দেশজুড়ে

বেনাপোলে আটকা আমদানির ৪২ হাজার কেজি মহিষের চামড়া

বেনাপোল বন্দরে প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টাইন সনদ না থাকায় ৪১ হাজার ৯০০ কেজি মহিষের চামড়া জব্দ করা হয়েছে। আমদানি নীতি না মানায় অনিয়মের অভিযোগে বেনাপোল বন্দরে এক মাস ধরে আটকে আছে বিপুল পরিমাণ এই মহিষের কাঁচা চামড়া। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে একশ্রেণির কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ভারত থেকে এসব চামড়া আমদানি করেছিলেন দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশি আমদানিকারক চাঁদপুর ট্যানারি ভারত থেকে আমদানি করে এ চামড়ার চালানটি। এ সময় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে কাস্টমস পণ্য চালানটি খালাসের সময় অনিয়ম পেয়ে আটকে দেয়।

জানা যায়, প্রতিবছর দেশীয় কাঁচা চামড়ার পর্যাপ্ত জোগান থাকা সত্ত্বেও রফতানিমুখী চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প কারখানাগুলোকে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার (প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার) লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সনদপ্রাপ্ত ফিনিশড চামড়া আমদানি করতে হয়। আর এদেশ থেকে চামড়া রফতানি হয় ১৭০ মিলিয়ন ডলারের। তবে চামড়া আমদানির ক্ষেত্রে যে শর্ত আছে তা না মেনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কয়েকজন আমদানিকারক ভারত থেকে চামড়া আমদানি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। আর এ চামড়া ছাড় করতে সহযোগিতা করছিলেন কিছু সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তা।

চামড়ার রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের এআর ইন্টারন্যাশনাল। গত ২০ ডিসেম্বর বন্দর থেকে চামড়া খালাস নিতে কাগজপত্র দাখিল করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সুপ্রিম অ্যাসোসিয়েটস। এসময় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে কাস্টমস চালানটি জব্দ করে।

Advertisement

অভিযুক্ত আমদানিকারক চাঁদপুর ট্যানারির সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি মোকলেছুর রহমান জানান, এর আগেও বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রাণিসম্পদের ছাড়পত্র ছাড়াই চামড়া খালাস হয়েছে। হঠাৎ করে কাস্টমস প্রাণিসম্পদের ছাড়পত্র লাগবে বলে এখন তাদের চামড়া খালাস করতে দিচ্ছে না।

সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চামড়া আমদানিতে অনিয়ম হচ্ছে। এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা দরকার। দেশের চামড়া যদি সৎভাবে রফতানির সুযোগ থাকে তাহলে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হবে না।

সাধারণ চামড়া বিক্রেতা রহমত বলেন, দেশের চামড়া বিক্রি হয় না, অথচ ভারত থেকে নিয়মিত চামড়া আমদানি হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর প্রাণিসম্পদ কোয়ারেন্টাইন স্টেশন কর্মকর্তা বিনয় কৃষ্ণ মন্ডল জানান, অনিয়মের অভিযোগে চামড়ার চালান জব্দ করা হয়েছে। তারা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে কোনো ছাড়পত্র গ্রহণ করেনি।

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে এমন অনিয়ম করে কীভাবে চামড়া আমদানি করছে জানতে চাইলে বলেন, যারা এর আগে চামড়া চালান খালাস দিয়েছে তারা বলতে পারবে।

জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। আর আমদানি করতে হয়েছে এক হাজার কোটি টাকার চামড়া।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) তথ্য অনুসারে, এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় বাংলাদেশ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি মার্কিন ডলার আয় হারাচ্ছে। চামড়াশিল্প নগরে বর্তমানে ১৪২টি ট্যানারি রয়েছে। তবে চামড়া কারখানা আন্তর্জাতিক লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ পেয়েছে মাত্র ৫টি ট্যানারি।

জামাল হোসেন/এফএ/জেআইএম