দেশজুড়ে

বদ্ধ জলাশয়ে সেতু, জলে কোটি টাকা

এক পাশে পুকুর, আরেক পাশে ছোট্ট ডোবা। তার ওপর বাড়ি। রয়েছে উঁচু ভিটা, বাঁশঝাড়, গাছ ও কবরস্থান। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে মেঠোপথ। পানি প্রবাহের কোনো উপায় নেই। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পুকুরসদৃশ ওই জায়গার ওপর কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার সেতু।

Advertisement

স্থানীয়রা বলছেন, জনগণের কোনো কাজেই আসবে না এ গার্ডার সেতু। বরং ঢিলেঢালাভাবে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় তা বাড়িয়েছে দুর্ভোগ। এতে কোটি টাকা আসলে জলে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী বাঁধ ভেঙে পানি ঢোকার পর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বডুয়াহাট থেকে গাইবান্ধা সদরের কামারজানী যাওয়া রাস্তায় ফুলমিয়ার বাজারের কাছাকাছি ছোট্ট একটি পুল (সেতু) নির্মাণ করে এলজিইডি। ছিল পানি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত নালা। কিন্তু কালক্রমে বন্ধ হয়ে যায় সেই নালা, বন্ধ হয় পানিপ্রবাহের পথ। বাড়ি করে মানুষ। সময়ের তাগিদে রাস্তা পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। প্রয়োজন দেখা দেয় পুরোনো পুলের স্থলে নতুন পুল তৈরির। উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় কোটি টাকা। কাজ পান সাইদুর রহমান নামের এক ঠিকাদার।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই গার্ডার সেতুর উত্তর পাশে রয়েছে পুকুর, বাড়ি, সবজি চাষের উপযোগী ভিটা ও গাছপালা। আর দক্ষিণ পাশে রয়েছে বাঁশঝাড়, কবরস্থান, ছোট্ট ডোবা, বাড়ি ও বহুকাল আগের পুরোনো রাস্তা। সেতুর চারপাশে নেই কোনো পানিপ্রবাহের পথ। দেখেই মনে হবে এটি বদ্ধ কোনো জলাশয় বা পুকুর। সেই পুরোনো ছোট্ট পুলের স্থলেই ১২ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করেছে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। পেরিয়েছে নির্ধারিত সময়। এখনো তৈরি হয়নি সেতুর উইং ওয়াল। বসানো হয়নি রাস্তার উভয় পাশের পিলার। যাত্রীদের ঠেলে তুলতে দেখা যায় বিভিন্ন বাহন।

Advertisement

সাবেক ইউপি মেম্বার আব্দুল হামিদ সরকার ও সাহেদুল ইসলামসহ স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৮ সালের পর আর বড় ধরনের বন্যা হয়নি। এখন যা হয়, তা হলো বৃষ্টির পানি। চারপাশে পানিপ্রবাহের কোনো পথ না থাকায় ব্রিজটি কোনো কাজে আসবে না।

চারপাশে পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ থাকায় পুরোনো ছোট পুলের জায়গায় নতুন আরসিসি গার্ডার ব্রিজটির অনুমোদন নিয়েছিলেন তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আরেফিন খান। তিনি সম্প্রতি বদলি হয়েছেন। তার কাছে বিষয়টি ফোনে জানার চেষ্টা করলে প্রথমে ধরেননি। পরে আবার ফোন দিলে তিনি কেটে দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় নতুন। ওই জায়গাটা সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। তবে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে খুব শিগগির পাঠাবো। তিনি বিষয়টি দেখে আসবেন।’

এসআর/এএসএম

Advertisement