আইন-আদালত

কলকারখানা অধিদপ্তর কাদের প্রতিষ্ঠান, প্রশ্ন ড. ইউনূসের

 

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে শ্রমিকরা নয়, সরকার মামলা করেছে বলে দাবি করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, কলকারখানা অধিদপ্তর কাদের প্রতিষ্ঠান?

Advertisement

রোববার (২৮ জানুয়ারি) সংশ্লিষ্ট আপিল ট্রাইব্যুনালে শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলার ৬ মাসের দণ্ডের রায় বাতিল ও সাজা থেকে খালাস দিতে ২৫ যুক্তিতে আপিল আবেদন করেন তিনি।

এর আগে শ্রম ও আপিলে ট্রাইব্যুনালে আপিল আবেদন সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ড. ইউনূসসহ ৪ আসামির জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়াও মামলায় নথি তলব করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ৩ মার্চ দিন ঠিক করেছেন আপিল ট্রাইব্যুনাল।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘মামলা করেছে সরকার। অথচ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে মামলা করেছেন শ্রমিকরা।’

Advertisement

তার দাবি, ‘সরকার মামলা করলেও, শ্রমিকদের নাম করে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে’। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার দিক থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার, সরকার বারবার বলছে, সব পর্যায়ে থেকে বলছে, এ মামলা সরকার করেনি। কিন্তু আপনারা তো (সাংবাদিক) সাক্ষী। আপনারা তো কোনো কিছু বলছেন না। এটা কি সরকার করলো, নাকি শ্রমিক করলো? এ জবাবটা আমাকে দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরতো সরকারি, সরকারের অধীন। শ্রমিকতো কোনো মামলা করেনি, সেটা আপনারা (সাংবাদিক) বলেন। এটা তো মিথ্যা কথা।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক ছিল আমাদের একটা স্বপ্ন। দারিদ্র্যকে মুছে ফেলতে চাই। এটাই ছিল আমাদের স্বপ্ন। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা পেছনে লেগেছিলাম। জানি না আমরা ভবিষ্যতে আমাদের কী হবে না হবে। আমাদের কোনো কিছুই জানা ছিল না। আমরা গিয়েছি, খুঁটি-নাটি দেখে দেখে আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ফলে গ্রামীণ ব্যাংক আস্তে আস্তে প্রসারিত হলো। এটা হয়ে গেল আমাদের অপ্রত্যাশিত একটা বীজতলা। স্বপ্নের বীজতলা। আমরা স্বপ্ন দেখি আর বীজ বুনি এটার মধ্যে। কী হবে ভবিষ্যতে। সেটা ক্রমে ক্রমে আমরা প্রসারিত করলাম, নানা দিকে গেলাম-স্বাস্থ্যের দিকে, প্রযুক্তির দিকে নিয়ে গেলাম, একটার পর একটা।’

ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আশা, আপিলে বাতিল হবে নিম্ন আদালতের সাজা। তিনি বলেন, আজকের আদালত আমাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে এবং নিম্ন আদালতের সম্পূর্ণ রায়কে সাসপেন্ড করেছে। একই সঙ্গে আগামী ৩ মার্চ নিম্ন আদালতের সেসব নথি আনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে। আর আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ড. ইউনূসের জামিন

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা আদালতে জামিন প্রার্থনা এবং আপিল করেছি। রাষ্ট্রীয় সর্বমহলে এমনকি বিদেশিদের কাছেও বলা হচ্ছে, এ মামলা সরকার করেনি। এ মামলা শ্রমিক করেছে। কিন্তু ঘটনাটা সঠিক নয়। সরকার তার প্রতিষ্ঠান কলকারখানা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ মামলা করেছে। শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করা হয় নাই, বর্ধিত ছুটি দেওয়া হয় নাই এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশ দেওয়া হয়নি-এমন তথ্য দিয়ে এ মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান এ মামলা করেছে। এ মামলায় যে রায় হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। ৩০৭ ধারা অনুযায়ী এ মামলায় শাস্তি দেওয়ার বিধান নেই। কারণ লেবার আইনের ২৩৬ ধারা অনুযায়ীই এ মামলার শাস্তির বিধান আছে। এ ধারাতেই বলা আছে, যদি বকেয়া থাকে তাহলে সেটা পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। এটা না করলে ১ লাখ টাকা জরিমানা, প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে। পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি আইন অনুযায়ী এটা আদায় করা হবে। কিন্তু সেসব ভায়োলেট করে বিশ্বের কাছে নন্দিত নোবেলজয়ী ড. ইউনূস ও তার বন্ধুদের সামাজিক ব্যবসা ধ্বংস করার জন্য এ সাজা দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে ট্রাইব্যুনালে খুরশীদ আলম খানকে আইনজীবী নিয়োগ করেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। তিনি জানান, অনুমতি ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সে আবেদন জানানো হবে আদালতে।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গত ১ জানুয়ারি ৬ মাসের সাজা হয় ড. ইউনূসের। তবে, ৩০ দিনের মধ্যে আপিলের শর্তে জামিন পান, ইউনূসসহ ৪ জন। রায় প্রদানকারী বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানার স্বাক্ষরের পর ৮৪ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়।

শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জন শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায়। এদিন স্থগিত করা হয়েছে শ্রম আদালতের দেওয়া ৬ মাসের সাজা আগামী তিন মার্চ পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে মামলার সব নথি তলবের পাশাপাশি ড. ইউনূসের আপিল আবেদনও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত।

৬ মাসের সাজার বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে রোববার (২৮ জানুয়ারি) সকালে আপিল ও স্থায়ী জামিন আবেদন করেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূসসহ চার আসামি।

এফএইচ/কেএসআর/এমআইএইচএস/জেআইএম