দেশজুড়ে

মেয়র পদে আলোচনায় আওয়ামী লীগের ৮ প্রার্থী, বিএনপির দুজন

আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মেয়র আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যুর পর পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও কুমিল্লা মহানগরের রাজনীতিতে ভোটের উৎসব শুরু হচ্ছে। নৌকার মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

Advertisement

সূত্রমতে, দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি শফিকুল ইসলাম সিকদার, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিনের মেয়ে তাহসীন বাহার সূচনা, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, জেলা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কবিরুল ইসলাম শিকদার এবং মেয়র রিফাতের স্ত্রী অধ্যাপিকা ফারহানা হক শিল্পী।

এদিকে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত থাকলেও বহিষ্কৃত দুই নেতা ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং সাবেক যুবদল নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে চিন্তা-ভাবনা আছে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। তারপরও দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে মতামত জানাবো। কারণ আমি বহিষ্কৃত হলেও দলের অনুগত আছি।’

Advertisement

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, ‘নেত্রীর কাছে দলীয় মনোনয়ন চাইবো। আশা করছি তিনি আমাকে নিরাশ করবেন না। কারণ দলের জন্য আমার ত্যাগ অনেক।’

মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা যাকে নৌকা প্রতীক দেবেন, আমরা সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে তাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো।

নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, কুমিল্লা সিটির তরুণ প্রজন্মসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আমার সঙ্গে আছেন। প্রতিনিয়ত আমাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছেন। গত নির্বাচনে অংশ নিয়ে নগরবাসীর বিপুল সমর্থন পেয়েছি।

তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি। যাচাই-বাছাই ১৫ ফেব্রুয়ারি। আপিল নিষ্পতি ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২২ ফেব্রুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ ফেব্রুয়ারি। ভোটগ্রহণ ৯ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

Advertisement

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আয়তন প্রায় ৫৩ দশমিক ৮৪ বর্গ কিলোমিটার। এ সিটিতে ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে, যেখানে ১০ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এর আগে এখানে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভা নামে দুটি পৌরসভা ছিল। ২০১১ সালের ১০ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক অধ্যাদেশ জারি করে প্রশাসন পৌরসভা দুটিকে একটি সিটি করপোরেশনের মর্যাদা দেয়। বর্তমানে কুমিল্লা সিটিতে দুই লাখ ৩০ হাজার ভোটার রয়েছে।

২০১২ সালে কুমিল্লার প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৯ হাজার ৩০৬ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফজল খানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সম্মিলিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। তিনি পান ৬৫ হাজার ৭৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আফজল খান পান ৩৬ হাজার ৪৭১ ভোট।

২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুসিকের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন সাক্কু। ধানের শীষ প্রতীকে সাক্কু পান ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।

২০২৩ সালের কুসিকের তৃতীয়বারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক রিফাত। ওই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী রিফাত ৫০ হাজার ৩১০ এবং সাক্কু পান ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট।

২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত। এরপর থেকে প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল আমিন সাদী ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এসআর/এএসএম