নীলফামারীতে উত্তরের হিমেল বাতাসে কাবু জনজীবন। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক। শীতের দাপটে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রচণ্ড শীতে বন্ধ করা হয়েছে জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান।
Advertisement
রোববার (২৮ জানুয়ারি) সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলিত মৌসুমে এটি জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বিচারে এটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এছাড়া ডিমলা আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এমন অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে বের না হওয়ায় রাস্তাঘাট, হাটবাজার, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনালসহ লোকালয়ে মানুষজনের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। সরকারি-বেসরকারি অফিসে চাকরিজীবীরা এলেও কাজকর্মে চলছে স্থবিরতা। জীবিকার তাগিদে নিম্নআয়ের মানুষেরা বের হলেও কাজ না পেয়ে পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।
ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষদের। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা ও আলুখেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে গরু-ছাগল।
Advertisement
সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ এলাকার সাজু ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ ঠান্ডা বেশি। ঠান্ডা বেশি হলেও কিছু করার নেই। কাজ করে পেট চালাতে হবে। কাজ না করলে পেটে ভাত যাবে না।
জেলা সদরের হরতকীতলা মোড় এলাকার রিকশাচালক একলাজ আলী বলেন, গত ১০ থেকে ১২ দিন ধরে ঠান্ডায় যাত্রী ঠিকমতো পাই না। শহর ফাঁকা, লোকজন নেই। রিকশা জমার টাকা কামাই হয় না। পরিবারে পাঁচজনের জন্য প্রতিদিন ৩০০ টাকার বাজার লাগে। এই ঠান্ডা বাতাস কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে জীবন চলে না।
অপরদিকে নীলফামারীতে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় আজ রোববার (২৮ জানুয়ারি) মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার সকালে নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশ জারি করা হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকেও একই আদেশ জারি করেছে।
আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক ও আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি নীলফামারীর তাপমাত্রা ৬.৫ ডিগ্রি। ফলে এদিন জেলার সকল মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো।
Advertisement
সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ফলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী রোববার বিভাগের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে সোমবার যথারীতি পাঠদান চালু করা হবে।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে নীলফামারীর তাপমাত্রা ৯ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। আজ সৈয়দপুরে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন ৬ ডিগ্রি ও সকাল ৯টায় ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চলিত মৌসুমে এটি জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ রকম তাপমাত্রা আরও কয়েক দিন থাকতে পারে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা কম।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, শীতবস্ত্র হিসেবে জেলার ৬ উপজেলা ও চার পৌরসভায় চার দফায় ৪২ হাজার কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শীতার্ত মানুষদের কথা চিন্তা করে আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত শীতবস্ত্র পাওয়া যাবে।
এফএ/এসএম