উৎপাদন খরচ কম ও বহুবর্ষজীবী হওয়ায় পানচাষে আগ্রহ বাড়ছে শেরপুরের কৃষকদের। একসময় শুধু সদর উপজেলার কিছু এলাকায় পানচাষ হলেও এখন বিস্তৃতি ছড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী নকলা উপজেলার কৃষকদের মধ্যেও। পানের বরজে ভাগ্যের চাকা ঘুরে হাসি ফুটেছে অনেক কৃষকের মুখে। কৃষি বিভাগ বলছে, আগ্রহী পানচাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
Advertisement
পানচাষে দিন বদলেছে শেরপুর সদর উপজেলার সূর্যদী এলাকার কৃষক আমির হোসেনের। কিশোর বয়স থেকে অভাব ঘোচাতে শুরু করেন পানচাষ। স্বল্প পুঁজিতে পানচাষে দীর্ঘমেয়াদি আয়ের পথ খুঁজে পান তিনি। পাঁচ শতাংশ জমিতে ছয় বছর আগে এককালীন আড়াই লাখ টাকা খরচ করে প্রতিবছর আয় হয় দেড় লাখ টাকা।
আমির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি জন্মের পর থেকেই পানচাষ করি। আমার বাপ-দাদাও পানচাষ করতেন। পানচাষই আমাদের প্রধান জীবিকা। এটা দিয়েই আমার সংসার চলে।’
শুধু আমির হোসেন নন, শেরপুর সদরের সূর্যদী, রৌহা, কামারিয়াসহ নকলা উপজেলার অন্তত দুই হাজার পরিবারের নির্ভরতা পানচাষ। প্রতি সপ্তাহের দুই দিনের হাটে এক একর জমির পানের বরজ থেকে আয় আয় ১৫ হাজার টাকা।
Advertisement
কৃষক আলী হোসেন বলেন, ‘আমগো গ্রামের ৭০ শতাংশ ঘরেই পানের বরজ আছে। এক কুর (একর) জমি থেকে প্রতি সপ্তাহে দুইবার করে পান বিক্রি করলে ১৫-১৬ হাজার টাকার বিক্রি করি। বছরে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়।’
আরেক কৃষক পনির মিয়া বলেন, ‘একবার বরজ তুলতে পারলে ১০-১৫ বছর টিকে থাকে। কোনো বালা মুসিবত না হলে পানের বরজে তেমন কোনো খরচ হয় না।’
এ এলাকার উৎপাদিত পান যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। পাইকারি দরে পান কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করেন পাইকাররা। স্থানীয় পাঁচটি বাজারে কোটি টাকার বেশি পান বেচাকেনা হয়।
নেত্রকোনা এলাকার আমিনুল পাঠান এসেছেন পান কিনতে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বাজারে টাটকা পান পাওয়া যায়। আমরা এখান থেকে পান কিনে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করি। কম দামে ভালো মানের পান পাওয়া যায়।’
Advertisement
আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী ছমির মিয়া বলেন, ‘ভোরের দিকে বাজার বসে। এ এলাকায় তিনটি পানের বড় বাজার আছে। তিন বাজারেই একদম সতেজ পান পাওয়া যায়। এ বাজারের পানের চাহিদাও বেশি।’
এদিকে পানচাষকে আরও লাভজনক করতে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। শেরপুর খামারবাড়ির উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, পান একটি অর্থকরী ফসল। শেরপুরের উৎপাদিত পান বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। এর চাহিদাও বেশ ভালো। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা পানচাষিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতিবছরই শেরপুরে বাড়ছে পানের আবাদ। গতবছর ৩৪ হেক্টর জমিতে ৪০৮ মেট্রিক টন পান উৎপাদিত হয়েছে, যা এবার আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
এসআর/এএসএম