নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্যানেল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বিএনপির আইনজীবীরা। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি। ফলে নির্বাচনের আগেই প্যানেল না দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছেন। তবে এটি স্বীকার করতে নারাজ বিএনপির নেতৃত্বে থাকা সিনিয়র আইনজীবীরা। তারা নির্বাচন কমিশনের ওপর দোষ চাপিয়ে বর্জনের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
Advertisement
গত ১১ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় আগামী ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এই নির্বাচন কমিশন পরিবর্তনের দাবি জানান বিএনপির আইনজীবীরা। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন পরবর্তন করা হয়নি।
এরইমধ্যে গত ১৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিএনপির আইনজীবীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে ভুয়া নির্বাচন কমিশন হিসেবে আখ্যা দেন। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলেও জানান।
তবে এই বর্জন প্রসঙ্গে বিএনপিপন্থী সাধারণ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনো আইনজীবী রাজি হয়নি বিধায় তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
Advertisement
বিএনপির সাধারণ আইনজীবীরা জানান, বর্তমানে যারা নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের নেতৃত্বের প্রতি অনেক আইনজীবী ভরসা করতে পারেন না। তারা আদালতপাড়ার বিএনপির আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। যার কারণে বিগত কয়েক বছর ধরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির প্যানেলের আইনজীবীদের ভরাডুবি হয়ে থাকে। তারা একটি পদেও জয়লাভ করতে পারেন না। সে সূত্র ধরে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির কোনো আইনজীবীই নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না।
এছাড়া কেউ নির্বাচন করতে চাইলেও তাদেরকে তেমন সাপোর্ট দেওয়া হয় না। যার কারণে এবারের নির্বাচনে সিনিয়র কোনো আইনজীবী নির্বাচন করতে রাজি হননি। সেইসঙ্গে নেতৃত্বে থাকা সিনিয়র আইনজীবীরাও গুরুত্ব দেননি। তারা নির্বাচন কমিশনের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের প্যানেল দিতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন। নিজেদের নেতৃত্বের ব্যর্থতার দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এবং ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি মনে করি এটা সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত। এটা একটা কলঙ্কিত নির্বাচন। একটা প্রহসনের নির্বাচন। আইনজীবীদের নির্বাচন কোনো সময় কলঙ্কিত হতে পারে না। নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আইনজীবীরা নির্বাচনে যাবে না।
জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির বলেন, দলীয় নির্বাচন কমিশনার দিয়ে ভুয়া নির্বাচনের আয়োজন করেছে। জাতীয় নির্বাচন যেভাবে হয়েছে তার ধারাবাহিকতায় বারেও একটি ভুয়া নির্বাচনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমরা এই ভুয়া নির্বাচনের চক্রান্তে পা দেবো না। আমরা এই প্রহসনমূলক নির্বাচন বর্জন করলাম।
Advertisement
এদিকে আদালতপাড়া সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনে গেলো ৯ বছর ধরেই কাণ্ডারিবিহীন রয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সবশেষ গত বছর নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটেও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের প্যানেলের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটেছিল। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আইনজীবী প্যানেলের কাছে তারা প্রায় পূর্ণ প্যানেলেই পরাজিত হয়েছেন। সেইসঙ্গে ১৭টি পদের বিপরীতে সদস্য পদ ছাড়া ১৬টিতে যেমন পরাজয় ঘটেছে তেমনি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ পদে ভোটের জয় পরাজয়ের ব্যবধানও ছিল প্রায় দ্বিগুণ।
সেইসঙ্গে ২০১৪ সালের পর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী জয়ের দেখা পাননি। বিশেষ করে গত দুই বছর ধরে একটি পদেও বিএনপির কোনো আইনজীবী জয়ী হতে পারছেন না। অথচ ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৩ বারের নির্বাচনে সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদে দাপুটে জয় ছিল বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের।
আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমার সময়ে বিগত দিনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আইনজীবীরা সকলেই আমার প্রতি সন্তুষ্ট। তারপরও বিএনপি কেন নির্বাচন বর্জন করছে এটা তাদের ব্যাপার। তবে আমি মনে করি তারা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে নির্বাচন বর্জন করেছে।
এফএ/এমএস