ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার বিদ্যাধর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা তাজমিন উর রহমান তুহিন একজন সৌখিন মাছচাষি। শখের বশে চাষ শুরু করলেও এখন তা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। সৌখিন এই মৎস্য খামারির সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার অন্যান্যরা। তারাও এখন ভাগ্য ফেরাতে ঝুঁকছেন মাছচাষের দিকে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছর চারেক আগে পতিত জমিতে শখের বশেই মাছের ঘের গড়ে তুলেছিলেন। এরপর আলাদীনের চেরাগের মতোই তা স্বপ্ন পূরণের সারথি হয়ে ওঠে। চার বছর আগের সেই মাছের ঘের এখন পরিণত হয়েছে বিশাল মৎস্য সাম্রাজ্যে। প্রায় ২২ একর জমির ওপর ছোটবড় মিলিয়ে সাতটি মাছের ঘের থেকে ২০২৩ সালে তিনি আয় করেছেন প্রায় ১৯ লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মধুমতি নদীর পাড়ে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা। এ অঞ্চলের মানুষের বড় অবলম্বন কৃষি। তবে বর্ষার পানি নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় বেশিরভাগ জমিই এক ফসলি। দরিদ্র বর্গাচাষিদের বেশিরভাগই এজন্য বছরের অধিকাংশ সময় কৃষাণ দিয়ে বা রিকশা-ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। জমির মালিকরাও কৃষিতে দেখতে পান না তেমন লাভের মুখ।
এ অবস্থায় স্থানীয় যুবক তাজমিন উর রহমান তুহিন বিকল্প পন্থা হিসেবে এক ফসলি জমিতে গড়ে তোলেন মাছের ঘের। এখান থেকে তিনি বেশ লাভের মুখ দেখছেন। তার এই উদ্যোগ যেমন আমিষের ঘাটতি মেটাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে পাশাপাশি কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করেছে। মাছের ঘেরের পাশেই তিনি করছেন সবজির আবাদ। এছাড়া গরুর খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট গড়ে তুলেছেন। সব মিলিয়ে একটি বহুমুখি কৃষি খামারে রূপ নিয়েছে তার সেই শখের উদ্যোগ।
Advertisement
স্থানীয় মালা গ্রামের বাসিন্দা তাইজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এই মাছের ঘের হওয়ায় এলাকার মানুষের অনেক সুবিধা হয়েছে। তার দেখাদেখি অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন মাছচাষে। আমি তার এই উদ্যোগ দেখে উদ্বুদ্ধ হই। এরপর পাঁচ একর জমিতে মাছের ঘের করি। পাশাপাশি পাড় দিয়ে সবজি লাগাই। এ বছর আমি এক লাখ টাকার শুধু লাউ বিক্রি করেছি। আর মাছ বিক্রি করেছি ১১ লাখ টাকার মতো।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) সৈয়দ শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এসব জমিতে একসময় ভালো কোনো ফসল হতো না। তবে এখন মাছের ঘের করায় যেমন এর মালিকরা লাভবান হচ্ছেন, তেমনি গ্রামবাসীও উপকৃত হচ্ছেন। অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
এ বিষয়ে তাজমিন উর রহমান তুহিন জাগো নিউজকে বলেন, এই জমিগুলো এক ফসলি। এখানে কৃষিকাজ করে লাভবান হওয়া সম্ভব নয়। তাই আধুনিক পদ্ধতিতে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা থেকে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে জমি খনন করে মাছের ঘের করি। আর ঘেরের চারপাশে উঁচু জমিতে কলা, পেঁপে, শিম, বেগুনসহ নানান সবজি লাগাই। ফলজ গাছও রোপণ করেছি। বর্তমানে এখানে ছোটবড় মিলিয়ে সাতটি ঘের রয়েছে। দেশি প্রজাতির রুই, মৃগেল, কাতল, পুঁটি ও গ্লাসকার্প জাতীয় মাছের চাষ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর এ প্রকল্প থেকে তার ১৯ লাখ টাকার মতো আয় হয়েছে। তা থেকে সরকারি খাতে ৫৭ হাজার টাকার উৎস কর দিয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে আমিষের ঘাটতি মিটিয়ে যেন জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন সেটিই তার লক্ষ্য বলে জানান।
Advertisement
তিনি বলেন, বাড়ির পাশে গরুর খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট করেছি। নতুন করে আরও দুটি ঘের বাড়ানোরও উদ্যোগ নিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, তানজিম উর রহমান তুহিন একজন সফল মৎস্যচাষি। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সবধরনের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা করছি। তিনি প্রায় ২২ একর জমির ওপর মাছের ঘের গড়ে তুলেছেন। যা খুবই ভালো একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। নতুনভাবে যারা মৎস্য চাষের প্রশিক্ষণ নিতে আসেন তাদেরকে সেখানে নিয়ে সরেজমিনে প্রশিক্ষণ দিই।
এফএ/এসএম