আইন-আদালত

সাজা ভোগের পরও বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি ১৫৭ বিদেশি

সাজা ভোগের পরও বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি আছেন ১৫৭ বিদেশি নাগরিক। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দিয়েছে কারা অধিদপ্তর।

Advertisement

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন অপরাধের সাজা শেষে প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় থাকা ১৫৭ বিদেশি কারাবন্দি রয়েছেন।

এরমধ্যে ১৫০ জন ভারতের, পাঁচজন মিয়ানমারের এবং একজন করে পাকিস্তান ও নেপালের নাগরিক। এদের মধ্যে ১৯ জনের মতো নারী রয়েছেন।

আরও পড়ুন: মেক্সিকোর কারাগারে বন্দি কয়েক হাজার বাংলাদেশি

Advertisement

এর আগে কারা অধিদপ্তরকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।

এ বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

পরবর্তী শুনানির জন্য নির্ধারিত দিনে প্রতিবেদনটি হলফনামা করে দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, সাজা খাটা হলেও অন্য দেশের নাগরিক হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে এসব ব্যক্তিদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করতে হয়। সেই প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের মুক্তি দেওয়াও সম্ভব নয়।

Advertisement

কারাবন্দি এই বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে সাধারণত অনুপ্রবেশের দায়ে দি কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট, ১৯৫২, পাসপোর্ট আইন, ১৯৫২ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলায় হয়েছে।

আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে বাংলাদেশিসহ ২৭৭৫২ জন বন্দি

এমনই একজন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল দিয়ে অনুপ্রবেশের দায়ে ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বাসিন্দা গোবিন্দ উড়িয়াকে (২৬) গ্রেফতার করে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

ওইদিনই তাকে শ্রীমঙ্গল থানায় সোপর্দ করে মামলা করা হয়। তদন্তের পর একই বছর ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ২৪২ ধারা ও দি কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট, ১৯৫২ আইনের ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

বিচার শেষে মৌলভীবাজারের চতুর্থ বিচারিক হাকিম এম মিজবাহ উর রহমান অতীতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ না থাকা এবং দোষ স্বীকার করায় গোবিন্দকে ২ মাস ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

আরও পড়ুন: মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি ২ বাংলাদেশি

রায়ে বলা হয়, সাজার মেয়াদের চেয়ে চারদিন বেশি সাজা ভোগ করে ফেলেছেন গোবিন্দ উড়িয়া। তাই তার প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশ দেন আদালত। এ রায়ের পর দুই বছর কেটে গেলেও প্রত্যাবাসন হয়নি গোবিন্দ উড়িয়ার। ফলে কারামুক্তিও হয়নি। এ নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন করে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল।

ওই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ১১ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিভূতি তরফদার। সাজা ভোগ করা গোবিন্দ উড়িয়ার কারামুক্তি ও তার প্রত্যাবাসনে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করা হয় রিটে।

১৫ জানুয়ারি এ রিটের প্রাথমিক শুনানির পর রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। অন্তর্বর্তী আদেশে গোবিন্দ উড়িয়াকে কারামুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। আর দণ্ড বা সাজা ভোগের পরও প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা না করে কারাবন্দি রাখা হয়েছে, এমন বিদেশি নাগরিকদের তালিকা দিতে বলেন আদালত।

কারা মহাপরিদর্শককে এ নির্দেশ দিয়ে ১০ মার্চ পরবর্তী আদেশের তারিখ রাখা হয়। এরপর আদালতে দাখিলের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠায় কারা অধিদপ্তর।

এফএইচ/জেডএইচ/এমএস