আন্তর্জাতিক

টিকটক ভিডিও দেখে ১৯ বছর পর একে অপরকে খুঁজে পেলেন যমজ বোন

দুজন দেখতে হুবহু একই রকম। চোখ, কান, নাক, মুখের আদলে দুজনের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করা দুষ্কর। কারণ সম্পর্কে তারা যমজ বোন। অথচ ১৯ বছর ধরে একই শহরে থাকা সত্ত্বেও তারা কেউ কাউকে চিনতেন-ই না! হঠাৎ ভাইরাল হওয়া এক টিকটক ভিডিওর সূত্র ধরে পরিচয় হয় তাদের। সেখান থেকেই বেরিয়ে এলো পুরো সিনেমার মতো কিন্তু বাস্তব গল্প।

Advertisement

গল্পটার শুরু ২০০২ সালে, পূর্ব এশিয়ার দেশ জর্জিয়ায়। সে বছরের ২০ জুন আজা শোনি নামের এক নারী জর্জিয়ার কিরতিশখি গ্রামে দুটি জমজ কন্যা শিশুর জন্ম দেন। জন্মদানের পর বেশকিছু জটিলতায় কোমায় চলে যান শোনি। আর পরিবারে আরও তিনটি সন্তান থাকায় বাবা গোচ গাখারিয় জমজ বাচ্চা দুটি আলাদা দুটি পরিবারে বিক্রি করে দেন।

পরে ওই দুই শিশু অ্যামি খাভিশা ও আনো সারতানিয়া নামে বেড়ে ওঠে। বয়স যখন ১২ বছর তখন অ্যামি তার প্রিয় টিভি শো ‘জর্জিয়াস গট ট্যালেন্ট’ দেখছিলেন। সেখানে তিনি একটি মেয়েকে দেখেতে পান, যার সঙ্গে তার চেহারার হুবহু মিল রয়েছে। কিন্তু তিনি তখনও জানতেন না যে, নাচতে থাকা মেয়েটিই তার বোন। শেষমেষ ২০২১ সালে একটি টিকটক ভিডিওর সূত্র ধরে একে অপরকে খুঁজে পান দুই বোন।

২০২১ সালে অ্যামি তার চুলের রং নীল করেন ও টিকটকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেই ভিডিও আবার এক বন্ধু অ্যানোকে পাঠান ও জানতে চান যে অ্যানো চুলে নতুন রঙ করেছেন কি না। ভিডিওটি দেখে অ্যানো তার বন্ধুকে জানা, ভিডিওর মেয়েটি তিনি নন।

Advertisement

পরে চেহারায় হুবহু মিল থাকা মেয়েটির পরিচয় জানার জন্য অ্যানো ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করেন। এরপর অ্যামি কৌতুহলী হয়ে অপর তরুণীর প্রোফাইলে গিয়ে জানতে পারেন, মেয়েটির নাম আনো সারতানিয়া। তিনি থাকেন ৩২০ কিলোমিটার দূরের শহর তিবিলিসিতে।

কিন্তু কোনোভাবেই কিছুতেই আনোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না অ্যামি। পরে একটি বিশ্বিবদ্যালয়ের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ভিডিওটি পোস্ট করে অ্যামি জানতে চান যে এই মেয়েটিকে কেউ চেনেন কি না। সেখানে একজন সাড়া দেন।

পরে তার মাধ্যমে যোগাযোগ হয় আনোর সঙ্গে। এভাবেই যমজ বোন পরস্পরকে খুঁজে পান। অ্যামি বলেন, তিবিলিসির রুস্তাভেলি মেট্রো স্টেশনে যখন আমাদের দেখা হলো, তখন মনে হচ্ছিল আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। যেন নিজেকেই দেখছি। একই মুখ, একই চোখ, একই নাক। এমনকি, কণ্ঠস্বর পর্যন্ত এক। আমি জড়িয়ে ধরা পছন্দ করি না। কিন্তু সেই মুহূর্তে নিজেকে আর সামলাতে পারিনি। আনোকে জড়িয়ে ধরি।

অ্যামি–আনো জানান, পরবর্তী সময়ে তারা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন যে তারা সত্যিই যমজ বোন। তবে তারা তাদের বাবাকে আর খুঁজে বের করার চেষ্টা করেননি। তাদের দাবি, যে বাবা তার সন্তানদের বিক্রি করে দিয়েছেন, সেই বাবার সঙ্গে দেখা করা উচিত না।

Advertisement

তবে তারা তাদের জন্মদাত্রী মা আজার সঙ্গে লাইপজিগের একটি হোটেলে দেখা করেন। তখন আজা তাদের বলেন, অ্যামি–আনোর জন্মের পর তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। পরে সুস্থ হয়ে সন্তানদের খুঁজলে হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছিলেন, তার সন্তানরা জন্মের পরপরই মারা গেছে।

অ্যামি-আনোর এই ঘটনায় জর্জিয়ার একটি কলঙ্কিত দিকও বের হয়ে এসেছে। বিবিসি জানিয়েছে, জর্জিয়ায় ১৯৫০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বহু শিশু চুরি করে বিক্রি করে দেওয়ার পেছনে হাসপাতাল কর্মীরা ব্যাপকমাত্রায় জড়িত ছিলেন। এসব ক্ষেত্রে হতভাগা মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বলা হতো, তাদের সন্তান জন্মের পরেই মারা গেছে।

 

অ্যামি ও আনোর পালক মায়েরা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে নিয়ে আসা হয়েছিল তাদের। দত্তক নেওয়া পরিবার দুটিও জানতো না যে, অ্যামি-অ্যানো জমজ বোন ছিলেন।

সূত্র: এনডিটিভি

এসএএইচ