএনসিসির আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রেজা-ই-রাব্বি।
Advertisement
ডিএনসিসির অন্তর্ভুক্ত গৈদারটেক এলাকায় ১১৭ একর জলাশয় ‘ওয়াটার রেগুলেটিং পন্ড’ হিসেবে চিহ্নিত। এটি ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত। আধুনিক পদ্ধতিতে বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার অ্যান্ড সিড হেলথ ল্যাবরেটরি’ নির্মাণের জন্য এ জলাশয়ের প্রায় ১২ একর জমি ভরাট করে বিএডিসি।
সরকারি সংস্থা কর্তৃক জনগুরুত্বপূর্ণ এ জলাশয় ভরাটের সংবাদ দেশের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনকে পত্র পাঠায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তবে তাদের পত্রের তোয়াক্কা না করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনোরূপ অনুমোদন ছাড়াই এ জলাশয় ভরাট করে বিএডিসি।
প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ ও সরকার কর্তৃক গেজেটেড ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন এবং জলাশয়ে বালু ভরাট ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ নেই। টাউন ইম্প্রুভমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৫৩ অনুযায়ী রাজউকের আওতাধীন এলাকায় যে কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করতে হলে রাজউকের অনুমোদন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
দেশের প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জলাশয় ভরাট করা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ১ আগস্ট একটি জনস্বার্থমূলক মামলা করে বেলা। পরে হাইকোর্ট কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির পাশাপাশি ভরাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন।
Advertisement
রিটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা মহানগরের পরিচালক এবং সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার অ্যান্ড সিড হেলথ ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালক।
এফএইচ/বিএ/জিকেএস