মতামত

সাকরাইন উৎসবের নামে কী চলছে?

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব ঘিরে নতুন এক সংকট তৈরি হয়েছে। যা কতকটা পশ্চিমা সংস্কৃতির লেজুড়বৃত্তি আর কতকটা উন্নাসিকতার ফসল। এতে নিখাদ দেশীয় একটি সংস্কৃতির ভেতরে সম্পূর্ণ বেমানান আরেকটি সংস্কৃতির চর্চাকে সর্বজনীন করার চেষ্টা চলছে।

Advertisement

আরেকটু খোলাসা করে বললে সাকরাইন উৎসবে ভবনের ছাদে ছাদে ডিজে পার্টির ছড়াছড়ি। সাউন্ড স্পিকারের বিকট আওয়াজ আর হৈ-হুল্লোড় উৎসবের রঙকে শুধু ফ্যাকাশেই করছে না, হাজারো মানুষের বিরক্তি ও ক্ষোভের কারণও হচ্ছে। এতে 999 এ ফোন করে কেউ শরণাপন্ন হচ্ছেন পুলিশের। কেউ করছেন নীরব প্রতিবাদ। একটি মাদরাসার শত শত শিক্ষার্থী সড়কে নেমে যে প্রতিবাদ করেছেন, সেটিও পুরান ঢাকায় বিরল দৃষ্টান্ত। যা কাম্য নয়।

এখন আসা যাক, সাকরাইন আসলে কী? সাকরাইন শব্দটি এসেছে সংস্কৃতি সংক্রাণ থেকে। যার অর্থ বিশেষ মুহূর্ত। পৌষের শেষদিনে মকর সংক্রান্তি পূজা করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এই দিনে ব্রাহ্মণ ও প্রজাদের খাওয়াতেন হিন্দু জমিদাররা। তৎকালীন ঢাকার বিক্রমপুরে কুস্তি, লম্বদান ইত্যাদি প্রতিযোগিতা হতো। আর মুসলিমরা ঘুড়ি ওড়ানো ও শীতের পিঠা খাওয়ার উৎসবে মাততেন।

ঢাকার সংস্কৃতি-ঐতিহ্য গবেষক সাদ উর রহমানের মতে, শীত মৌসুমের তিন মাসজুড়ে বার্ষিক ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা ও বিনোদনে মেতে থাকতেন ঢাকাবাসী। যাতে ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন, ঢাকার শেষ নবাব গাজিউদ্দিন। তাকে পাগলা নবাবও বলতেন অনেকে। ঘুড়ির ওড়ানোর প্রতিযোগিতাকে বলা হতো হারিফ বা হারিফি। খোলা মাঠ বা বাড়ির ছাদে চলতো জমজমাট হারিফ খেলা। যার মূল পৃষ্ঠপোষক ছিলেন নবাবরা। এ সময় মেয়ে জামাইকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হতো। তাদের নিয়েও চলতো ঘুড়ির এই খেলা।

Advertisement

ঐতিহ্যের এই ঘুড়ি ওড়ানো এখনও ধরে রেখেছেন পুরান ঢাকাবাসী। যার অংশ হতে শুধু ঢাকার অন্যান্য প্রান্তের লোকজনই নন, বিভিন্ন জেলা থেকে পুরান ঢাকায় জড়ো হন অনেকে। কেউ আসেন দল বেঁধে। কেউবা পরিবার-পরিজন নিয়ে। তবে, আয়োজনে ভিন্নতার খোঁজে ডিজে পার্টির আতিশয্যে সাকরাইন উৎসবের রঙটাই এখন হারানোর পথে। যা শুধু উৎসবের সৌন্দর্যকেই নষ্ট করছে না, নষ্ট করছে স্থানীয়দের সংস্কৃতি-কৃষ্টি আর কয়েকশো বছরের লালিত আচার-অনুষ্ঠানকে। তাই থার্টি ফার্স্ট নাইটের মতো ডিজে পার্টির এই যথেচ্ছারে লাগাম টানা না হলে, অপ্রীতিকর এক অবস্থার মুখোমুখি হতে পারে এই সমাজ।

লেখক: নিউজ এডিটর, চ্যানেল 24।

এইচআর/এমএস

Advertisement