দাম বৃদ্ধি রোধে অভিযান, দাম বেধে দেয়া এমনকি আমদানি করার ঘোষণাতেও স্বস্তি মিলছে না খুলনার বাজারে। উল্টো খুলনার বাজারে আলু, পেঁয়াজসহ দাম বেড়েছে বেশকিছু খাদ্য পণ্যের।
Advertisement
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) খুলনার মিস্ত্রি পাড়া বাজার, টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, গল্লামারী বাজার ও নিরালা বাজার ঘুরে দেখা যায় শীতের সবজির ভরা মৌসুমেও আলু, পেঁয়াজ, ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, লাউসহ প্রায় সব সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। অন্যান্য বছরে এসময়ে সবজির দাম তলানীতে থাকলেও বর্তমানে এখনও তা বাড়তির দিকে। সেই সঙ্গে ফার্মের মুরগী আর ডিমের দামও রয়েছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা, বর্তমানে ১০০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। পেঁয়াজের মতো আলুর দামও বেড়েছে চলতি সপ্তাহে। গত সপ্তাহে ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু পাওয়া গেলেও চলতি সপ্তাহে ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না কোনো আলু।
টুট পাড়া জোড়াকল বাজারের আলু ব্যবসায়ী জীবন হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৪২-৪৩ টাকা ধরে আলু কিনে ৪৫ থেকে ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করলে কোনো লাভ থাকে না। এক বস্তা আলু কিনলে তাতে দুই-আড়াই কেজি থাকে মাটি। এরপর ছোট আলু কাটা আলু নষ্ট আলু তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে এক বস্তা আলুতে চার পাঁচ কেজি এমনিতেই চলে যায়। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
Advertisement
জীবন হাওলাদার জাগো নিউজকে আরও বলেন, বস্তার মধ্যে বড় পেঁয়াজের সঙ্গে ছোট পেঁয়াজ যেমন ভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয় যে, বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না। বস্তা খুলে খুচরা ধরে বিক্রি করতে গেলে তখনই বোঝা যায় যে বস্তার মধ্যে কি ছিল!
ওই বাজারের সবজি বিক্রেতা রানা জানান, পাইকারি বাজারে সবজি কিনতে গেলে সবসময় বেকায়দায় পড়তে হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক দফা ওঠানামা করে সবজির দাম।
তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহে ফুলকপির দাম ছিল ৪০ টাকা, বর্তমানে দাম বেড়ে ৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে, একইভাবে বাঁধাকপি, বিট কপি, মুলা, গাজর, পেঁয়াজের কালির দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। আর বর্তমানে বাজারে বেগুনের দাম এত বেড়েছে যে ব্যবসায়ীরা খুব বেশি বেগুন কিনে আনতে পারছেন না। তিনি বলেন গত সপ্তাহে যে বেগুন ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে চলতে সপ্তাহে সেই বেগুন ৬০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
নগরীর মিস্ত্রিপাড়া বাজারের ডিম বিক্রেতা আবুল কালাম জাগো নিউজকে জানান, শনিবার বাজারে ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়। অথচ গত সপ্তাহে দাম ছিলো ৪২ টাকা। মাঝে মাঝে মনে হয় ডিম বিক্রি করা বন্ধ করে দেই। কিন্তু দোকান চালাতে গেলে তা করা হয়ে ওঠে না। কাস্টমার ডিম কিনতে এসে নানা কথা শুনিয়ে যায়।
Advertisement
খুলনার সবজি বাজারে দর ওঠানামা করলেও মাছের বাজারে দর পতন বা ওঠার কোনো লক্ষণ নেই। মাছ বিক্রেতারা ক্রেতার কাছ থেকে যে যেভাবে পারছেন সেভাবে দাম আদায় করছেন।
শনিবার বাজারে কার্প জাতীয় মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত দরে। এছাড়া টেংরা মাছ ৩৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, পার্শে মাছ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, ভেটকি মাছ ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা, পাঙ্গাস মাছ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ ২০০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারের দর পতনের কোনো খবর না থাকলেও ফার্মের মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে পারবেন মুরগিতে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে বলে জানিয়েছেন মিস্ত্রিপাড়া বাজারের মুরগি বিক্রেতা রইসুল ইসলাম।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, শীতের কারণে মুরগির দাম একটু কমেছে, গত সপ্তাহে যে মুরগি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, চলতে সপ্তাহে তা ১৯০ টাকায় নেমে এসেছে। শীতের তীব্রতা আরও কয়েকদিন থাকলে ফার্মের মুরগির দাম আরও কমে যাবে।
আলমগীর হান্নান/এনআইবি/এসএম