রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১৭টি হলের নিচতলায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ওয়াশরুম নির্মাণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে। তবে অনুমোদনের দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় অতিক্রম হলেও ওয়াশরুমের কাজ এখনো শুরু হয়নি। হল প্রাধ্যক্ষদের অনাগ্রহের কারণেই কাজ বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি প্রকৌশল দপ্তরের।
Advertisement
দু-একটি হলের নিচতলার একটি বাথরুমে কমোড বসানো হলেও সেখানে নেই প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা বিশেষ সুবিধা। নেই র্যালিং সিস্টেম (ধরার ব্যবস্থা)। যেসব হলগুলোর বাথরুমে কমোড বসানো হয়েছে সেসব হলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাই বিষয়টি জানেন না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি আবাসিক হলের নিচতলায় একটি করে আধুনিকায়ন ও তাদের ব্যবহার উপযোগী ওয়াশরুম নির্মাণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে হাইকমোড, টাইলস সুবিধাসহ আরও বিশেষ সুবিধা থাকবে। এ ওয়াশরুম শুধু প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাই ব্যবহার করতে পারবেন নির্দেশনায় বলা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তর সূত্র বলছে, ওয়াশরুমের সব কাজ প্রস্তুত হয়ে আছে। এখন হল প্রাধ্যক্ষরা তাদের হলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী কোনো ধরনের ওয়াশরুম নির্মাণ করা হবে সে বিষয়টি প্রধান প্রকৌশলীকে জানালেই কাজ শুরু করা হবে।
Advertisement
অনুমোদনের এক বছর পরও কেন হলগুলোতে ওয়াশরুমের কাজ শুরু হয়নি, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ)।
এক হাতে সমস্যা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হয়েছেন মাসুদ। তিনি বলেন, ‘আমার শৌচাগারের কাজ সম্পন্ন করতে অনেক বেগ পেতে হয়। ভেবেছিলাম অতিদ্রুতই আমাদের সমস্যা চিহ্নিত করে আলাদা ওয়াশরুম করে দেবে প্রশাসন। কিন্তু তা এখনো হয়নি। যেসব হলে আমাদের জন্য ওয়াশরুম করা হয়েছে সেগুলো আমাদের সমস্যা চিহ্নিত না করে বসানো হয়েছে। ফলে আমাদের কাজে আসছে না এসব ওয়াশরুম।’
রাবি পিডিএফ শাখার সাবেক সভাপতি মোজাহিদ হাসান বাবু বলেন, ‘একজন তীব্র প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য সাধারণ ওয়াশরুম ব্যবহার করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য। তাই তাদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম নির্মাণ করতে এক বছর আগে নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু নির্দেশনার এক বছর পার হলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিজের দায়িত্বের প্রতি এমন উদাসীনতা আমাদের জন্য লজ্জার।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রতিটি আবাসিক হলে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম নির্মাণের নির্দেশনা আমরা অনেক আগে থেকেই পেয়েছি। তবে সবধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কিন্তু এক নয়। হল প্রাধ্যক্ষরা আমাদের বলবেন যে, আমাদের এ ধরনের প্রতিবন্ধীদের জন্য এ ধরনের ওয়াশরুম প্রয়োজন। তাহলে সে অনুযায়ী আমরা ওয়াশরুম নির্মাণ করে দেবো। তারা এখনো আমাদের সেভাবে জানায়নি। তবে খুব শিগগির এসব ওয়াশরুমের কাজ শুরু হবে।’
Advertisement
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমার হলসহ দু-একটি হলের ওয়াশরুমে প্রতিবন্ধীদের জন্য কমোড বসানো হয়েছে। তবে সেখানে আরও উন্নত করার জন্য আমরা প্রকৌশলী দপ্তরকে জানিয়েছি।
এসআর/এমএস