ফিচার

পরীবাগের অন্যরকম ‘হাসিমুখ’

রাজধানীর কাঁটাবন মোড় থেকে শাহবাগের দিকে একটু এগোলেই বামে হাতিরপুলগামী রাস্তায় দেখা যায় ভিন্ন এক দৃশ্য। রাস্তার উপরেই পলিথিন বিছিয়ে বসে কয়েকজন শিশু পড়াশোনায় ব্যস্ত। সুর করে কেউ অ আ ক খ পড়ছে, কেউ ছবি আঁকছে, কেউ আবার ডুবে আছে অংক কষায়। পাশ দিয়ে দামি গাড়ি, মোটরসাইকেল, রিক্সা-ভ্যান হর্ন বাজিয়ে চলে গেলেও সেদিকে ভ্রক্ষেপই নেই তাদের। এটি একটি স্কুল। যদিও এই স্কুলের ভবন নেই, বেঞ্চ নেই, নেই বেতনভুক্ত শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীও। ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে এখানে যারা এভাবে পাঠদান শুরু করেছেন তারা স্কুলটির নাম দিয়েছেন ‘হাসিমুখ।’   কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থী নিতান্ত ভালোবাসা থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রতিদিন হাসিমুখ স্কুলে শিশুদের পড়াশোনা করাতে ছুটে আসেন।বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টাতেও হাসিমুখ স্কুলে পাওয়া গেল সেই দৃশ্যই। চৈত্রের প্রখর তাপ উপেক্ষা করে প্রতিদিনের মতো রাস্তায় বসে পড়াশোনা করছিল শিশুরা। তাদেরই একজন রাজন। কোথায় থাকে জানতে চাইলে রাজনের জবাব, ‘বাটা সিংগেল (সিগন্যাল) এলাকায়।’ রাজনের বাবা রিকশা চালান। এখানে সে শিশু শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।রাজনের মতোই এই হাসিমুখের আরো তিন শিক্ষার্থী মিতু, ঝুমা ও মায়া আক্তার। এ তিন শিশু জানায়, তারা ধানমন্ডির একটি স্কুলে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে যেসব বিষয় তারা বোঝে না, এখানকার আপা-ভাইয়ারা তাদের সেগুলো সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেন, শিখিয়ে দেন। হাসিমুখ স্কুলের স্বেচ্ছাসেবী দুই শিক্ষক রিসাদ (আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১ম বর্ষ) ও মায়া বেগম (মিরপুর বাংলা কলেজের মার্কেটিং বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী) জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ২০১০ সালের শেষ দিকে হাসিমুখ নামের এ স্কুলটির কার্যক্রম শুরু হয়। শিশু শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চলে এখানে।সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া জনা বিশেক শিক্ষার্থী নিজেরা অর্থদান করে স্কুলটি চালান। তাদের মধ্যে নিয়মিত যারা ক্লাস নিতে আসেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- মিনা, রিসাদ, শাকিল, আলফি ও রেশমি। শুক্রবার ছাড়া বাকি ছয়দিন বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ক্লাস চলে। একেকজন একেকটি বিষয়ের নিয়মিত ক্লাস নেন।তারা জানান, এ স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ধানমন্ডির একটি স্কুলে পড়াশুনা করে। মূলত স্কুলে যে বিষয়গুলো বুঝতে তাদের সমস্যা হয় সেগুলোই তারা বিকেলে ক্লাসে বুঝিয়ে দেন। রিসাদ জানান, ওরা সকলেই নিতান্ত দরিদ্র পরিবারের সদস্য। টাকা পয়সা দিয়ে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়াশোনার আর্থিক সংগতি নেই তাদের। ওদের সঙ্গে কথা বলার সময় সেখানে উপস্থিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রিয়াজ। তিনি জানান, পরীবাগ এলাকায় নুসরাত নামে তার একজন ছাত্রী এ স্কুলটি পরিচালনার সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত। তিনি নিজেও সময় পেলে এখানে আসেন, যতটুকু সম্ভব সহায়তা করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও  ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন দিবস, যেমন: ১৬ই ডিসেম্বর, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেন ।পাঠদান ছাড়াও স্কুলে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।এমইউ/এনএফ/আরআইপি

Advertisement