‘চালক জানতে চায়, কেন ভারতে এসেছি, আমার পেশা কী, এই লকডাউনের মধ্যেইবা বাংলাদেশে যাচ্ছি কেন? তারপর এটা সেটা বলার ফাঁকে হুট করে বলে, ৫৭টা দেশের প্রধান তোরা। তোরা একজনের সাথে পারিস না। থু, থু। আমি ফেসবুকে লিখে দিয়েছি, তোরা শাসকরা সব নপুংসক।’
Advertisement
‘আমার সামনে ও পেছনে থাকা মানুষগুলো মালামাল ভেদে নজরানা দিয়ে একে একে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে আগুয়ান হচ্ছে। আহা ব্যবস্থা! প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ, ঘুস খাওয়া কখনোই নয়! কী আর করা—মা ও মেয়েদের যতটা না ছেলে পছন্দ তার চেয়ে বেশি পছন্দ ঘুসখোর। মায়েদের কথা শুনে মনে হয়, মেয়ে না তিনি নিজের বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছেন।’
এ কয়টি লাইন সাহিত্যিক ও গবেষক সরোজ মেহেদীর লেখা ‘চেনা নগরে অচিন সময়ে’ বইয়ের। করোনা মহামারিকালে ভারতে যাপিত জীবন এবং সেখান থেকে দেশে ফেরার পথে দেখা নানা ঘটনার বয়ান এভাবেই তুলে ধরেছেন লেখক।
লেখালেখি সরোজ মেহেদীর নেশা। সেই নেশা যেন মহামারিকালে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন জীবনে পেশায় রূপ নেয়। একটু একটু করে দাঁড়িয়ে যায় একটি পাণ্ডুলিপি। আলাপ করেন রাজধানীর শাহবাগের উৎস প্রকাশনের মোস্তফা সেলিমের সঙ্গে। তিনি ভীষণ উৎসাহে বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নেন।
Advertisement
এবারের অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে বইটি প্রকাশ হচ্ছে। প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। বইটি মেলায় উৎস প্রকাশনের স্টলে মিলবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক। এছাড়া আজিজ সুপার মার্কেট, রকমারিসহ অনলাইন বিপণন প্ল্যাটফর্মগুলোতেও পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: আসছে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের দ্বিতীয় প্রবন্ধের বই
‘চেনা নগরে অচিন সময়ে’ প্রসঙ্গে সরোজ মেহেদী বলেন, ‘শিক্ষার টানে ২০১৯ সালে ভারতের চন্ডিগড়ে যেতে হয়েছিল। সেখানে যাপিত জীবন, এর মধ্যে ভারত-বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারির হানা, ওই দুঃসময়ে দেশে ফেরার সময় নানা সুখকর-অসুখকর ঘটনার অভিজ্ঞতা লিখতে শুরু করি। সেসব ঘটনা, নিজের কিছু পর্যবেক্ষণ নিয়ে দাঁড়িয়েছে ‘চেনা নগরে অচিন সময়ে’ বইটি।’
এই সাহিত্যিক বলেন, ‘পাতায় পাতায় যেন মাতৃত্বের মমতা জড়ানো। যে লেখে কেবল সেই বোঝে ‘লেখক জীবন’ তার ‘ব্যক্তিজীবন’র কতটা শত্রু। লেখার নেশা একজন মানুষকে নানাভাবে তার চারপাশের বিত্ত-বৈভব, বৈষয়িকতায় যোজন যোজন পিছিয়ে দেয়। তবু বেঁচে থাকলে কেবল লিখে যেতে চাই। জীবন নিয়ে এর চেয়ে বেশি আর কোনো উচ্চাশা নেই।’
Advertisement
সাহিত্যিক সরোজ মেহেদী বর্তমানে গ্রিন ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া কমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর।
গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেওয়ার আগে সরোজ মেহেদী সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের তুর্কি ভাষা বিভাগে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসেও (বিউপি) খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন তিনি।
সাংবাদিকতা ছেড়ে শিক্ষকতাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া সরোজ মেহেদী এখনো বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লেখেন। দেশে-বিদেশে নানা কাজের সঙ্গেও যুক্ত তিনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সংবাদিকতায় স্নাতক করা মেহেদী তুরস্ক সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে ২০১৪ সালে দেশটিতে পাড়ি জমান। তিনি ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘মাস্টার্স রিসার্চ প্রোগ্রাম ইন ব্যাসিক জার্নালিজমে’ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ২০১৮ সালে দেশে ফিরে এসে শিক্ষকতা শুরু করেন।
আরও পড়ুন: শিশুলেখক ইসাবা ইলমি প্রিয়তির প্রথম বই
তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিক্ষা বিষয়ক দাতব্য সংস্থা ‘দেয়ার ওয়ার্ল্ড’র গ্লোবাল ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডর, নরওয়েভিত্তিক পৃথিবীর অন্যতম বড় যুব সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেস্টিভ্যাল ইন ত্রনদেইম’র (ইসফিত) অ্যাম্বাসেডর, মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘কমনওয়েলথ ফিউচার ইয়ুথ সামিট-২০১৮’র এক্সিকিউটিভ মেম্বারের (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন) দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কাজ করেছেন ইস্তাম্বুলভিত্তিক আন্তর্জাতিক ছাত্রদের সংগঠন ইসিস্ট, ইস্তাম্বুল মিডিয়া একাডেমি, তুরস্কের সবচেয়ে বড় রিসার্চ অর্গানাইজেশন সেটায়।
এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পেপার প্রেজেন্ট করেছেন মেহেদী। যোগ দিয়েছেন বেশকিছু আন্তর্জাতিক সামার স্কুল, ট্রেনিং প্রোগ্রাম, ইয়ুথ ক্যাম্প প্রভৃতিতে। আমন্ত্রিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ডসহ ২০টিরও বেশি দেশ থেকে। জার্মানি, বেলজিয়াম, হাঙ্গেরি, ইউক্রেন, মলদোবা, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বেশকিছু দেশ ভ্রমণ করেছেন এ তরুণ।
২০১৯ সালে জার্মানি থেকে তুর্কি ভাষায় সরোজ মেহেদীর গবেষণাগ্রন্থ ‘পলিটিক্যাল ইউজ অব মিডিয়া ইন সাউথ এশিয়া: বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া পারসপেকটিভ’ প্রকাশিত হয়। আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা ইনস্টিটিউটের প্রকল্পের আওতায় ‘বাংলা-ইংরেজি-তুর্কি’ ভাষায় একটি পকেট অভিধান লিখেছেন তিনি।
এসইউ/জিকেএস