দেশজুড়ে

সাতক্ষীরার আতঙ্ক ‘লাল বাহিনী’, এবার বলি ৮ মাসের শিশু

সাতক্ষীরার আতঙ্ক লাল বাহিনীর কবলে পড়ে প্রাণ গেছে প্রীতম সানা নামের আট মাস বয়সী এক শিশুর। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সাতক্ষীরা-আশাশুনি আঞ্চলিক সড়কের চাঁদপুর সংলগ্ন জনৈক সাত্তারের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

Advertisement

নিহত প্রীতম সানা আশাশুনি উপজেলার আরার দাসপাড়া এলাকার বিকাশ সানার ছেলে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু প্রীতম সানাকে নিয়ে আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে যাচ্ছিলেন তার স্বজনরা। এসময় সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে লাল বাহিনীর সদস্যারা তাদের গতিরোধ করেন। ইজিবাইকে করে সাতক্ষীরা শহরে যাওয়া যাবে না জানিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় শিশুটিসহ তার পরিবারের সদস্যদের। এসময় প্রীতম সানার অসুস্থতার কথা বললেও মন গলেনি লাল বাহিনীর সদস্যদের। একপর্যায়ে ওই সড়ক দিয়ে যেতে হলে চাঁদা দাবির করে লাল বাহিনী। তবে ওইসময় বাড়তি কোনো অর্থ না থাকায় চাঁদার টাকা দিতে পারেনি পরিবারটি। উপায় না পেয়ে উল্টোপথে ২০ কিলোমিটার ঘুরে সাতক্ষীরা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরা-আশাশুনি আঞ্চলিক সড়কের চাঁদপুরের সাত্তারের মোড়সহ বেশকিছু জায়গায় ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলার গাড়ি দাঁড় করিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছেন কিছু লোক। স্থানীয়দের কাছে তারা ‘লাল বাহিনী’ নামে পরিচিত। কেউ কেউ এদের ‘বাস মালিকদের বাহিনী’ বলেও দাবি করেন। এদের কাছে লাল রঙের ছোট ছোট পতাকা থাকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই লাল বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।

Advertisement

স্থানীয়রা বলছেন, সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে বাস যাতায়াত করাতে এ সড়ক দিয়ে তিন চাকার থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক, মাহিন্দ্রা, গ্রাম বাংলা) চলতে দেন না প্রভাবশালীরা। যারা এ সড়ক দিয়ে থ্রি-হুইলার চালান তাদের প্রথমে আটকে দেওয়া হয়। এসময় যদি কোনো বাস সেখানে থাকে তাহলে তাদের যাত্রীগুলো নামিয়ে ওই বাসে তুলে দেন লাল বাহিনীর লোকজন। অন্যথায় টাকা দিলে থ্রি-হুইলার গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও মহাসড়ক বাদে সব সড়কেই এসব যানবাহন চলাচলের অনুমতি রয়েছে।

নিহত প্রীতম সানার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র শিশুসন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা-মা। তাদের আহাজারিতে কান্না ধরে রাখতে পারছেন না উপস্থিত লোকেরা।

দাসপাড়া এলাকার স্থানীয় লীলা রানী দাস অভিযোগ করে বলেন, গতবছর তার অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাদের বহনকারী ইজিবাইককে বাধা দেয় লাল বাহিনী। হাসপাতালে দেরিতে পৌঁছানোর পর আলট্রাসনোগ্রামে দেখা যায়, তার দুটি সন্তানের একটি মারা গেছে। তার দাবি, লাল বাহিনীর কবলে পড়ে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে।

একাধিক থ্রি-হুইলার চালক জানান, সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে এক আতঙ্কের নাম ‘লাল বাহিনী’। এর নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী। তারা ক্ষমতাশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেন না। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে নানাভাবে হয়রানি করা হয়।

Advertisement

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আঞ্চলিক কোনো সড়কে বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এ ধরনের চেকপোস্ট বসানো হয় না। তবে মহাসড়কে আমাদের কয়েকটি চেকপোস্ট রয়েছে যেখানে শুধু ঢাকাগামী বাসে কোনো লোকাল যাত্রী যাচ্ছে কি না তা যাচাই-বাছাই করা হয়।

কোনো এলাকায় যদি কেউ ব্যক্তিগত চেকপোস্ট বসিয়ে সড়কের অন্য যানবাহনে চলাচলকারী যাত্রীদের হয়রানি ও চাঁদাবাজি করেন তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত। এ ঘটনার সর্বোচ্চ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরা সড়কে কোনো লাল বাহিনী, চাঁদাবাজ থাকবে না। সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচলের নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে। সড়ক ব্যবস্থাকে নিরাপদ করতে পুলিশ সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবে।

এসআর/জেআইএম